ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাবার স্বপ্ন পূরণের জেদ নির্ভীক মুনিমের

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
বাবার স্বপ্ন পূরণের জেদ নির্ভীক মুনিমের

সাকিব আল হাসানের চোখে তিনি এবারের বিপিএলের আবিষ্কার। খালেদ মাহমুদের মতে, তার মতো নির্ভীক ক্রিকেটার কমই আছে। দেশের ক্রিকেটের দুই ধ্রুবতারার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন সেবা দিবেন এই ক্রিকেটার।

তাদের প্রশংসা পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ময়মনসিংহের নয়াপাড়া থেকে উঠে আসা তরুণ সেটা আদায় করে নিয়েছেন ২২ গজে ধ্রুপদী পারফরম্যান্স করে। ক্রিস গেইলকে একপ্রান্তে দর্শক বানিয়ে অপরপ্রান্তে বোলারদের ছন্নছাড়া করার কাজটা ফরচুন বরিশালের জার্সিতে নিয়মিত করে আসছেন মুনিম।

বিপিএলের শুরুতে কয়েক ম্যাচ খেলতে পারেননি কোভিডের কারণে। ফিরে এসে শুরুটা মনমতো হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচেই মুনিম যেন চেনা ছন্দে। নির্ভীক, আগ্রাসন, নিখুঁত টাইমিং, প্লেসমেন্ট, আত্মবিশ্বাস আর বোলারদের মনোবল ও পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার অনন্য গুণ তার ব্যাটিংয়ে।    

২২ গজে এমন অকুতোভয় সৈনিক বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন মিরাজ, সাইফউদ্দিনদের সঙ্গে। কিন্তু তেমন আলো ছড়াতে না পারায় আড়ালে থাকতে হয় তাকে। আউটপুট না আসায় খেলা ছাড়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু তার কাঁধে হাত রেখে সাহস জুগিয়ে যান খালেদ মাহমুদ। ডানহাতি ওপেনার গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পুনরায় নিজেকে ফিরে পান। খালেদ মাহমুদের দল আবাহনীর হয়ে মাঠ মাতান।

এবারের বিপিএলেও খালেদ মাহমুদের তাঁবুতে মুনিম। তাই তো তার পারফরম্যান্স এক জিতে যাওয়া সৈনিকের মতোই। ৫ ম্যাচে ১৭৮ রান করেছেন। অবিশ্বাস্য তার স্ট্রাইক রেট- ১৬১.৮১। পাওয়ার প্লে কতটা সুন্দর করে কাজে লাগাতে হয় তা দাপট দেখিয়ে করেছেন। শরীরে অসম্ভব জোর না থাকলেও কীভাবে সীমানা পার করতে হয় তা ভালোভাবে জানা মুনিমের। হতাশার গল্প দিয়ে আলাপচারিতা শুরু করলেও তার ক্যারিয়ারে এক চিলতে সূর্যের আলো দেখা দিয়েছে সেজন্য যারপরনাই খুশি মুনিম।

তিনি বললেন, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার পর খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। পরপর দুই বছর স্ট্যান্ডবাই ছিলাম, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে। ময়মনসিংহে প্রিমিয়ার লিগও ধারাবাহিক হচ্ছিল না। তাতে আমার খেলার পরিসরও কমে যাচ্ছিল। ঢাকা লিগে দল পেলেও কখনো সুযোগ পেতাম কখনো পেতাম না। সব মিলিয়ে আমি নিজেও হতাশ ছিলাম।’

অবশেষে দেখা দিলো আশার আলো, ‘সবশেষ ঢাকা লিগে আমি আবার ট্র্যাকে ফিরি। সুজন ভাই আমাকে সুযোগ দিলেন। মুশফিক ভাই, শান্ত ভাই আমাকে নতুন করে শুরু করতে বললেন। আমিও তাদের অনুপ্রেরণায় আশা দেখা শুরু করলাম। কয়েকটি ম্যাচে ভালো করার পর বুঝলাম ক্রিকেটেই আমার ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।’

তবে বিপিএলে শুরুতে দল না পেয়ে হতাশ হয়েছিলেন মুনিম। প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছয় দলের কেউ তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। ড্রাফটের পর খালেদ মাহমুদ তাকে দলে নেন। কিন্তু মাঠে খেলা গড়াতেই তার ভাগ্য আকাশে কালো মেঘ। কোভিড হানায় সপ্তাহখানেক পিছিয়ে যান। ওই সময়ে বরিশাল উদ্বোধনী জুটিতেও ভুগছিল। ফিরে এসে খালেদ মাহমুদের অনুপ্রেরণায় পাল্টে যায় তার ভাবনা। 

মুনিম বললেন সেই কথা, ‘সুজন স্যার আমার খেলা ঢাকা লিগে দেখেছিলেন। উনি আমাকে শুরুতেই বলেছিলেন, ‘৪-৫টা ম্যাচে সুযোগ পাবি। সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। ভয়ডরহীন খেলবি। বল দেখবি আর খেলবি। বিপিএল খেলছিস নাকি ঢাকা লিগ, সেসব মাথায় নেওয়ার কোনো কারণই নেই।’ শুরুটা খারাপ হওয়ার পর আমি নিয়মিত পাওয়ার প্লেতে রান পেয়েছি। আমার যা ভূমিকা, দায়িত্ব ছিল সেগুলো ঠিকঠাক মতো পালন করেছি। তাতে দল সাফল্য পাচ্ছে। আমিও খুশি।’ 

মুনিমের পছন্দের মানুষ সাকিব। খালেদ মাহমুদ তার চোখে ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মানুষ। দুজনের কাছ থেকে যে প্রশংসা পেয়েছেন এজন্য দারুণ খুশি এই ওপেনার, ‘সাকিব ভাইয়ের মতো একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন প্রশংসা পাওয়া আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। এখনো নিজেকে এতটা বড় মনে করছি না, সহজাত খেলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যা অর্জন করেছি এগুলো কিছুই না। সুজন স্যারের কারণেই এখানে আসা। আমি ভালো করলে সবচেয়ে বেশি খুশি উনিই হন। এজন্য আমার কাছেও ভালো লাগে।’

ক্রিস গেইলের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সময় উপভোগ্য বলে দাবি করলেন মুনিম, ‘গেইল অন্যরকম এক চরিত্র। একটা চার বা ছক্কা হলে হাত মেলাতে এসে টুকটাক যা কথা হয়… খুবই স্বাভাবিক থাকতে বলেন। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে বলেন। ক্রিজে পুরো সময়টা উপভোগ করতে বলেন। কথা খুব বেশি বলতে পছন্দ করেন না।’

বলের পেস কাজে লাগিয়ে টাইমিংয়ে চার-ছক্কা মারতে পছন্দ করেন মুনিম। স্পিনারদের বিপক্ষে জায়গা করে শট খেলতে পছন্দ করেন মিড উইকেট ও ফাইন লেগ দিয়ে। আর সুইপে তার হাতেখড়ি অনেক আগের থেকেই। বিগ হিটিংয়ের জন্য কব্জিতে জোর থাকতে হয়। ডানহাতি ব্যাটসম্যান সেদিকেই তালিম নিচ্ছেন নিয়মিত।

দেশের জার্সিতে মাঠে নামার স্বপ্ন থাকে প্রতিটি ক্রিকেটারেরই। মুনিমের মধ্যে সেই স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিলেন বাবা। নিজের আগ্রহে ছেলেকে নিয়ে গেছেন মাঠে। অনুশীলন করিয়েছেন, ক্রিকেট বুঝিয়েছেন। বাবার জন্য হলেও মুনিম গায়ে জড়াতে চান দেশের জার্সি। তবে একদিন-দুদিন বা এক-দুই সিরিজের জন্য নয়। ময়মনসিংহের তরুণ থিতু হতে চান লম্বা সময়ের জন্য।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়