‘বল দেখো এবং নিজের হাতকে বিশ্বাস করো’
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম
মোস্তাফিজের বলটা স্লটে পেয়েছিলেন। লং অন দিয়ে চোখের পলকেই সীমানার ওপারে। চট্টগ্রামের ট্রু উইকেটে ওমন শট আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা যায়। কিন্তু মিরপুরেও একই বোলারকে একই শট খেলতে বাড়তি কিছুর প্রয়োজন হয়। উইল জ্যাকসের রিস্টে জোর ছিল, সঙ্গে টাইমিং মিলিয়েছেন। ফলাফল একই, ছক্কা।
চট্টগ্রামে আরেক ম্যাচে তাসকিনকে জায়গায় দাঁড়িয়ে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়েছিলেন। পেস বোলারদের বিপক্ষে যতটা সাবলীল স্পিনারদের বিপক্ষে ততটাই আঁটসাঁট। সানজমুলকে পরপর দুই সুইপে ছক্কা হাঁকাতে যেন বিন্দুমাত্র কাপর্ণ্য নেই। আবার এগিয়ে এসে মঈন আলীকেও ছক্কা উড়াতে পায়ের দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন।
সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে প্রথমবার বিপিএল খেলতে আসা ইংলিশ ক্রিকেটার যেন পারফেক্ট প্যাকেজ। জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ব ক্রিকেটে পা রাখার আগেই পাওয়ার হিটিংয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। টি-টেন লিগে ২৫ বলে সেঞ্চুরি তুলে আলোচনায় এসেছিলেন। তাতে খুলে যায় বিপিএলের দরজা। বিপিএলে ৮ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৮০ রান করে এখন রয়েছেন সবার ওপরে।
রান করতে পটু জ্যাকস কথায় একদম স্বল্পভাষী। তবে সাজানো-গোছানো ও পরিপাটি। মুখোমুখি আড্ডায় রাইজিংবিডি তার ব্যাটিং রহস্য বের করার চেষ্টা করেছে। তার মুখেই শুনুন বাকিটা,
প্রথমবার বিপিএলে খেলছেন। কেমন উপভোগ করছেন?
উইল জ্যাকস: বাংলাদেশে কাটানো সময়গুলো আমি উপভোগ করছি। এখানে আমার প্রথম আসা এবং প্রথমবার বিপিএলে খেলছি। এটা আমার কাছে অবশ্যই নতুন কিছু। আসলে সবকিছু মিলিয়ে দারুণভাবে সময়গুলো উপভোগ করছি। আমার পারফরম্যান্স দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি পুরো টুর্নামেন্ট এভাবে উপভোগ করব।
রান পাচ্ছেন বলেই নিশ্চয়ই সময়গুলো ভালো যাচ্ছে?
উইল জ্যাকস: তা তো অবশ্যই। ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি সব সময়ই চাইবেন রান করতে। তবে দল জিতলে অবশ্যই আনন্দটা দ্বিগুন হতো। আপনার পারফরম্যান্স যদি দলের কাজে না লাগে তাহলে মূল্য অনেকটাই কমে যায়। আমাদের সুযোগ আছে ভালো করার। সামনে সেদিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।
প্রথমেই শুনতে চাইব টি-টেন লিগে আপনার ২৫ বলে সেঞ্চুরির গল্প। এত অল্প সময়ে সেঞ্চুরি পাওয়া চাট্টেখানি কথা না, আপনার মনে তখন কি চলছিল?
উইল জ্যাকস: আসলে বলতে গেলে এটা অবিশ্বাস্য। সবকিছু আধঘণ্টার মধ্যে ঘটে গেল। অবশ্যই এটা নিয়ে এতবেশি কিছু বলার আছে বলে আমি চিন্তা করি না। আমি যেটা করেছি সেটা হলো, প্রতিটি বল সরাসরি মারতে চেয়েছি, প্রতিটি বল মাঠের বাইরে ফেলতে চেয়েছি। যখন আমি ওই জায়গায় (সেঞ্চুরি) পৌঁছে গেলাম তখন মনে হলে বড় কিছু হয়ে গেছে।
আপনি বলেছেন, প্রতি বলই মারতে চেয়েছেন। এভাবে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য কোন বিষয়গুলো মেনে চলেন?
উইল জ্যাকস: আমি মনে করি পাওয়ার হিটিংয়ে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, নিজের পজিশন নিশ্চিত করা, স্টান্স ঠিক রাখা। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বল দেখতে হবে, নিজের হাতকে বিশ্বাস করতে হবে। পাওয়ার হিটিংয়ে কিছু সমস্যাও আছে, যদি মাথা নড়তে থাকে (মুভ করা) এবং যদি নিজের পজিশন ঠিকঠাক ভাবে না থাকে। তখন আপনি চাইলেও পারবেন না।
এজন্য কি ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের প্রয়োজন নেই? আপনার ব্যাটিয়ে যেটা দেখা গেল, আপনি খুব জোর দেন না। ক্রিকেটীয় শট খেলছেন। তাতে রান পাচ্ছেন। স্পিনারদের বিপক্ষে সুইপ খেলছেন যেটা খুব কার্যকরী?
উইল জ্যাকস: এটা সম্পূর্ণ অভ্যাসের বিষয়। আপনি কিছু শট ক্রিকেটীয় ব্যকরণ দিয়ে খেলবেন। কিছু আপনাকে খেলতে হবে শরীরের জোরে। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট পরিবর্তন হয়েছে। এখন ভালো বলগুলোকেও শাসন করতে হবে। খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে খেলা শেষ হয়ে যাবে।
শট খেলতে গেলে বাড়তি ঝুঁকি নিতেই হয়। সেক্ষেত্রে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। স্ট্রাইক রেট ও ব্যাটিং কোনদিকে আপনার নজর থাকে?
উইল জ্যাকস: আমার গড় ২৫ এর বেশি। আমি ধারাবাহিকভাবে আরও বেশি রান করার চেষ্টা করব। আমি চাই গড় ২৭-২৮ এর বেশি হোক। আমার স্ট্রাইক রেট ১৫৫ এর মতো। যেটি অবিশ্বাস্যভাবে অনেক উঁচু। গড় ২৫ এবং স্ট্রাইকরেট এতবেশি (১৫৫) এরকম অনেক ক্রিকেটারের নেই। আমি মনে করি যখন স্ট্রাইকরেটের দিকে নজর দেয় তখন গড় একটু কমে যায়। এটা এমন একটা বিষয় যেটা আমি আরও বেশি উপরে নিতে ভালোবাসব।
ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে আপনার সরব উপস্থিতি। এদিকেই কি মনোযোগী থাকবেন নাকি ভিন্ন ফরম্যাট নিয়েও চিন্তা আছে?
উইল জ্যাকস: অবশ্যই আমি তিন সংস্করণে খেলতে চাই। যদিও এই সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমার সেরা সময় যাচ্ছে। গত বছর থেকে লাল বলে আমি উন্নতির চেষ্টা করছি। কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। বিপিএল খেলার পর এখান থেকে ফিরে বড় দৈর্ঘর ক্রিকেট নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করবো, আরও উন্নতির চেষ্টা করবো।
আপনি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে খেলছেন। কার মধ্যে এরকম সম্ভাবনা দেখেছেন, যে চাইলেই মারতে পারে?
উইল জ্যাকস: এখানে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ক্রিকেটার রয়েছে। যারা আসলেই পাওয়ার হিটার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে একজন আছে যার কথা বলতে পারি, সে আমাদের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম। নেটে সে কঠোর পরিশ্রম করে নিজের টেকনিক নিয়ে। ম্যাচের শেষ দিকে আসে এবং দ্রুত ৬ মারতে পারে। আমি তার চেষ্টা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
তরুণ কাউকে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে হলে কি উপদেশ দেবেন?
উইল জ্যাকস: আমি এর আগেও যেটা বলেছি সেটা এখানেও বলবো। পাওয়ার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার একটা শক্ত ভিত (পজিশনের ক্ষেত্রে) থাকতে হবে। নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বল বুঝে পাওয়ার হিটিং করতে হবে। এতোটুকুই।
ঢাকা/ইয়াসিন