ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

গড়পড়তা পারফরম্যান্সে এলোমেলো বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৮:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গড়পড়তা পারফরম্যান্সে এলোমেলো বাংলাদেশ

ছবি সংগৃহীত

ফেরার গল্প লিখতে পারতেন। বড় কিছু করে রাঙাতে পারতেন চেনা আঙিনা। বিপর্যয়ে দলের হাল ধরে পায়ের নিচের জমিন শক্ত করতে পারতেন। পারতেন আরো অনেক কিছু। সবচেয়ে বড় দলকে জেতাতে পারতেন। কিন্তু হাতের মুঠোয় আসা সুযোগ পায়ে ঠেলে বিদায় করলেন।

নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই তিন ম‌্যাচের সিরিজে দলীয় সাফল‌্যের চেয়ে ব‌্যক্তিগত পারফরম‌্যান্সের দিকেই চোখ ছিল সবার। সামনে বিশ্বকাপ বলেই পরীক্ষায় ছিলেন দলে ফেরা তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম‌্য সরকারসহ আরো অনেকে। বৃষ্টিতে প্রথম ওয়ানডে ভেস্তে যাওয়ায় শনিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে ছিল আরেকটি সুযোগ। কিন্তু দলীয় ব‌্যর্থতার সঙ্গে ব‌্যক্তিগত পারফরম‌্যান্সও গড়পড়তা। তাতে ৮৬ রানের হারকেও সঙ্গী করতে হয়েছে তাদের। 

আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল‌্যান্ড ২৫৪ রানের লড়াকু পুঁজি পায়। ওই রান করতে গিয়ে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অলআউট ১৬৮ রানে। তিন ম‌্যাচের সিরিজে নিউ জিল‌্যান্ড ১-০ ব‌্যবধানে এগিয়ে। 

চোট থেকে ফিরেছিলেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ বিরতি থেকে। আর সৌম‌্যকে ফেরানো হয়েছিল বিশেষ বিবেচনায়। যে প্রক্রিয়া স্রেফ প্রশ্নবিদ্ধ। সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন এই সৌম‌্য-ই। ২০২১ সালের পর দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে দ্বিতীয় বলে ৬ উইকেট পাওয়া ইশ সোধীকে ফিরতি ক‌্যাচ দেন। এরপর তামিম ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট পেয়েছেন এই লেগ স্পিনার। ব‌্যাটিংয়ে ৩৫ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর ক‌্যারিয়ার সেরা ৩৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে কিউইদের ম‌্যাচ জয়ের নায়ক সোধী। 

ফেরা যাক তামিম ও মাহমুদউল্লাহর ইনিংসে। কত রান করলে তারা বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবেন তা নিয়ে ফিসফাস চলছিল। বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার মানদণ্ড কি হতে পারে? কেউ বলছিল অর্ধশত, কেউ বলছিল কিছু রান-ই যথেষ্ট। কিছু রান বলতে নিজেদের গড় রানের কাছাকাছি কিছু। তেমন কিছুই করেছেন দুজন। গড়পড়তা রান। প্রশ্নের মুখে ফেলতে না পারে এমন কিছু!

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তামিম থেমেছেন ৪৬ রানে। কেউই নুন‌্যতম মাইলফলক ফিফটি পাননি। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারতের বিমানে চড়ে বসবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। আজ দুজনেরই সুযোগ ছিল বড় কিছু করার। শুরুতে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। অনসাইডে ফ্লিক করে রানের খাতা খোলা তামিম প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছেন জেমিনসনের বলে আউটসাইড এজে। এরপর বোল্টকে স্কয়ার লেগ দিয়ে যে চারটি মেরেছেন তা ছিল ট্রেডমার্ক শট। 

এরপর জেমিনসনকে উইকেট থেকে সরে কাভার ড্রাইভ দিয়ে পাঠান বাউন্ডারিতে। ডানহাতি এই পেসারকে এরপর পুল ও শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে ফ্লিক করে আরো দুইটি চার পান তামিম। মনে হচ্ছিল তামিম নিজের ছন্দে পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সোধীকে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভ করার পর সব এলোমেলো। সুইপ করতে গেলে তার গ্লাভসে বল ছুঁয়ে যায় উইকেটের পেছনে। ওখানেই থেমে যায় তার ৭ বাউন্ডারিতে ৫৮ বলে সাজানো ৪৪ রানের ইনিংস। 

মাহমুদউল্লাহও ভালো করেছিলেন। এদিন সময় নেননি থিতু হতে। উইকেটে এসে নিজের খেলা পঞ্চম বলে চার হাঁকান ফার্গুসনকে। দুই বল পর সোধীকে পুল করে আরেকটি চার। ডানহাতি পেসার বেশ ভালোভাবে সামলে নেন বাঁহাতি পেসার বোল্টকে। পরপর দুই বলে তাকে স্কয়ার কাটে দুটি চার হাঁকান দারুণ দুই বলে। তার এই ভালো শুরুর গতি থেমে যায় সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে। চাপে পড়েছিলেন বলেই উইকেটে থিতু হওয়ার পরও রান পেতে ভুগছিলেন। শেষমেশ নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন সোধীকে। 

লেগ স্পিনারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল উড়াতে গিয়ে ক‌্যাচ দেন ব‌্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। ৭৬ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ৪৯ রানের ইনিংসের সমাধি হয় ওই বাজে শটে। লিটন রানে নেই। রান পাননি আজও। জেমিনসনের বল উড়াতে গিয়ে সীমানায় ক‌্যাচ দেন। ৩ চারে ভালো শুরুর পর তানজিদ তামিম আটকে যান সোধীর বলে। তরুণ ব‌্যাটসম‌্যানকে ফিরিয়ে লেগ স্পিনার উইকেটের খাতা খোলেন। তাওহীদ হৃদয় ড্রাইভ করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন। এরপর তামিম ও মাহমুদউল্লাহর ব‌্যাটে বাংলাদেশ কিছুটা লড়াই করলেও শেষমেশ ওই আত্মসমর্পণেই শেষ স্বাগতিকদের ইনিংস। শেষ দিকে নাসুমের ২১ রানে পরাজয়ের ব‌্যবধান কমে বাংলাদেশের।      

এর আগে নিউ জিল‌্যান্ডের ব‌্যাটিং ইনিংসে কেবল আলোচনার ছিল সোধীর রান আউট ঘটনা। বোলিং করতে এসে হাসান রান আউট (আগের মানকাড) করলে টিভি আম্পায়ার রিপ্লে দেখে লাল বাট প্রেস করেন। ক্রিকেটের এই আউট নিয়ে অনেক চেতনার কথা বলা হয়। কিন্তু আইসিসি শুরু থেকেই এই আউটকে বৈধতা দিয়ে এসেছে। ১৭ রানে রান আউট হয়ে ফেরার সময় গ্লাভস খুলে হাসানকে উদ্দেশ‌্য করে তালি দেন সোধী। ওই মুহূর্তে লিটন ওই চেতনার জায়গাতে আটকে গিয়েছেন। এজন‌্য আম্পায়ার মারিয়াস ইরাসমাসকে অনুরোধ করে সোধীকে ডেকে আনেন। জীবন পেয়ে খুশি হয়ে যাওয়া সোধী ফিরে হাসানকে জড়িয়ে ধরতে কার্পণ‌্য করেননি। এক গাল হাসিতে নিশ্চিত থ‌্যাংকসও জানিয়েছেন। কিন্তু পরে ১৮ রান তুলে বাংলাদেশকে আরো বিপদে ফেলেন এই লেজের ব‌্যাটসম‌্যান। সব মিলিয়ে ৩৯ বলে ৩ ছক্কায় ৩৫ রান করেন যা করতে পারেননি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব‌্যাটসম‌্যানরা। তাতে পরাজয়ের ব‌্যবধানটা হয়েছে অনেক বড়। 

টস জিতে সফরকারীদের ব‌্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো ছিল না। ৩৫ রান তুলেতই হারায় ৩ উইকেট। শুরুতে মোস্তাফিজ ফিন অ‌্যালেন ও উইল ইয়ংকে উইকেটের পেছনে লিটন ও সৌম‌্যর হাতে তালুবন্দি করান। এরপর অভিষিক্ত খালেদের বলে আলগা শটে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন চাড ভোয়েস (১৪)। বিপদে পড়া দলকে উদ্ধার করেন টম ব্লান্ডেল ও হেনরি নিকোলস। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর এক সময়ে দলের রান ছিল ৭ উইকেটে ১৮৭। সেখান থেকে ২৫৪ রানের জন‌্য লেজের ব‌্যাটসম‌্যানরা বাহবা পাওয়ার যোগ‌্য। টম ব্লান্ডেল সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। ৪৯ রান করেন নিকোলস।  সোধীর ৩৫ রানের জন‌্য কাইল জেমিনসনের ২০ রান গড়ে দেয় বড় ব‌্যবধান। 

২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বকাপের দল ঘোষণার কথা রয়েছে। নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে পরদিন। এর আগে অনাকাঙ্খিত কিছু না হলে বিশ্বকাপ দলে তামিম, মাহমুদউল্লাহ দুজনই টিকে যাচ্ছেন ধরে নেওয়া যায়।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়