বাফুফেতে নিশ্চিহ্ন স্বাধীন বাংলা দলের ইতিহাস, ক্ষোভ পিন্টুর
![বাফুফেতে নিশ্চিহ্ন স্বাধীন বাংলা দলের ইতিহাস, ক্ষোভ পিন্টুর বাফুফেতে নিশ্চিহ্ন স্বাধীন বাংলা দলের ইতিহাস, ক্ষোভ পিন্টুর](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2021December/pintu-2112091101.jpg)
দুপুর গড়িয়ে আসি আসি করছে বিকেল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের সবুজ লনে বিচরণ করছেন একদল ফুটবল যোদ্ধা। যাদের নাম জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে। ফুটবল পায়ে যারা যুদ্ধ করেছিলেন লাল সবুজের পতাকার জন্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য তারা। তাদের বিচরণে বাফুফে প্রাঙ্গণে যেন সৌরভ ছড়াচ্ছিল।
গতকাল বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মতিঝিলের বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না, অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুসহ মোট ১৮জন উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতারুজ্জামান প্রমুখ।
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতেই বাফুফে ভবনে আসেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে রাইজিংবিডির আলাপ হয় অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর সঙ্গে। ৮২ বছর বয়সী পিন্টু স্বল্প সময়ের এই সাক্ষাৎকারে নিজের স্মৃতিচারণার সঙ্গে উগরে দিয়েছেন ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার প্রতি রাগ, ক্ষোভ আর হতাশা।
সংবর্ধনায় যেতে পেরে তার মনটা ভরে গেছে জানিয়ে পিন্টু বলেন, ‘এখানে আসার পর আনন্দে মনটা ভরে গেছে। আমি স্বাধীন বাংলা দলের অধিনায়ক ছিলাম। আমার নেতৃত্বে এখানকার সবাই খেলেছে। এখন বয়স হয়ে গেছে, কোথাও যেতে পারি না। কাজ করতে পারি না, খেলা তো দূরের কথা। কেউ কেউ একবারে চলে গেছেন। আসলে আজকের দিনটি মনে রাখার মতো।‘
তবে মন খারাপও হয়েছে পিন্টুর। একটা সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ছবি-ইতিহাস বাফুফে ভবনে টাঙানো থাকলেও এখন এসব নেই। তাতেই হতাশা আর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, ‘আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে এখানে আমাদের ছবি ছিল, আমাদের ইতিহাস ছিল, আমরা কে কী করেছি সবকিছুর বর্ণনা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। কোথায় গেল এসব? আমি ঢুকতে দেখি এসব কিছু নেই, আমি এসব জানিয়েছি তাদের।‘
ফুটবল দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়েও আলাদা কোনো চাকচিক্য চোখে পড়েনি। ঢুকতেই দেখা যায় একট নামফলক। যেটা ২০০৯ সালের ৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করেছিলেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। এতে সব সদস্যদের নাম যুক্ত রয়েছে। তৃতীয় তলার কনফারেন্স কক্ষে যেতে দুই পাশের সিঁড়িতে বেলুন দিয়ে সাজানো ছিল, আর কক্ষে প্রবেশের আগে লাল কার্পেট। এ ছাড়া ফুটবলের দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কোনো কিছু চোখে পড়েনি। এ জন্যই হয়তো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক রাগ-ক্ষোভ আটকাতে পারেননি।
কথা হয় বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান অবস্থা নিয়েও। সমাধানের পথও অবশ্য বলেননি, জানিয়েছেন আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, ‘বাংলাদেশের ফুটবল শেষ হয়ে গেছে, তা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের তো এখন আর করার কিছু নেই।‘
ফুটবলের উত্তরণে তারা এগিয়ে আসবেন কি না প্রশ্নে পিন্টু বলেন, ‘আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। আমার বয়স ৮২, আমি এখান থেকে যেতে যেতে হয়তো মারা যাব। তবে আমি আশা করি ফুটবলের সোনালি দিন ফিরে আসবে, হয়তো আমি দেখে যেতে পারব না।‘
গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অধিনায়ক পিন্টুর বক্তব্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বাফুফের ওপর ক্ষোভ ঝারলেও অবশ্য এমন আয়োজনের জন্য অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাফুফে সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য কাজী সালাউদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
পিন্টু বলেন, ‘আমার সৌভাগ্যের বিষয় যে আজ আমরা সবাই একসঙ্গে বসেছি। এমন সৌভাগ্য আমার জীবনে বহুবার এসেছে। সালাউদ্দিনকে ধন্যবাদ এমন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য। আমার সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, অনেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হয়েছে মাঝে মাঝে। আবার দেখাও হয়নি। আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেটা পালন করার চেষ্টা করেছি। বয়স ৮২, প্রথমবারের মত ফুটবল ফেডারেশনে ব্লেজারের মাফ নিয়েছে এটা আমার ভালো লেগেছে। অনেকেই আমাদের ভুলে গেছে।‘
ঢাকা/ফাহিম
আরো পড়ুন