ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

মশা দিয়েই হবে ডেঙ্গু দমন

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
মশা দিয়েই হবে ডেঙ্গু দমন

মশা। ছোট্ট একটি পতঙ্গ আমাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম! এডিস মশার কামড়ে মানুষ ঢলে পড়তে পারে মৃত্যুর কোলে; ডেঙ্গুর কারণে। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। তবে মশা শুধু ডেঙ্গুর বাহক নয়, মশা থেকে ছড়ায় ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিসসহ নানান রোগ।

মশা দমনে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় সরকারকে। কখনো মশা মারতে স্প্রে, আবার কখনো এ জন্য ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। কথায় বলে- মশা মারতে কামান দাগা। তারপরও কমছে না মশা। রেহাই পাচ্ছে না মানুষ। তবে বিশেষ একটি উপায়ে ডেঙ্গু রোগ দমন করা সম্ভব, যার জন্য কাজ করবে মশা নিজেই। 

শুনে অবাক লাগলেও সত্য ডেঙ্গু নিধনে কাজ করবে মশা। বিশ্বের নানান দেশে বিশেষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ধ্বংস করা হচ্ছে এডিস মশা। এই অভিনব পদ্ধতির নাম ওলবাকিয়া। এই ওলবাকিয়া পুরুষ মশার শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং এই পুরুষ মশা ডেঙ্গুবাহিত এডিস স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে নতুন কোনো মশা জন্ম নিতে পারে না। এভাবেই মশা দিয়ে মশা নিধন করা যায়।

ওলবাকিয়া এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। প্রজাপতি, ফড়িং, মাছিসহ  বিভিন্ন কীটপতঙ্গ জম্মগতভাবেই এই ব্যাকটেরিয়া তাদের শরীরে পেয়ে থাকে। কিছু মশার মধ্যে ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকলেও ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করা এডিস মশার দেহে এই ব্যাকটেরিয়া নেই। এডিস থেকে জন্ম নেওয়া মশাই ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। যদি এই মশার ডিমে ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করানো যায় তবে তার থেকে জন্ম নেওয়া পুরুষ মশা ডেঙ্গুসহ অন্য রোগের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে।

দি ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রাম নামের একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি ওলবাকিয়াসম্পন্ন মশা উৎপাদনে কাজ করছে। সেসব মশা ছাড়াও হচ্ছে প্রকৃতিতে। সংস্থাটি শুধু সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি মশা ছেড়েছে বলে জানা গেছে। 

ওলবাকিয়াসম্পন্ন মশা জম্মের পর নারী সঙ্গীদের খুঁজে বেড়ায় এবং মিলিত হয়। এরপর ক্ষতিকর নারী মশারা যে ডিম দেয় সেসব ডিম ফুটে কখনো বাচ্চা হয় না। অর্থাৎ সেই মশার বংশ সেখানেই শেষ। এভাবেই ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর মশা নিধন করে। 

বংশপরম্পরায় মশাদের ভেতরে ওলবাকিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সাইটোপ্লাজমিক ইনকমপিটিবিলিটি। এটি তিনভাবে কাজ করে। এক. কোনো পুরুষ মশার শরীরে ওলবাকিয়া থাকে এবং স্ত্রী মশার শরীরে না থাকে তাহলে স্ত্রী মশা যে ডিম দেবে তা থেকে বাচ্চা হবে না। দুই. কোনো স্ত্রী মশার শরীরে ওলবাকিয়া থাকে এবং পুরুষের না থাকে তবে সে যে ডিম দেবে তা থেকে মশার জন্ম হবে এবং সব মশাই হবে ওলবাকিয়াসম্পন্ন। তিন. যখন স্ত্রী ও পুরুষ দুজনেরই ওলবাকিয়া থাকবে সেক্ষেত্রে তাদের ডিম থেকে জন্ম দেওয়া সকল মশা ওলবাকিয়াসম্পন্ন হবে।

ওলবাকিয়াসম্পন্ন মশা জীবাণু ছড়ায় না। ধারাবাহিকভাবে কয়েক বছর মশার মধ্যে এই ওলবাকিয়া প্রবেশ করিয়ে দিলে একসময় প্রাকৃতিকভাবেই ওলবাকিয়াসম্পন্ন মশা জন্ম নেবে। গবেষণায় দেখে গেছে, যেসব এলাকায় ওলবাকিয়াসম্পন্ন মশা ছাড়া হয়েছিল, ৮ বছরের মাথায় সেসব অঞ্চলে মশাবাহিত রোগ কমে গেছে। ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশে এই মশা নিধনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়