ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাকিবের না থাকা বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে: ক্লুজনার

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২১, ৯ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১১:৫০, ৯ আগস্ট ২০২২
সাকিবের না থাকা বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে: ক্লুজনার

বাংলাদেশের সিরিজ হার নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন জিম্বাবুয়ের ব‌্যাটিং কোচ ল‌্যান্স ক্লুজনার

ক্রিকেট বিশ্বে জুলু নামে পরিচিত তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সফল অলরাউন্ডার ছিলেন। আগ্রাসী ব্যাটিং, নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং; তিনে মিলে দারুণ এক প্যাকেজ। বলা হচ্ছে, ল্যান্স ক্লুজনারের কথা।

তিন মাস হলো জিম্বাবুয়ের ব‌্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন এই প্রোটিয়া। দায়িত্ব নিয়ে দলের খোলনলচে পাল্টে দিয়েছেন। আগ্রাসী ব‌্যাটিংয়ের যে পতাকা ক্লুজনার উড়িয়েছেন সবসময় সেই ছাপ দেখা যাচ্ছে ২২ গজে। 

আরো পড়ুন:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। দলের সাফল্যের রহস্য কি? রাইজিংবিডিকে দেয়া একান্তা সাক্ষাৎকারে ক্লুজনার কথার ঝাঁপি খুলে দেন। পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো,

সিরিজ জয়ে অভিনন্দন। হারারের দিনকাল কেমন যাচ্ছে?

ক্লুজনার: ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ। খুব ভালো চলছে। এখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। সবকিছুই বেশ ভালো এবং আমি সময়টা উপভোগ করছি।

সময় তো ভালো যাবার-ই কথা। টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজও জয়। দীর্ঘদিন পর এমন সাফল‌্য কিভাবে দেখছেন?

ক্লুজনার: অবশ্যই এটা আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্যও দারুণ জয় (সিরিজ) । দীর্ঘ সময় পর তারা এমন কিছু করল। জয়ের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনাটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বকাপ (টি-টোয়েন্টি) বাছাই পর্ব নিশ্চিতের পর পরপর দুটি সিরিজ জয়…জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য দুর্দান্ত অর্জন। দেশের জন্য ভালো বিষয়। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়াটাও স্বস্তিকর ও দারুণ কিছু।

তিন মাস হলো কাজ করছেন। ব‌্যাটসম‌্যানদের অ‌্যাপ্রোচের পরিবর্তন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কোথায় কাজ করেছেন খুলে বলবেন?

ক্লুজনার: আমরা শুধু চেয়েছি খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরার সুযোগটা যেন পায় এবং আমরা কোচরা এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি যে, আমরা তাদেরকে ধারাবাহিক সমর্থন করবো। তাদেরকে খোলা মনে খেলার অনুমতি দিয়েছি যাতে করে বিশ্বকে দেখাতে পারে, আসলে তারা কতটা ভালো। খারাপ শট খেলা কিংবা অন্যভাবে আউট হলেও তাদেরকে দুশ্চিন্তা করতে দেয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছি। নিশ্চিত করতে চেয়েছি তারা যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটা যেন স্মার্ট হয়।

ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা পরিবর্তনের টোটকা কি ছিল…

ক্লুজনার: জিম্বাবুয়েতে অনেক প্রতিভা রয়েছে। এখানে আমাদের কোচদের দায়িত্বটা হচ্ছে সেই প্রতিভার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি এবং অনুমতি দিয়েছি যে, তারা যেন ভেতরে থাকা প্রতিভা ও নিজের সামর্থ‌্য অনুযায়ী খেলতে পারে। ব্যর্থতার কথা না ভেবে বা ভয় না পেয়ে তাদেরকে আক্রমণাত্মক এবং ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার অনুমতি দিয়েছি।

টি-টোয়েন্টিতে দুই ফিফটি, ওয়ানডেতে দুই ম্যাচ উইনিং সেঞ্চুরি, সিকান্দার রাজাকে কিভাবে রেট করবেন?

ক্লুজনার: সে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিপক্ক এবং নিজের খেলাটা বুঝে। নিজের কাঁধে দায়িত্ব নেয়া শুরু করেছে। দলের যা প্রয়োজন সে এখন সেটাই করছে। আমার মনে হয় সে এখন অনেক পরিপক্ক। তার দায়িত্বটা পরিস্কার করে বলে দিয়েছি এবং তার কাছে কি প্রত্যাশা করি সেটাও তাকে জানিয়েছি।

তার ব্যর্থ হওয়ার ভয় নেই। আমরা সেটা নিয়েই কাজ করেছি। তাকে এটা বলে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছি যে, সে যদি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকে তাহলে আমাদের ম্যাচ জেতার সুযোগ থাকবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হয়তো সে ১৭-১৮ ওভারে আউট হয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন যে, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে কখনও যদি ৪৫তম ওভারে আউট হয়ে যান তাহলে শেষ দিকে রানটা ক্যাপিটালাইজ করতে পারবেন না। এই জিনিসটা নিয়ে আমরা প্রচুর কথা বলেছি। দেখতে ভালো লাগছে যে, সে এখন নটআউট থাকছে। সে তার লক্ষ‌্যে পৌঁছতে পারছে।

পাওয়ার হিটিংয়েও ব‌্যাটসম‌্যানদের বেশ দক্ষ দেখা যাচ্ছে…

ক্লুজনার: আপনি যে কেউ হন না কেন সবসময় চার-ছক্কা মারতে চাইবেন। কিন্তু একজন ব্যাটিং কোচ হিসেবে আমার কাজটা হচ্ছে তাকে শেখানো কিভাবে চার-ছক্কা মারতে হবে। তাদেরকে খেলাটা শতভাগ বুঝতে হবে। আমরা এটা নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি এবং কঠিন পরিশ্রম করেছি। আমরা ইতিবাচক ছিলাম এবং তাদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছি তারা যেন চার-ছক্কা মারতে পারে। 

তারা কিভাবে খেলাটা শতভাগ পড়তে পারে এবং জেতার জন্য আক্রমণাত্মক হতে পারে সেসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পাওয়ার হিটিং এমন জিনিস না যে, আপনি প্রতি বলে চার-ছক্কা মারার জন্য হিট করলেন। এটা এমন একটা জিনিস যে, আপনাকে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে হবে এবং বোলার টার্গেট করতে হবে। চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করাই সবকিছু নয়। এখানে অনেক কিছুরই সমন্বয় রয়েছে।

এবার একটু বাংলাদেশের কথা বলি। টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজও হার। কোথায় হারল বাংলাদেশ?

ক্লুজনার: আমার কাছে মনে হয় তাদের ফিল্ডিংটা ঠিকঠাক হয়নি। বেশ কয়েকটা ম্যাচেই এমন হয়েছে। তারা বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছে। প্রথম ওয়ানডেতে তারা তিনশর কাছে (৩০৩ রান)করেছিল, খুবই ভালো স্কোর। তাদের আরও আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত ছিল। বিশেষ করে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা পর্যায়ে আরও বাউন্ডারি মারা উচিত ছিল কিংবা তেমন কিছু করা প্রয়োজন ছিল। এটা তারা আরও ভালো করতে পারতো। পরের ম‌্যাচে ২৯০, এটা একেবারে খারাপ কিছু নয়। তবে রাজার মতো কেউ দারুণভাবে চেষ্টা করলে এবং মাঝের দিকে দুই ম‌্যাচে দুটি ইনিংস আসলে পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।

সিরিজের আগে সিরিজ জিতবেন ভেবেছিলেন কি না?

ক্লুজনার: না, আমি একেবারেই ভাবিনি। তবে এটা জানতাম যে, আমরা যদি আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে একটা ভালো সুযোগ থাকবে এবং আমরা এটা করেছি। সত্যি বলতে, আমরা আসলেই অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের দারুণ ব্যাটিং হয়েছে এবং আঁটসাঁট বোলিং করেছি। এমন সময় আপনি ম্যাচ কিংবা সিরিজ জেতার সুযোগ অপচয় করতে চাইবেন না।

প্রশ্নটা একটু কঠিন তবুও আপনার মূন্তব‌্য শুনতে চাই। সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ দল কি গড়পড়তা?

ক্লুজনার: সাকিব একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শুধু বাংলাদেশ নয় সবাই তাকে খেলাতে চাইবে। অবশ্যই, তারা তার অভিজ্ঞতা মিস করেছে। সে বড় একটা ফ্যাক্টর। আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে ইনজুরির কারণে আমরা ৮ জন ক্রিকেটারকে পাইনি। আমরা মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে চেয়েছি। যেটা বললাম আমরা ৮ জন ক্রিকেটারকে পাইনি। আমরাও আমাদের নিয়মিত দলটা মিস করেছি। এখানে ওদের সুযোগ ছিল। তবে সাকিবের না থাকা আমাদের বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

আপনি বিপিএলে কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ক্রিকেটারদের জানাশোনা আছে। দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছেন কি না?

ক্লুজনার: হ্যাঁ, বিপিএলের কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খুব ভালো করে চেনার সুযোগ হয়েছিল। আপনি যেটা বললেন হ্যাঁ (বিপিএলের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দুর্বলতা কাজে লাগানো) । তবে আমি আসলে আমাদের কাজ নিয়ে বেশি মনোযোগ দিতে পছন্দ করি। আমরা কি করতে পারি কিংবা আমরা কি অর্জন করতে পারি সেটা নিয়েই কাজ করতে ভালো লাগে। প্রতিপক্ষকে জানাটা ভালো ব্যাপার। দিনশেষে ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি বল দেখবেন এবং খেলবেন।

বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার বলেছেন, তাদের শরীর পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য মানানসই না, আপনি কি একমত?

ক্লুজনার: আমার মনে হয় না এটা সত্য। পাওয়ার হিটিং জিনিসটা এমন নয় যে, আপনি লং অন এবং লং অফ দিয়ে ছক্কা মারলেন। একটা ভালো সুইপও ভালো পাওয়ার হিটিংয়ের অংশ। যারা চার-ছক্কা মারে তারাই পাওয়ার হিটার বা শক্তিশালী এমনটা নয়। তামিমও একজন শক্তিশালী ক্রিকেটার। একই সঙ্গে ছোট শরীরের একজনও ভালো করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা মুশফিকের নাম বলতে পারি। আপনি অনুশীলন করলে এটা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনি বলের গতি কাজে লাগিয়ে ছক্কা মারতে পারেন। পাওয়ার হিটিং একেবারে কঠিন কিছু নয়। সব ব্যাটারই আলাদা। কেউ খুবই শক্তিশালী যারা সাইটস্ক্রিনের ওপর দিয়ে বড় শট খেলতে পারে। কিন্তু আপনি ছোট ছক্কা মারলেও এটা ছক্কা হিসেবেই ধরা হবে।

তাহলে কি বাংলাদেশের ব‌্যাটসম‌্যানদের মানসিকতায় সমস্যা আছে?

ক্লুজনার: আমার মনে হয় এটা বাংলাদেশের অনেক দিনের সমস্যা। বাউন্ডারি মারার সমস্যা আছে, বিশেষ করে ইনিংসের শেষ দিকে। সম্ভবত এটা তাদের দেখভাল করা উচিত এবং সময় কাটানো ও ক্যাম্প করা উচিত। এটা নিশ্চিত করা দরকার যে তারা এটাতে মনোনিবেশ করছে। এই ইস্যুটা দীর্ঘ সময়ের।

টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে টানা ব্যর্থতা। উন্নতি না হওয়ার কারণ?

ক্লুজনার: আসলে বাংলাদেশ কোনো সিরিজে কিংবা দুই-এক বছর ভালো খেলে ইতিহাস গড়ে। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারছে না। বাংলাদেশে অবশ্যই অনেক ভালো প্রতিভা আছে। সক্ষমতা রয়েছে, আমার মনে হয় তাদের চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে ধারাবাহিক হওয়া।

ক্রিকেটারদের কোনদিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিৎ? বা মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কি করা উচিৎ বলে মনে করেন?

ক্লুজনার: বাংলাদেশ এখন অনেক ক্রিকেট খেলে। লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশ অন দ্য রোডে আছে। সেই রোডে থাকার কারণে আমার মনে হয় সেখানে কিছুটা ক্লান্তি রয়েছে। সেটা মনে হয় তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে। ক্লান্তির কারণে তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারছে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দল, কারণ তারা এখন প্রচুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। আসলে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। সব দলেরই এই চ্যালেঞ্জটা থাকে। মানসিকভাবে ক্লান্তি হয়ে পড়লে অনেক সময় ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে।

দীর্ঘদিন জিম্বাবুয়ে ফোকাসে ছিল না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে আলোচনায় আসলো। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি সিরিজ জয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট কি সঠিক পথে এগোচ্ছে?

ক্লুজনার: আসলে এখানে আরও অনেক কাজ করার রয়েছে। তারা এখন সঠিক পথে রয়েছে। কারণ এখন অনেক ঘরোয়া ক্রিকেট হচ্ছে, জাতীয় দল ধারাবিহক এবং অনেক ব্যাকআপ ক্রিকেটার রয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। তারা এটার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রচুর পরিশ্রম করছে। এটা খুব ভালো জিনিস। আমি বিশ্বাস করি, ভালো কোচিংয়ের মাধ্যমে, ভালো ম্যানেজমেন্ট এবং স্থানীয় ফিক্সচারের মাধ্যমে উন্নতি হবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়