ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রেকর্ডময় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হৃদয়

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৫, ১৮ মার্চ ২০২৩  
রেকর্ডময় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হৃদয়

পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচে জহির খানকে এগিয়ে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে তামিম ইকবাল যদি নিজেকে চিনিয়ে থাকেন, ঠিক ষোলো বছর পর তামিমের হাত ধরে এমন এক ব্যাটসম্যানকে পেল বাংলাদেশ যিনি কি না বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে বিন্দুমাত্র ভয় করেন না।

সেটা প্রথম বল থেকে হলেও আপত্তি নেই তার, ‘অনুশীলন থেকে শুরু করে সবখানে চেষ্টা করি এই মানসিকতা (প্রথম বল থেকে শট খেলার) দেখানোর। সেটাই কাজে দিয়েছে।’

গ্রাহাম হুমকে ফ্ল‌্যাট বাটেড শটে তৌহিদ হৃদয় যে ছক্কাটা মেরেছিলেন ৩৮তম ওভারের শেষ বলে তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নতুনের জয়গানে এই বাংলাদেশ ভয়ডরহীন, নির্ভীক ও অকুতোভয়।

বাংলাদেশের ১৪০তম ক্রিকেটার হিসেবে সিলেটে পথ চলা শুরু হলো তৌহিদ হৃদয়ের। যিনি প্রথম ম্যাচেই ৯২ রানের ইনিংস খেলে হৃদয় জিতে নিয়েছেন। সঙ্গে দিয়েছেন নিজের আগমনী বার্তা।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তার আগ্রাসী ৯২ ও সাকিবের ৯৩ রানের সুবাদে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৩৮ রান তুলে নেয়। জবাবে আয়ারল্যান্ডকে মাত্র ১৫৫ রানে আটকে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয় তুলে নেয়। ১৮৩ রানের বিশাল জয় বলে দেয় এই ফরম্যাটে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে বাংলাদেশ।

আজ দিনটা ছিল স্রেফ রেকর্ডময়। দলীয় সর্বোচ্চ রান পাওয়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় জয়। একই সঙ্গে সাকিবের ৭ হাজার রানের মাইলফলক পেরুনো, অভিষেকে হৃদয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের সঙ্গে এক ম্যাচে মুশফিকের সর্বোচ্চ ৫ ক্যাচ নেওয়ার পুরনো রেকর্ড ছোঁয়া...সব হয়েছে নয়নাভিরাম সিলেটের ২২ গজে।

টস হেরে বাংলাদেশ ব‌্যাটিংয়ে নেমে বড় কিছুর আভাস দিতে পারেননি। ৮১ রান তুলতেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে। তামিম বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ৩ রানে। লিটন এলোমেলো শটে ২৬ রানে আউট। শান্তও হেলায় ভাসান নিজের উইকেট। আউট ২৫ রানে।

সেখান থেকে হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে সাকিবের লড়াই শুরু। ৭ হাজার রান থেকে ২৪ রান দূরে থেকে নিজের ইনিংস শুরু করেছিলেন সাকিব। ৩৩ বলে পেরিয়ে যান মাইলফলক। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়া। হৃদয়ও তাকে দারুণ সঙ্গ দেন। দুজনের ফিয়ারলেস ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিরোধের পর প্রতি আক্রমণ চালায়। তাতে বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের পথে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু দলের রান যত বাড়তে থাকে তত বাড়তে থাকে আফসোস।

২৫ ইনিংস পর সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা সাকিব ৭ রান আগে আউট হন। ৯৩ রানে আউট হন হুমের বলে। হৃদয় আটকে যান ৯২ রানে। ডানহাতি পেসারের বলে বোল্ড হন। এই দুজন ১৩৫ রানের জুটি গড়েন যা ১০ ম্যাচ পর মিডল অর্ডারে শতরানের জুটি। দুজনের ব‌্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটে এসে আক্রমণ চালান মুশফিক। ৬ বছর পর প্রথমবার ছয়ে নেমে ২৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৪ রান করেন। শেষ দিকে ইয়াসির, তাসকিন ও নাসুমের অবদানে বাংলাদেশের রান চলে যায় চূড়ায়।

লক্ষ্য বড় ছিল। আয়ারল্যান্ডের শুরুটাও ছিল ভালো। উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান পেয়ে যান অতিথিরা। সেখান থেকে হঠাৎ ছন্দপতন। এমনই হাল যে ১৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় তারা। এরপর আর ফিরে আসতে পারেনি। সাতে নামা ডর্করেলের ৪৫ রান কেবল পরাজয়ের ব‌্যবধান কমিয়েছে মাত্র। বল হাতে বাংলাদেশের সেরা ৪২ রানে ৪ উইকেট নেওয়া ইবাদত হোসেন। এছাড়া ৩ উইকেট নেন নাসুম আহমেদ।

রেকর্ডময় দিনে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক নবাগত তৌহিদ হৃদয়। তার হাতে আলোর মশাল। সামনে কতটা এগোতে পারেন সেটাই দেখার।

ইয়াসিন/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়