বেশি ভিটামিনে ‘বিপদ’

ছবি: প্রতীকী
প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাই, সেসব থেকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গ্রহণ করা শরীরের জন্য ভালো। অনেকে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেয়ে খাবারের মধ্যে থাকা এসব উপাদানের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে থাকেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়া উচিৎ নয়। খেলে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, চার্ট করে নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে দৈনিক ভিটামিন ও খনিজের যে চাহিদা, তা পূরণ হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না মেনে অনেকে মনে করেন, শুধু খাবার থেকে পুষ্টি ও খনিজের চাহিদা পূরণ হবে না। তাই তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে বাজার থেকে পছন্দমতো ভিটামিন কিনে খেয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ জাহানারা ইয়াসমিন বলেন, নিয়মিত খাদ্যের পাশাপাশি ভিটামিন ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে; তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে। তিনি মনে করেন, অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ শরীরের জন্য কখনও-বা ‘বিষ’ হয়ে ওঠতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে- সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমীন আক্তার লুবনা।
ভিটামিন এ: এটি সহজে পানিতে মিশে যায় বলে শরীর বাড়তি ভিটামিন যকৃতে সংরক্ষণ করে রাখে। এর ফলে অ্যালার্জি হয়ে মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা ও গলা ফুলে যেতে পারে। পাশাপাশি মাথায় খুলির ভেতরে চাপ বৃদ্ধি, মাথা ঘোরা, বমিভাব, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, এমনকি রোগী অচেতন হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
ভিটামিন সি: শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন সি হলে ডায়রিয়া, বমি, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন ডি: শরীরে ভিটামিন ডি অতিরিক্ত হলে খাবারের রুচি কমে যেতে পারে। পানিশূন্যতা, বমিভাব, মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, ডায়রিয়াও হতে পারে। এ ছাড়া বেশি ভিটামিন গ্রহণের কারণে হৃদরোগের সমস্যাও হতে পারে।
ভিটামিন ই: এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে শরীরে ক্লান্তি নামে, মাথাব্যথার পাশাপাশি ত্বকে ফুসকুড়ি হয়। দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হওয়ার পাশাপাশি প্রচণ্ড পেটব্যথাও হতে পারে। এর বাইরেও মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ভিটামিন কে: শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন কে থাকলে যেসব সমস্যা হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে যকৃতের আকার বেড়ে যাওয়া, শরীর ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট, পেশি শক্ত হওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে।
ভিটামিন বি ১: শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন বি ওয়ান পেট খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ। এর ফলে শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে। এছাড়াও ঠোঁট নীলচে হয়ে যেতে পারে এবং চলাফেলায় অস্বস্তিকর হাঁসফাঁস লাগতে পারে।
ভিটামিন বি ২: এই ভিটামিনের অন্য নাম রিবোফ্লাভিন। এর আধিক্যের কারণে প্রস্রাবের রং হলুদ বা কখনও কমলা রঙের হতে পারে। ডায়রিয়া বা ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে- মুখ, ঠোঁট ও জিহ্বা ফুলে যেতে পারে।
ভিটামিন বি ৩: কোনও মানুষের শরীরে এর অতিরিক্ত মাত্রা পড়লে চুলকানি, তলপেটে ব্যথা, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, গেঁটেবাত, ডায়রিয়া, বুক ধড়ফড়সহ আরও নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন বি ৬: এটির অন্য নাম পাইরিডক্সিন। এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পায়ের তলায় বোধ না থাকা বা অসাড়তা, হাত কাঁপা, স্পর্শ, তাপ ও কম্পন অনুভব করার ক্ষমতাও কমে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারানোসহ বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ভিটামিন বি ১২: এই ভিটামিন অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে- বাহু, হাত ও মুখ অসাড় হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্ক থেকে চোখে সংযোগকারী স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
ভিটামিন বি ৯: ভিটামিন বি নাইন শরীরে বেশি থাকলে পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ত্বক ও ঘুমের সমস্যারও আশঙ্কা রয়েছে।
ভিটামিন বি ৭: এ ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণে ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি শরীরে অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে। পাশাপাশি হালকা বমিভাব, পেটব্যথা এবং ডায়রিয়াও হতে পারে।
সবশেষে এই পুষ্টিবিদ বলেন, প্রতিটি মানুষেরই শরীরে যেমন দৈনিক ভিটামিনের চাহিদা রয়েছে, তেমনি শরীরভেদে তার পার্থক্যও রয়েছে। শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা আলাদা আলাদা। তাই, নিয়মিত খাদ্যের পাশাপাশি কেউ বাজার থেকে কিনে ভিটামিন গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা গ্রহণ করা উচিৎ।
ঢাকা/এনএইচ
আরো পড়ুন