স্বপ্নবাজ ৬ তরুণের ‘টিম ইকারাস’
স্বপ্নীল মাহফুজ : প্রাচীন গ্রিক মিথের ইকারাস এর কথা মনে আছে? যে কিনা নিজের বন্দীদশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় মোমের বানানো পাখা দিয়ে উড়েছিল।
উড়তে উড়তে সে পৌঁছে যায় সূর্যের কাছাকাছি। একসময় ডানার মোম গলে সে পতিত হয় সমুদ্রে।উড়তে গেলে পতনের ভয় থাকেই। কিন্তু এই ভয়কে জয় করা কিছু তরুণদের নিয়েই টিম ইকারাস। টিম ইকারাস নতুন নতুন অ্যাড্রয়েড অ্যাপস উদ্ভাবন করে চলেছে। তাদের উদ্ভাবিত নতুন দুইটি অ্যাপ নিয়ে এ প্রতিবেদন।
১. লাইফ প্লাস (এই অ্যাপে মিলবে রক্তদাতার খোঁজ)
চলতি বছরের মার্চের গল্প। ইকারাস টিমের মেম্বার তখন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র। তারা হলেন রাশিক জামান (সিএসই ১৩) ও আতিকুর রহমান (ইউআরপি ১৩)। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তারা সেবামূলক একটি অ্যাপ ডেভেলপ করেন। অ্যাপটির নাম লাইফ প্লাস (Life+)। প্লে স্টোরে সার্চ করলে খুব সহজেই এটি খুঁজে পাওয়া যাবে। অ্যাপটিতে কাজ করা হয়েছে ব্লাড ডোনেশন পদ্ধতিকে কিভাবে ডিজিটালাইজেশন করা যায় সেটি নিয়ে। আপাত দৃষ্টিতে অ্যাপটি দেখে অন্যান্য দশটি ব্লাড ডোনেশন অ্যাপের মতো মনে হলেও একটু ঘাটলেই আপনি এটির বিশেষ ফিচারগুলো দেখতে পাবেন। ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেজ দিয়ে তৈরি অ্যাপটি ইনস্টল করে শুরুতে একবার ফেসবুক দিয়ে লগইন করে ফোন নম্বর আর ব্লাড গ্রুপ দিলেই আপনার কাজ মোটামুটি শেষ।
রাশিক জামান জানান, ‘লাইফ প্লাস এর মতো অ্যাপ বানানোর আইডিয়া আমাদের মাথায় আরো থাকা সত্ত্বেও অ্যাকাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি এ ধরনের কাজ করা কিছুটা কঠিন। অনেক অ্যাপ আপনি প্লে স্টোরে পাবেন যেগুলো ব্লাড ডোনেশন নিয়ে কাজ করে। ডাটাবেজভিত্তিক হওয়ায় সেই অ্যাপগুলোতে ডোনারের শুধু ঠিকানাটাই দেয়া থাকে। কোনো কারণে সেই ঠিকানায় ডোনারকে না পাওয়া গেলেই শুরু হয় ভোগান্তি। আর খুব দ্রুত কাউকে খুঁজে পাওয়ারও কোনো উপায় থাকে না। ঠিক এই জায়গাটাতে কিছু করা যায় কিনা এটা নিয়েই আমরা ইকারাস কাজ করেছি। অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করার পর এটি আপনার লোকেশন ৬ ঘণ্টা পর আপডেট করবে। ফলে আপনার বর্তমান অবস্থানের আপডেট সবসময়য় সেভ থাকবে অ্যাপের মধ্যে।’
আতিকুর রহমান বলেন, ‘লোকেশন নিয়ে কাজ করায় অ্যাপটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল, যেকোনো গ্রুপের ব্লাড সার্চ করলে আপনার কাছাকাছি থাকা ব্লাড ডোনারকে আপনি সবার আগে খুঁজে পাবেন। এরপর তাকে সিলেক্ট করলে আপনি নিজের এবং তার মধ্যবর্তী বর্তমান দূরত্ব দেখতে পাবেন। রিকোয়েস্ট পাঠালে সেটি মুহূর্তের মধ্যে তার ফোনে চলে যাবে।’
ইকারাস টিম আরো নিশ্চিত করেন যে, অ্যাপটিতে নিরাপত্তার ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কাউকে ব্লাড রিকোয়েস্ট পাঠাতে গেলে আগে আপনাকে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রেসক্রিপশন এবং কি কারণে রক্ত লাগছে সেটি লিখতে হবে। আর কোনো ডোনারের কাছ থেকে রক্ত নিতে চাইলে আপনি ডোনারকে ব্লাড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন। আপনার ডকুমেন্টস দেখে নিরাপদ মনে হলে ডোনার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সুতরাং ডোনারের প্রাইভেসির ব্যাপারে এখানে বেশ জোর দেয়া হয়েছে। অ্যাপটি রিলিজ হওয়ার পর থেকে অসংখ্য মানুষের সমর্থন আর রিভিউ পেয়েছে ইকারাস। প্লে স্টোরে তাদের অ্যাপ পেয়েছে ৪.৮ রেটিং। ৭০০শ’র বেশি রক্তদাতা এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। বিনা মূল্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে লিংক থেকে।
যে গল্পটা শুরু হয়েছিল দুজন দিয়ে সেই গল্পটা এখন আর দুজনের নয়। ইকারাস এখন ৬ জনের রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট টিম। নতুন ৪ জন টিম মেম্বার হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুশিকুর রহমান জয় (সিএসই ১৩), সায়েম হোসাইন (আইইএম ১৩), সৌরিন বড়ুয়া (ইসিই ১৫) ও মুশফিক আবির (সিএসই ১৩)।
অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে একঝাক তরুণের এই অ্যাপ ডেভেলপার টিম। বাংলাদেশের আইটি সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণরা। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য বিশ্বমানের অ্যাপ তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে ইকারাস।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম