একুশ ভুলে বাইশে নতুন শুরুর প্রত্যাশা
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট ফরম্যাট এলেই যেন কিছু একটা ভর করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওপর। সহজাত খেলা ভুলে গিয়ে ব্যর্থতার মিছিলে বিলিয়ে দেন নিজেদের। একুশ বছর ধরে এই সংস্করণে বিচরণ হলেও পারফরম্যান্স এখনো শিশু সুলভ। অথচ সেই কবে কৈশোর কাটিয়ে যৌবনের তকমা লেগেছে গায়ে।
আসছে নতুন বছর। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘরে গেলেই অতীত হবে ২০২১। ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন শুরু হবে ২০২২ এর। বাইশের ভোরের আলো ফোটার আগেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের মহারণে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। একুশের সব ভুল-ত্রুটি ভুলে গিয়ে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বাইশে নতুন শুরুর প্রত্যাশা করছেন লাল সবুজের কাপ্তান মুমিনুল হক।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘নতুন বছর নিয়ে রোমাঞ্চিত। আগে কী হয়েছে এসব নিয়ে চিন্তা না করে সামনের বছর কীভাবে ভালো করে শুরু করা যায় এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আসলেই আমি খুব রোমাঞ্চিত। শুরু ভালো হলে বাকিটাও ভালো যায়।’
একুশে বাংলাদেশ ৭টি টেস্ট খেলে। তার মধ্যে সাফল্য বলতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১টি জয় আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১টি ড্র। ২০২১ শুরু হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ উইকেটে হেরে আর শেষে হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরে। বছরজুড়ে ব্যাটসম্যানদের ব্যাট ছিল ব্যর্থ।
শনিবার (১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় মাউন্ট মঙ্গুনুইয়ের বে ওভালে ম্যাচটি শুরু হবে। খেলাটি সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভিতে। বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৯টি টেস্ট খেলে জয় পায়নি একটিতেও। আর বে ওভালে এই প্রথম সাদা পোশাকে খেলতে নামবে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। সর্বসাকুল্যে ১৫টি ম্যাচ খেলে জয় নেই একটিতেও। সাফল্য তিন ম্যাচে ড্র। ৭টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হার।
মুমিনুল চান অতীত রেকর্ড ভুলে সামনে এগোতে। ‘অনুশীলন বেশ ভালো ছিল। আগের রেকর্ড অতীত হয়ে গেছে, এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কোনো লাভ হবে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাভাবনা করাই ভালো। সবসময় আশাব্যাঞ্জক ও ইতিবাচক চিন্তা করা উচিৎ। নিউ জিল্যান্ডে অবশ্যই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ থাকবে। আগে থেকেই যদি নেতিবাচক চিন্তা করেন তাহলে ভালো ফলাফল আসবে না। যত চ্যালেঞ্জ থাকুক, আশাবাদী থাকা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমরা যতগুলো টেস্ট জিতেছি তা দলগত পারফরম্যান্সে কারণে। সবাই ভালো না করলে ভালো ফল করা কঠিন। তখন ব্যক্তিগত অর্জন হবে, দলীয় ফলাফল হবে না। আমাদের খেলার যে প্যাটার্ন, তাতে দল হয়ে খেলা খুব জরুরি। তিন ডিপার্টমেন্টেই যেন ভালো করতে পারি’- আরও যোগ করেন মুমিনুল।
নিউ জিল্যান্ডের উইকেট বরাবরের মতোই পেস সহায়ক হবে। বাংলাদেশ একাদশ সাজাতে পারে তিন পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়। এরপর যথাক্রমে নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। সাতে দেখা যেতে পারে ইয়াসির আলী রাব্বিকে। একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার থেকে ব্যাটিং সুবিধাও পেতে পারে বাংলাদেশ। আর পেসার হিসেবে তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী ও এবাদত হোসেন।
টেস্টে চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে ২ ম্যাচ খেলে ১টি করে হার ও ড্র নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে কিউইরা। যেখানে সমান ম্যাচ খেলে দুটি হারে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে। টম লাথামের নেতৃত্বে নিউ জিল্যান্ডও অবশ্য জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসনের পরিবর্তে এই সিরিজে অধিনায়ক হওয়া টম লাথাম।
কিউই কাপ্তান বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে যা করে আসছি তাই করতে চাই। আমাদের কন্ডিশনে আমরা ভালো পারফরম্যান্স করে থাকি, অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশেও সাফল্য আসছে।’
এই সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন দেশটির অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেলর। তার বিদায়ী টেস্ট রাঙ্গাতে চাইবেন সতীর্থরা। এ ছাড়া টেলর নিজেও চাইবেন শেষটা যেন সুন্দর হয়। অবশ্য বাংলাদেশ কোচ জানিয়ে দিয়েছেন তার বিদায় বিষাদময় করতে চান। অর্থ্যাৎ টেলরকে রান করতে দেবে না বাংলাদেশ।
নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশ নিয়মিত সফর করলেও সাফল্যের সংখ্যা শূন্যের কৌটায়। নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের প্রত্যাশা অতীত ভুলে ভালো শুরুরু, ভালো কিছুর। বাংলাদেশ কি পারবে? নাকি আবারও দেখা যাবে ব্যর্থতার মিছিল? সময় বলে দেবে।
ঢাকা/আমিনুল