ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অবশেষে স্বপ্ন দিলো ধরা

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ১১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:১৩, ১১ জুলাই ২০২১
অবশেষে স্বপ্ন দিলো ধরা

গুটি গুটি পায়ে লিওনেল মেসি এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে। অবচেতন মনকে হয়তো বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না! কত অপেক্ষা; কত মান-অভিমান। তবুও ট্রফি ধরা দিচ্ছিল না খুদে ফুটবল জাদুকরের হাতে! কতবার হতে হতেও হলো না। এবার লাতিন আমেরিকার মর্যাদার ট্রফিটা হাতে নিয়ে দেরি করেননি; দিলেন গাড় চুম্বন। এরপর উল্লাস করতে করতে গেলেন সতীর্থদের কাছে; লাফিয়ে উঠলেন বেশ কয়েকবার!

আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান; মেসির ১৬ বছর। জাতীয় দলের হয়ে ২০০৫ সালের আগস্টে খেলা শুরু করেছিলেন। এরপর ক্লাবের হয়ে কত কিছুই না জিতেছেন; কিন্তু দেশের হয়ে ফিরছিলেন বারবার শূন্যহাতে। সেই আক্ষেপ ঘুচলো ফুটবলের তীর্থভূমি ব্রাজিলে। রিও ডি জেনেইরোর ঐতিহাসিক, বিখ্যাত মারাকানায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ১৯৯৩ সালের পর কোপা আমেরিকার ট্রফি জিতলো আর্জেন্টিনা। সতীর্থরা শূন্যে ভাসিয়ে উৎসব করেছেন দলের প্রাণভোমরাকে; গুরু লিওনেল স্কালোনিকে জ ড়িয়ে মেসি কেঁদেছেন পাওয়ার আনন্দে। কত কিছুই না সাক্ষী হয়ে থাকলো এই মারাকানা!

আর মাঠ থেকে ফিরে ড্রেসিংরুমে বাঁধনহারা আনন্দে মেতে ওঠেন মেসিরা। এক ভিডিও দেখা যায়, উন্মাতাল মেসি ট্রফি ধরে নাচছেন। আর তাকে ঘিরে সতীর্থরা। নাচবেনইতো তারা! এই মুহূর্তের জন্যই যে অপেক্ষা ২৮ বছর ধরে।

ইউরোর পাওয়ার ফুটবলের কাছে লাতিন আমেরিকার ফুটবল চাপা পড়ে গিয়েছিল। যেই না ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিশ্চিত হলো; শুরু হলো কথার লড়াই। নানা হিসাব-নিকাশ কত আলোচনা-সমালোচনা আর প্রত্যাশা। বরাবরের মতো এবারো আলোচনায় ছিল মেসি কী এবার পারবেন? হ্যাঁ তিনি পেরেছেন। দলকে করেছেন চ্যাম্পিয়ন; নিজেও চ্যাম্পিয়ন। এখন আর কেউ বলতে পারবে না মেসি দেশের হয়ে কিছু জেতেন নাই!

যদিও ফাইনালের মঞ্চে মেসি আলো ছড়াতে পারেননি। শেষ দিকে মাত্র ৬ গজ দূর থেকে একটি সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসনের কাছে বুদ্ধিমত্তায় হার মানতে হয়েছে। একমাত্র গোলটি আসে ডি মারিয়ার পা থেকে।

২২ মিনিটে রেনান লোদির ভুলে ডি মারিয়া এডারসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্রাজিলের জালে বল জড়ান। ব্রাজিল ডিফেন্সের ওপর দিয়ে ডি পলের শট প্রথম সুযোগেই নিজের আয়ত্তে নেন ডি মারিয়া; লোদি থাকলেও তিনি বলের নাগাল পাননি। একা এডারসনকে ফাঁকি দিতে সমস্যা হয়নি অভিজ্ঞ ডি মারিয়ার। তিনি প্রথম আর্জেন্টিনা ফুটবলার যিনি ২০০৪ সালের পর কোপার ফাইনালে প্রথম গোল করেন।  

ফাইনালের নায়ক ডি মারিয়া হলেও দলকে এতটুক পর্যন্ত নিয়ে আসার পেছনের মূল কারিগর এই মেসিই। ছোট একটি পরিসংখ্যানেই তা বোঝা যায়। ফাইনালের আগে ৬ ম্যাচে একাই ৪ গোল করেছেন; আর ৫ গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আর্জেন্টিনার গোলে তার একারই অবদান ৬০ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে ঘরবন্দী জীবনে রোমাঞ্চ নিয়ে এসেছে ফুটবল। ইউরো-কোপার ডামাডোলে ঘি ঢেলে দিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনালের মহারণ। মেসির হাতে ট্রফি ওঠায় রোমাঞ্চের আরও পূর্ণতা পেলো। রোববার (১১ জুলাই) দুই দলের খেলোয়াড়রা মাঠে নামার আগে মারাকানায় চলে আলোর ঝলকানি। ঝাঁকজমকপূর্ণ লেজার শোতে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন বিষয়। যা শেষ হয়েছে কোপা আমেরিকার ট্রফি ও আয়োজক কনমেবলের লোগোর প্রদর্শনীতে।

বল দখলের লড়াই হতে শুরু করে আক্রমণে থাকলেও ব্রাজিল ফুটবলারদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ছন্নছাড়া ভাব।  ম্যাচের ৬০ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখার সঙ্গে আর্জেন্টিনার বার লক্ষ্য করে শট নেয় ১৩টি। কিন্তু রক্ষণভেদ করে বল জালে জড়াতে পারেননি নেইমার-ফিরিমিনোরা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা মাত্র ৬টি শট নেয় তাতেই সফল দলটি।ব্রাজিল গত আসরের কোপা চ্যাম্পিয়ন ছিল। কিন্তু নিজেদের মাটিতে ট্রফি ধরে রাখতে পারেননি নেইমাররা। এর আগে সর্বশেষ ২০০৭ সালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল; সেবার আলবিসেলস্তেদের উড়িয়ে দিলেও মারাকানায় পারেননি তিতের শিষ্যরা।

ঢাকা/রিয়াদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়