ঢাকা     রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

মিউনিখে বিশ্বব্যাপী সংঘাতে সৃষ্ট নিরাপত্তা হুমকি তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৫১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মিউনিখে বিশ্বব্যাপী সংঘাতে সৃষ্ট নিরাপত্তা হুমকি তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিতব্য ৬০তম মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে নানামুখী সংঘাতের ফলে বিশ্ববাসী যে নিরাপত্তা হুমকিতে আছেন, তা তুলে ধরবেন তিনি।

সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা ছেড়ে যাবেন। সম্মেলনের সাইড লাইনে জার্মান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সাত দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ড. ক্রিস্টোফ হিউজেনের আমন্ত্রণে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত সাত দেশ ও তিন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও সুযোগ তৈরি হবে। মিউনিখ সিকিউরিটি সম্মেলন মূলত সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। ৬০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও সুযোগ তৈরি হবে। সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ বিশ্বের একাধিক নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

এ সম্মেলনে ঢাকার ফোকাস কী হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা যুদ্ধের বিপক্ষে এবং শান্তির পক্ষে। বিশ্বব্যাপী নানাবিধ সংঘাতের ফলে যে শান্তি নষ্ট হচ্ছে এবং বিশ্ববাসী নিরাপত্তা হুমকিতে আছেন, আমরা তা তুলে ধরব। মিয়ানমার ইস্যু সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কারণে আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ আছে। আবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিষয়টি আসতে পারে। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে মিয়ানমার থেকে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের মিয়ানমার যাতে পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করবো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। রাশিয়া আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতীম দেশ। রাশিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন অপারেশন করার সময়ে রাশিয়ার একজন নাগরিকও মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ ও ঐতিহাসিক। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি, সেই বন্ধন অনেক দৃঢ়।

রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারে যে চলমান সমস্যা সেটির কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি আপনার (সাংবাদিক) কাছে আমি প্রথম শুনলাম, উনি কী মন্তব্য করেছেন। শোনা কথার ওপর মন্তব্য করা অনুচিত। আমি নিজে দেখে, পড়ে, জেনে এটি নিয়ে মন্তব্য করা উচিত। তবে এটুকু বলতে পারি, সেটি হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের যে বিচার হচ্ছে সেটি অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে এবং তিনি আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার জামিনও পেয়েছেন। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এখানে সরকার কোনো পার্টি (পক্ষ) না, ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শ্রমিকরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ সেটা আপনারা জানেন। মামলাটি তো শ্রমিকরা করেননি, এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলা করার সময় কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে তারা অনুমতি নিয়েছেন। মামলা করতে হলে এই অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণসহ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ৪ দিনের সরকারি সফরে যাত্রা করে সে দিন সন্ধ্যায় মিউনিখ পৌঁছাবেন। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশ্যে মিউনিখ ত্যাগ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি পৌঁছার কথা রয়েছে। 

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়