ব্যাটিংয়ে আমার নিজের পজিশন ভুলে গেছি: মেহেদী হাসান
![ব্যাটিংয়ে আমার নিজের পজিশন ভুলে গেছি: মেহেদী হাসান ব্যাটিংয়ে আমার নিজের পজিশন ভুলে গেছি: মেহেদী হাসান](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2021September/mehedi-hasan-risingbd-2110010559.jpg)
অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশ উল্লাসে মেতে উঠেছিল তার কারণে। বল হাতে দারুণ সূচনা করে সাফল্য এনে দিতে বড় ভূমিকা তার। আবার তাকে ব্যাট হাতেও দেখা যায় কখনও ওপেনিংয়ে, তিনে-চারে কিংবা শেষের দিকে। বলছি বোলিং অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসানের কথা। বল হাতে যতটা না সাফল্য পেয়েছেন, ব্যাট হাতে ততটা পাননি। তবে দুই বিভাগেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে আছেন।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে মরুর বুকের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই আসরের দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন মেহেদী। শুরুতে রোমাঞ্চ কাজ করলেও এখন তার মনে নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে দেশের জন্য কিছু করার তাড়না। মেহেদীর বাবা অসুস্থ। বাবাকে নিয়ে ব্যস্ততার মাঝেই খুলনা থেকে মুঠোফোনে খোলামেলা আলাপন। তাতে উঠে এসেছে তার বিশ্বকাপ ভাবনা, প্রস্তুতিসহ নিজের বোলিং-ব্যাটিং নিয়ে নানা পরিকল্পনা ও ইচ্ছার কথা। তার সঙ্গে রাইজিংবিডির বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম রিয়াদ।
বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি...
মেহেদী হাসান: বিশ্বকাপ নয় শুধু, যে কোনো ম্যাচ খেলতে গেলেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যে কোনো সিরিজ বলেন বা প্রত্যেকটা খেলাই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিশ্বকাপ নয়, প্রত্যেক ম্যাচ খেলাটা আসলে খুব গর্বের একটা বিষয়। যে কোনো খেলার জন্য যে কোনো সময় সবারই প্রস্তুত থাকতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও একই।
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ দলে। রোমাঞ্চ-উত্তেজনা কাজ করছে?
মেহেদী হাসান: এটা আমার কাছে স্বাভাবিক বিষয়। তেমন কিছু না। বেশি চাপও নিতে চাইছিনা, বিশ্বকাপ দেখে বেশি উত্তেজিতও না। আর দলে সুযোগ পাওয়া এটা নিজের কাছে সন্তুষ্টির বিষয়, এটা তো অল্প সময়ের জন্য একটু থাকে। মানুষ মরে গেলে কিন্তু সর্বোচ্চ একদিন মনে থাকে, তারপর কিন্তু মানুষ ভুলে যায়। খুশির বিষয়টাও কিন্তু একই। বেশিক্ষণ কিন্তু থাকে না। যখন দলের থাকার সংবাদটা পেয়েছি খুশি লেগেছে, তারপর ওইদিনেই রেশ কেটে গেছে। এখন নিজের কাজ নিজে করতে হবে।
সবশেষ দুই সিরিজে আপনি দারুণ বোলিং করেছেন। আরও ভেঙে বললে শুরুটা করে দিয়েছেন ভালো। কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মেহেদী হাসান: হ্যাঁ, মূল্যায়ন বলতে দলের জন্য কতটুক করতে পারব বা সুযোগ পেলে দলকে কী দিতে পারব ওইটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে আমি নিজের জন্য কিছু না, আসলে দলের জন্যই সবকিছু। আসলে এটা সময় বলে দিবে।
অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের মতো দলকে নাকানি চুবানি খাওয়াতে কেমন উপভোগ করেছেন?
মেহেদী হাসান: উপভোগ তো অবশ্যই করেছি। খারাপ খেললে খারাপ লাগে। ভালো খেললে খুশি লাগে। কিন্তু কোনোকিছুই আসলে... চাহিদার তো শেষ নেই। ভালো করার শেষটা আসলে যতই ভালো করি আরও ভালো করার চেষ্টা করতে থাকি।
স্পিন কোচ হেরাথের সঙ্গে কাজ উপভোগ করছেন?
মেহেদী হাসান: মানুষ হিসেবে (হেরাথ) খুবই ভালো মানুষ। তার সঙ্গে কাজ করে আমরা খুবই উপভোগ করছি। আর কোনো কিছু সমস্যা হলে তিনি সবসময় বলেন, আমাকে জানাও। তিনি ভালো মানুষ এবং তার সঙ্গে কাজ করে মজা পাচ্ছি। একজন কিংবদন্তি বোলার উনি, তার থেকে অবশ্যই কিছু নেওয়ার আছে। কিন্তু খুবই অল্প সময় হলো জাতীয় দলে এসেছেন। আমার মনে হয় একটা মানুষ দীর্ঘ সময় থাকলে তার কাছ থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায়। স্বল্প সময়ে কিন্তু অনেক কিছু নেওয়া সম্ভব না। তো তিনি যদি আরও দীর্ঘ সময় থাকেন,আমাদের ক্ষেত্রে আরও ভালো হবে। আমরা অনেক কিছু শিখতে পারব।
তবুও হেরাথ আসার পর আপনি উল্লেখযোগ্য কিছু শিখেছেন কি না?
মেহেদী হাসান: শোনেন, আপনি যদি কিছু শিখতে চান বা নতুন কিছু বাস্তবায়ন করতে চান, অবশ্যই সেটায় আপনার দক্ষতা ভালো হতে হবে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য সেটা শতভাগ ভালো হতে হবে। এটা তেমন কিছু না, আপনি ভালো বল করলে, সবাই বাহবা দিতেই থাকে। ভালো বল করাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মিরপুরের উইকেটে যে সহায়তা পেয়েছেন ওমান-আরব আমিরাতে কি তা পাবেন? তখন বিষয়টি আপনাদের জন্য কঠিন হবে না?
মেহেদী হাসান: আমরা যে নিউজিল্যান্ডে খেলে আসছি, সেখানে কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মাঠগুলোতে খেলে আসছি। ওখানে বাউন্ডারি ছোট। চ্যালেঞ্জটা আসলে নিজের কাছে। বড় মাঠ হোক, খারাপ উইকেট হোক বা ছোট মাঠ হোক। চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গে নিজের নিতে হবে। এর ভেতর থেকে নিজেকে কিভাবে বের করা যায়, তা নিজে চিন্তা করতে হবে। অবশ্যই ভালো করার ইচ্ছা থাকে সবার। মিরপুরের উইকেটের কথা যেটা বললেন। আমি তো মিরপুরে ৮-১০টি করে উইকেটও পাইনি, ৫-৬টি করেও না। তো বিষয়টা এরকম যে উইকেট পেতে হলে খুব ভালো জায়গায় বল করতে হবে। সেটা আপনি যে উইকেটেই বল করেন না কেন। ভালো জায়গায় বল করে যাওয়াটাই লক্ষ্য।
ব্যাটসম্যান মেহেদীকে কিভাবে ব্যাখা করবেন। কোন পজিশনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
মেহেদী হাসান: আমি যে একটা পজিশনে খেলি, আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ লাগে না। যেহেতু আমার ব্যাটিং করতে হয় যে কোনো পজিশনে। সত্যি কথা বলতে কী, ব্যাটিংয়ে আমি নিজের পজিশন ভুলে গেছি আপাতত। যখন একটা পাকাপোক্ত জায়গা হবে, তখন বলতে পারব আমার এই জায়গায় ব্যাটিং করলে ভালো হয়।
একেক ম্যাচে একেক পজিশন, বাড়তি চাপ মনে হয়?
মেহেদী হাসান: চাপ থাকলেও কিছু করার নেই। খেলাটা দেশের জন্য খেলছি। আক্ষরিকভাবে শক্ত থেকে খেলতে হবে। দেশের জন্য আমার যদি দলে না খেলেও যদি দূর থেকে কিছু করতে হয় সেটাও দেশের জন্য করতে হবে। এটা আমার জন্য বাড়তি চাপ না, তো আমি যদি এ জায়গায় যদি মানসিকভাবে শক্ত থাকি, নিজের কাছে শক্ত মনে করে জিনিসটা সাবলীলভাবে করতে পারি তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। এটা করে আমি যদি টিমকে কিছু দিতে পারি, টিম লাভবান হবে।
প্রথম বিশ্বকাপ কিভাবে রাঙাতে চান?
মেহেদী হাসান: আমি যেহেতু অলরাউন্ডার, যেহেতু আমার অপশন আছে বোলিং-ব্যাটিং দুটোই করার। আমি চাইব সবকিছু ভালো করতে। বাদ বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।
বিশেষভাবে কোনো কাজ করছেন কি না?
মেহেদী হাসান: আমি ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই আরও উন্নতি করতে চাই। নিজের থেকে আরও ভালো কিছু করতে চাই। ব্যাটিং নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করছি। বাস্তাবায়ন তো মাঠে হবে। তখন সবাই দেখতে পারবেন।
আপনি একজন অলরাউন্ডার। আপনার সতীর্থ সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার...
মেহেদী হাসান: আমরা সিনিয়র সবার কাছ থেকে সবকিছু শিখতে চাই। যেটা প্রয়োজন মনে করি অবশ্যই ধারণ করতে চাই। মানে আমরা অনেক কিছু শিখেও ফেলি। সাকিব ভাই আমাদের জন্য এমন এক অনুপ্রেরণা যে, তার কাছে সবকিছু নিতে পারি। যেমন আপনি আলুর কথা বলতে পারেন, যে কোনো তরকারির সঙ্গে আলুটা যায়। সাকিব ভাই এমন একটা মানুষ যে, তাকে আপনি ফিল্ডিং, বোলিং, ব্যাটিং তিন ফরম্যাটেই তার কাছ থেকে আমরা সবকিছু শিখতে পারি।
অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর বাছাইপর্ব খেলতে হবে পাপুয়া নিউ গিনি, ওমানের মতো দলের বিপক্ষে। বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়েছে বিষয়টি?
মেহেদী হাসান: আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড থেকে পাপুয়া নিউ গিনি, ওমান আরও কঠিন। কারণ এরা সবসময় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। এদের সব খেলা দুবাইতে, ওমানে হয়। এরা কিন্তু খুবই ভয়ানক। আর টি-টোয়েন্টিতে ছোট বড় দল নেই। যে কোনো সময় যে কোনো দল ঘুরে দাঁড়ায়। মানে খুবই কঠিন। বলার কিছু নেই। তাই ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ আমার মতে। তাদের হারানোটা খুবই চ্যালেঞ্জিং।
বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে কোথায় দেখতে চান?
মেহেদী হাসান: হ্যাঁ, অবশ্যই আমি একটা ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। নিজের কাছে ভালো লাগবে তাহলে। আশা করি প্রথম কোয়ালিফাই উত্তীর্ণ হয়ে পরের রাউন্ডে (সুপার টুয়েলভ) যাবে, তারপর ওখান থেকে একটা ভালো ফল করবে। যদি সেমিফাইনালে যাওয়ার একটা সুযোগ হয়, তাহলে ভালোই হয়। এ বছর একটা ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে বলে আমার কাছে মনে হয়। দোয়া করবেন।
ঢাকা/ফাহিম
আরো পড়ুন