ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিউ জিল্যান্ডের রান উৎসব, বাংলাদেশের হতাশার দিন

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৯ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১১:৪৮, ৯ জানুয়ারি ২০২২
নিউ জিল্যান্ডের রান উৎসব, বাংলাদেশের হতাশার দিন

স্কোর: নিউ জিল্যান্ড ৩৪৯/১ (৯০ ওভার)

সেঞ্চুরি করেই দিন শেষ করতে চেয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। এজন্য মিরাজের দিনের শেষ ওভারের প্রথম বল কভার দিয়ে ড্রাইভও করেছিলেন। কিন্তু বল ফিল্ডারের হাতে গিয়ে জমে। পরের বলে ১ রান নিয়ে কনওয়ে ৯৯ রানে পৌঁছান। 

পরের চার বলে কোনো ঝুঁকিই নেননি টম লাথাম। ফলে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন কনওয়ে। লাথামও অপেক্ষায় আছে দ্বিতীয় দিনের। কিউই অধিনায়ক ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৪ রান দূরে। তাদের দুজনের জমাট ২০১ রানের জুটিতে রান উৎসব করলো নিউ জিল্যান্ড। হতাশার দিন কাটাল বাংলাদেশ। 

ক্রাইস্টচার্চে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রানে প্রথম দিন শেষ করেছে নিউ জিল্যান্ড। ৩.৮৭ রান রেটে রান তুলেছে স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডই বলে দেয় কতটা বিবর্ণ ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ঘরের মাঠ হ্যাগলি ওভালে লাথাম অপরাজিত আছেন ২৭৮ বলে ১৮৬ রান করে। ১৪৮ বলে ৯৯ রান করেছেন কনওয়ে।

বিবর্ণ পেস ত্রয়ী

সবুজাভ উইকেট পেস বোলারদের সহায়ক হবে তা আগে থেকেই জানা ছিল। বাড়তি গতির সঙ্গে বাউন্সও পাওয়া যাবে। ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমত হুমকি হয়ে ওঠার কথা ক্রাইস্টচার্চের ২২ গজ। কিন্তু বল হাতে বিবর্ণ দিন কাটালেন বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী। তাসকিন, শরিফুল ও ইবাদত কেউই আজ হুমকি হতে পারেননি। নিখুঁত লাইন ও লেন্থ ধরে বোলিং করতে পারেননি। পারেননি আগ্রাসন দেখাতে। আলগা বোলিংয়ে দিয়েছেন প্রচুর রান। তাদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অতি অসহজেই রান তুলেছেন ব্যাটসম্যানরা। সব মিলিয়ে ৪৩টি বাউন্ডারি এসেছে প্রথম দিনই। কনওয়ে দিনের একমাত্র ছক্কাটি হাঁকিয়েছেন। 

জুটির ডাবল সেঞ্চুরি

ইয়ং সাজঘরে ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধেছিলেন ডেভন কনওয়ে ও টম লাথাম। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করছেন দুজনের। ১৪৮ রানে ব্যাটিং শুরু করেন তারা। দারুণ ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতায় তাদের জুটির রান ডাবল সেঞ্চুরি পেরিয়ে গেছে। লাথম ডাবল সেঞ্চুরি ও কনওয়ে সেঞ্চুরির পথে আছেন। 

এক সেশনেই ১১০ রান দিল বাংলাদেশ!

বাংলাদেশের বাজে বোলিংয়ে দ্রুত রান তুলছে নিউ জিল্যান্ড। অনায়েসে রান তুলে দ্বিতীয় সেশনেই ১১০ রান পেয়েছে স্বাগতিকরা। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন টম লাথাম। এছাড়া ইয়ং, কনওয়েও এগিয়েছেন দারুণভাবে।

বাংলাদেশের বোলিংয়ে কোনো ধার নেই। নেই লাইন ও লেন্থ। এলোমেলো বোলিংয়ে বেহিসেবী রান দিচ্ছেন তিন পেসার। দ্বিতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ২৯ ওভার। নিউ জিল্যান্ড নিয়েছে ১১০ রান। বাংলাদেশ একটি উইকেট পেলেও স্বাগতিকদের নামেই লিখা থাকবে সেশনটি। লাথাম ১১৮, কনওয়ে ২৮ রানে বিরতিতে গিয়েছেন। 

লাথামের দ্যুতি ছড়ানো সেঞ্চুরি 

হেগলি ওভালের ঘরের ছেলে টম লাথাম। তার যে কোনো অর্জন স্থানীয়দের জন্য পরম পাওয়া। তাইতো লাথাম সেঞ্চুরিতে পৌঁছতেই হেগলি ওভালে আনন্দের বন্যা।

মিরাজের বল অন সাইডে পাঠিয়ে ৯৯ থেকে শতরানে পৌঁছান লাথাম। ওই বলের আগে মাঠের একপাশ থেকে লাথাম লাথাম চিৎকার আসছিল। লাথাম সেঞ্চুরিতে পৌঁছার পর মাঠের সকল দর্শক দাঁড়িয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৩৩ বলে ১৭ চারে সাজান সেঞ্চুরির ইনিংসটি।  

অবশেষে মিলল সাফল্য

দীর্ঘ অপেক্ষার পর বল হাতে সাফল্য পেল বাংলাদেশ। পেসার শরিফুল ভাঙলেন নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। ইয়ংকে পয়েন্টে অভিষিক্ত নাঈম শেখের হাতে তালুবন্দি করিয়ে সাজঘরে পাঠান শরিফুল। ১১৪ বলে ৫৪ রান করে ডানহাতি ওপেনার আউট হন। শরিফুলের লাফিয়ে উঠা পয়েন্ট দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন ইয়ং। টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বল যায় সোজা নাঈমের হাতে। ১৪৮ রানে ভাঙল স্বাগতিকদের ওপেনিং জুটি। 

২০১২ সালের পর…

নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে উদ্বোধনী জুটিতে শতরান বেশ বিরল। টম লাথাম ও ইয়ং ক্রাইস্টচার্চে সেই কাজটা করলেন চোখের পলকে। কোনো জড়তা ছাড়াই দারুণ ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে শতরান তুলে নেন। প্রথম সেশনে ৯২ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই পৌঁছে যান সেঞ্চুরির মাইলফলকে। সব মিলিয়ে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এটি ১৫তম উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের রেকর্ড। এর আগে সবশেষ ২০১২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গাপটিল ও ম্যাককালাম এমন কিছু করেছিলেন। 

বাংলাদেশের এলোমেলো বোলিং, নিউ জিল্যান্ডের দাপুটে ব্যাটিং

প্রথম ঘণ্টায় সতর্ক ব্যাটিং করলেও দ্বিতীয় ঘণ্টায় দাপট দেখাল নিউ জিল্যান্ড। তাতে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিল স্বাগতিকরা। বিশেষ করে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে শেষ ৩০ মিনিট ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেছেন টম লাথাম। ২০ থেকে ২৫ ওভার, প্রতি ওভারে একটি করে বাউন্ডারি হজম করেছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে নিউ জিল্যান্ড ২৫ ওভারে ৯২ রান তুলেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে। রান রেট ৩.৬৮। লাথাম ৮৩ বলে করেছেন ৬৬ রান। হাঁকিয়েছেন ১২ বাউন্ডারি। ইয়ংয়ের রান ৬৭ বলে ২৬।

টস জিতে বোলিং করতে নেমে শুরুতে ভালো বল করেছিল বাংলাদেশ। পেসারদের লাইন ও লেন্থ ঠিক ছিল। আক্রমণও চালাচ্ছিলেন বারবার। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে তারা তত বিবর্ণ হয়েছেন। এলোমেলো বোলিংয়ে অনায়েসে রান দিয়েছেন। নূন্যতম সুযোগ তৈরি করতে পারেননি।

নিউ জিল্যান্ডের সতর্ক শুরু

নতুন বলে প্রথম ঘণ্টা বেশ ভালোভাবে কাটাল নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলিং নিয়ন্ত্রিত থাকলেও আলগা বোলিং ছিল। সেগুলো বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তুলেছেন দুই ওপেনার লাথাম ও ইয়ং। সতর্ক হয়ে এগোচ্ছেন কিউই অধিনায়ক লাথম ও ইয়ং। পানি পানের বিরতির আগে ১২ ওভারের খেলায় তারা যোগ করেছেন ৩৪ রান।

ইবাদতের নাটকীয় ওভার

তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম শুরুর ৮ ওভারে খুব একটা ধারালো ছিলেন না। মুমিনুল নবম ওভারে বোলিংয়ে আনেন প্রথম টেস্টের নায়ক ইবাদতকে। ডানহাতি পেসারের শুরুটা একবারেই হতশ্রী। ডাউন দ্য উইকেট থেকে প্রথম বলই হাফ ভলি। কাট করে বল সীমানায় পাঠান লাথাম। 

দ্বিতীয় বল ভেতরে ঢুকিয়েছিলেন ইবাদত। বল আঘাত করে লাথামের থাই প্যাডে। এবার জোরালো আবেদন বাংলাদেশের। আম্পায়ার আঙুলও তুলে দেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লাথাম। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেত। পঞ্চম বলে আবার একই কাণ্ড। এবারও ইবাদতের আবেদনে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাস্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। দুইবার অনফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেঁচে গেলেন লাথাম।

মুশফিককে ছাড়া টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বেশিরভাগ সময়ই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় টস। এজন্য টস হয়ে উঠে এক্স ফ্যাক্টর। ভাগ্য নির্ধারণের টসে হাসলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। 

টস জিতে সবুজাভ উইকেটে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি মুমিনুলকে। বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হয়েছে দুই দলের দ্বিতীয় টেস্ট।

বাংলাদেশের একাদশে একটি পরিবর্তন অনুমিতই ছিল। প্রথম টেস্টে ফিল্ডিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়া মাহমুদুল হাসান জয় খেলতে পারছেন না। তার জায়গায় এসেছেন মোহাম্মদ নাঈম। বাংলাদেশের শততম টেস্ট খেলোয়াড় তিনি। এছাড়া শেষ মুহূর্তে গ্রোয়েনের ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন মুশফিকুর রহিম। তার জায়গায় দলে সুুযোগ পেয়েছেন কাজী নুরুল হাসান সোহান। নিউ জিল্যান্ড রাচিন রবিন্দ্রর পরিবর্তে নিয়েছে ডার্ল মিচেলকে। 

বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, কাজী নুরুল হাসান সোহান, লিটন দাশ, ইয়াসির আলী রাব্বী, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী। 

নিউ জিল্যান্ড একাদশ: টম লাথাম, উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, রস টেলর, হেনরি নোকলস, টম ব্লান্ডেল, ডার্ল মিচেল, ম্যাট হেনরি, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট। 

ইতিহাস গড়া জয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

নিউ জিল্যান্ডে প্রথমবার টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয়। বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী আরেকটি জয় পেতে। নিজেদের প্রক্রিয়াগুলো ঠিকমতো করতে পারলেই অধরা সিরিজ জয় সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন দাপটের সঙ্গে খেলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে অনায়েসে। ক্রাইস্টচার্চে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী তাসকিন আহমেদ, ‘এখন আমরা আশাবাদী। ওভারঅল সবার মানসিকতা ও প্রিপারেশন ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আমাদের সেরাটাই খেলবো, জয়ের জন্যই খেলবো।’

অতীত রেকর্ড সুখকর নয়

এই শহরে এর আগে বাংলাদেশ মাত্র একটি টেস্টই খেলেছে। একমাত্র টেস্ট ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেটে। সেটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি। প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ১৭৩ রান। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড করে ৩৫৪। জয়ের জন্য ১০৯ রানের লক্ষ্য নিউজিল্যান্ড খুব সহজেই পৌঁছে গিয়েছিল জিত রাভালের উইকেট হারিয়ে।

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়