ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যখনই ব্রেক থ্রু প্রয়োজন অধিনায়ক বলেন, ‘উইকেট নিয়ে দে’

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২৪ মে ২০২৩   আপডেট: ১০:০৯, ২৫ মে ২০২৩
যখনই ব্রেক থ্রু প্রয়োজন অধিনায়ক বলেন, ‘উইকেট নিয়ে দে’

নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের বধ করে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে গতির ঝড় তুলে এলোমেলো করে দিয়েছেন অভিজ্ঞ কিউই ব্যাটিং লাইন-আপ।

দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদতের সেই ৬ উইকেটের বদৌলতে প্রথমবারের মতো নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ হাসে জয়ের হাসি। ইবাদত পেয়েছেন উইজডেনের বর্ষসেরা টেস্ট স্পেলের পুরস্কার। এর ছয় মাস পর গায়ে জড়ান রঙিন জার্সি। দলের যখন ব্রেক থ্রু প্রয়োজন তখন ইবাদত হয়ে ওঠেন একমাত্র ভরসা। অধিনায়কের সেই আস্থার প্রমাণ দিয়ে ইবাদত মেলে ধরেছেন নিজেকে। এখন তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বোলার তিনি।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের পর এখন কাটছে অবসর সময়। এরপর জুন থেকে শুরু হবে ব্যস্ত সূচি। এই সময়ে ইবাদত রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, বোলিংসহ নানা বিষয় নিয়ে। পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

এখনতো খেলা নেই, অবসর সময়ে নিজেকেই ফিট রাখতে কি করেন?
ইবাদত:
আমার কোনো অবসর নেই। অবসর সময় কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। জিম, ওয়ার্কআউট এসব করে কাটছে সময়। আমার ট্রেনারের কাছ থেকে আফগানিস্তান সিরিজের যে প্রোগ্রাম সেটা নিয়ে নিয়েছি। সেই অনুযায়ী আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। ২২ মে থেকে মূলত এটা শুরু করেছি। স্ট্রেন্থ-রানিং এসব। ২৬ মে থেকে বোলিং শুরু করবো। ট্রেনারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছি। সামনে আফগানিস্তান টেস্ট আছে তার আগে আমাকে প্রস্তুত হতে হবে, ফিট হতে হবে।

অ্যাথলেটদের নানা দিক বিবেচনা করে জীবনযাপন করতে হয়। আপনার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন কি? বিশেষ কিছু করেন কি না প্রতিনিয়ত…
ইবাদত:
আমার ব্যক্তিগত কিছু কাজ আছে যেগুলো নিজেকেই ফিট রাখার জন্য আমি নিয়মিত করি। আসলে এগুলো আমার ব্যক্তিগত কাজ, আসলে বলতে চাচ্ছি না।

ব্রেক থ্রু এনে দিতে আপনি সিদ্ধহস্ত। যখন কোনো উইকেট পড়ে না, অধিনায়করা আপনাকে বোলিংয়ে আনেন, তাতে মেলে সাফল্য। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে দারুণ বোলিংয়ের জন্য কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন? 
ইবাদত:
ওয়ানডে অধিনায়ক আমার কাছে ফাস্ট এবং অ্যাগ্রেসিভ বোলিং চায়। এই মূল জিনিসটাই আমি অনুসরণ করি। আমার যে শক্তি, বলের গতি আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক রাখার চেষ্টা করি। ব্রেক থ্রু নিয়ে আমি স্পষ্ট করে যেটা বলতে চাই, আমার মূল কাজ হচ্ছে আমাদের ফাস্ট বোলিং ইউনিটকে প্রতিনিধিত্ব করা। যখন উইকেট প্রয়োজন অধিনায়ক আমাকে ভরসা করে বল দিচ্ছে, আমি উইকেট নিয়ে দিচ্ছি। ওয়ানডেতে আমার সবগুলো উইকেটই প্রায় এই সময়ে (ব্রেক থ্রু)। কঠিন কাজ যেটা আমি করতে ভালোবাসি, কখনো সফল হবো কখনো হবো না। আমি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে চাই, যখনি ব্রেক থ্রু দরকার অধিনায়ক আমাকে বলে ইবাদত উইকেট বের করে দে। এটা আমি করে যেতে চাই। 

বোলিং নিয়ে কি কাজ করছেন? আপনার সবচেয়ে প্রিয় ডেলিভারি কোনটা? 
ইবাদত:
সাদা বলে নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি, হার্ড লেন্থে বল করা, ইয়র্কার, বাউন্সার এসব নিয়ে। আর আমি ধারাবাহিকভাবে হার্ড লেন্থে বোলিং করতে পছন্দ করি। আমি সবসময় এটা করার চেষ্টা করি। সাদা বলে হার্ড লেন্থে বল করাটা হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটসম্যানকে হয়তো ঝুঁকি নিয়ে মারতে হবে অথবা ডিফেন্স করতে হবে। আর যখন বল দুই দিকেই নড়ে তখন ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছুটা ঝুঁকি তৈরি হয়।

আপনি তৃতীয় পেসার হিসেবে বেশিরভাগ শুরু করে থাকেন। কোন সময়টা বোলিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? 
ইবাদত:
নতুন বলটা দেখা যায়, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ অথবা শরিফুল ইসলাম শুরু করে। আমার কাছে আসে কিছুটা পরিবর্তনের (বল পুরোনো) পর। এটা মূলত দলের পরিকল্পনা। এমন না যে আমি নতুন বলে কিংবা ডেথ ওভারে বোলিং পারি না। আমি আমার সবধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। আমার জন্য নতুন বল, পুরোনো বল কোনো সমস্যা হয় না। আমি সবধরনের বলেই বোলিং করতে পারি। এটা মূলত দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওভারে দারুণ বোলিং করেছিলেন হাসান মাহমুদ। ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার ডেলিভারিতে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের পরাস্ত করেছেন। স্লোয়ার-কাটার এগুলো নিয়ে আপনার কি ভাবনা?
ইবাদত:
ডেথ ওভারে এরকম বলা হয়, চেঞ্জ অব পেস (গতির উঠানামা)। আমি লেগ কাটার, অফ কাটার দুটাই করি। হাসান মাহমুদের  ব্যাক অব হ্যান্ড ডেলিভারি খুবই ভালো, ও খুব ভালো পারে। আর আমার দেখা যাচ্ছে স্লোয়ার অফ কাটার, লেগ কাটার ভালো হয়। সবার একই দক্ষতা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।

ওয়ানডে অভিষেক আপনার দেরিতে হয়েছে। এরপর থেকেই আপনি নিয়মিত খেলছেন। আপনি কি মনে করেন সঠিক সময়েই ডাক পেয়েছেন একদিনের ক্রিকেটে?
ইবাদত:
বিশেষ করে আমি এসব নিয়ে কখনো ভাবি না। আমি যা হয়ে গেছে তা নিয়ে কখনো অনুশোচনায় ভুগি না। এটা টিম ম্যানেজম্যান্টের বিষয়। আগে আসলে ভালো হতো এমন কখনো মনে হয়নি। উনাদের যখন মনে হয়েছে আমাকে নেওয়া প্রয়োজন তখনই নিয়েছে। আমার লক্ষ্য ছিল টেস্টে আমি নিজের জায়গা পোক্ত করবো, এরপর বাকিসব ধীরে ধীরে হয়েছে।

টি-টোয়েন্টিতে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। আবার আপনার বোলিংয়েই…এটা নিয়ে পোড়ায় কি না… 
ইবাদত:
আমার অভিষেক ম্যাচ ছিল। জিতলে আমার কাছে ভালো লাগতো। ক্যারিয়ারে স্মরণীয় হয়ে থাকতো। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা হেরে গেছি। একটু আফসোস হয় মাঝে মাঝে, আমার কারণে ম্যাচটা হেরেছে, মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। যদি জিততাম কোনো আফসোস থাকতো না, যাইহোক যা হয় ভালোর জন্যই। এই বিশ্বাস নিয়ে খেলে যাচ্ছি।

সব কিছু ঠিক থাকলে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবেন ভারতে। ক্রিকেট জীবনের শুরুতে কিংবা তারও আগে এমন কিছু কখনো কল্পনা করেছিলেন? 
ইবাদত:
বিশ্বকাপের এখনো ৫ মাস বাকি। আমি দলে থাকবো কি না জানি না। আমার উদ্দেশ্য এখন আফগানিস্তান টেস্ট জেতা। এখানে ভালো খেলা। আফগানিস্তান সিরিজ ফোকাস করি এখন, বিশ্বকাপ নিয়ে ফোকাস করার অনেক সময় আছে হাতে (হাসি)।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়