ডায়াবেটিস মাপার নকল স্ট্রিপ, দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
নামি-দামি বহুজাতিক কোম্পানির ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপ নকল করে বাজারে ছেড়েছে ‘ফার্মা সলিউশনস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর নকল মোড়ক তৈরি করা হচ্ছে রাজধানীর নয়া পল্টনে ‘প্রিন্ট ওয়ান’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। অন্য কেউ এতে সম্পৃক্ত আছেন কি না, তার অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ডায়াবেটিসের নকল স্ট্রিপ বিক্রয় প্রতিরোধে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘ফার্মা সলিউশন’ নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ব্যাচের স্ট্রিপ তাদের প্রতিষ্ঠানের নয়। পরে লাজ ফার্মার কাকরাইল শাখায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি উল্লিখিত ব্যাচের স্ট্রিপ ফার্মা সলিউশন থেকে কিনেছে এবং তার ভাউচারও তদারকি টিমকে সরবরাহ করা হয়।
উল্লেখ্য, নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের ওই ব্যাচ নম্বর দিয়ে এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোশ (ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদনকারী জার্মান প্রতিষ্ঠান) বরাবর ই-মেইল করে জানা যায়, ওই ব্যাচের কোনো স্ট্রিপ তাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফার্মা সলিউশনের কুনিপাড়া বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযানে গিয়ে যাচাই করলে প্রমাণ হয় যে, এ প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মার কাকরাইল শাখাকে বর্ণিত নির্দিষ্ট ব্যাচের নকল ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপ সরবরাহ করেছে। এজন্য জনস্বার্থে ফার্মা সলিউশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য থেকে জানা যায়, তারা নয়া পল্টনের ‘প্রিন্ট ওয়ান’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে এসব নকল ডায়াবেটিস মাপার স্ট্রিপের মোড়ক তৈরি করেছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নয়া পল্টনে অবস্থিত প্রিন্ট ওয়ানে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পরে জরিমানা আরোপসহ ওই প্রতিষ্ঠানটিও জনস্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সভায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হোসেন নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের ওপর চালানো অভিযানের জন্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপসহ অন্যান্য নকল ওষুধ ও ডিভাইস শনাক্ত করতে সবার সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।
এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের দেশে ফার্মেসি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় ১৬৫-১৭০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। যদিও কিছু ওষুধ ও ইকুইপমেন্ট আমদানি করতে হয়।
ওষুধ ও মেডিক্যাল ডিভাইসের ওপর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চালানো অভিযানে প্রাপ্ত বিভিন্ন অসঙ্গতি তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব অসঙ্গতির মধ্যে আছে আমদানিকৃত ওষুধ ও ইকুইপমেন্টে খুচরা বিক্রয়মূল্যসহ আমদানিকারকের তথ্য না থাকা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারণ করা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ডিভাইস বিক্রয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস, ফ্রিজে ডিভাইস ও ওষুধের সাথে কাঁচা সবজি সংরক্ষণ করা, পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে কার্বন কপি ব্যবহার না করা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন সেক্রেটারি মো. জসিম উদ্দিন, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা।
মেয়া/রফিক