শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে শান্তর সেঞ্চুরিতে স্বস্তি
ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম
টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য এখানেই। ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাবে। স্কিলের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে অভাবনীয় বা অকল্পনীয় সকল ঘটনা ঘটবে। পিছিয়ে পড়লেও আক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বরঞ্চ, নতুন উদ্যমে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে।
দু-চারটা ওডিআই কিংবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো দ্রুত ফলাফল এখানে বেরিয়ে আসে না। ব্যাপক সাধনা করতে হয় ফলাফলের জন্য। ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ভিন্নদিকে। টেস্ট ক্রিকেটের এই রূপগুলোই ‘ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা’ এই প্রবাদের সার্থকতাও প্রমাণ করে দেয় এক ঝলকে। যেমনটা আজ হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
নিউ জিল্যান্ডের লেজের দুই ব্যাটসম্যান দিনের শুরুতে এতোটা অস্বস্তি ধরিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ-ই তাদের অনায়েস রান করতে দিচ্ছে! ৬৯ মিনিটের ব্যাটিংয়ে নিউ জিল্যান্ড দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে। ধারহীন বোলিংয়ে বাংলাদেশ বিবর্ণ। সঙ্গে ঢিলেঢালা মনোভাবে অগোছাল বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের করা ৩১০ রানের লিড ছাপিয়ে নিউ জিল্যান্ড করে ৩১৭ রান। লিড অল্প রানের। কিন্তু টিম সাউদি ও কাইল জেমিনসনের ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠে।
নিয়মিত বোলাররা যখন খাবি খেলেন তখন ‘ম্যান উইথ গোল্ডেন আর্ম’ নিয়ে হাজির মুমিনুল হক। আগের দিন পেয়েছেন গ্লেন ফিলিপসের উইকেট। আজ এক ওভারেই দুজনকে ফিরিয়ে শেষ করলেন নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। এরপর ব্যাটিংয়ে জবাব দেওয়া শুরু। দিনের শুরুর ওই অস্তস্তি কাটিয়ে বাংলাদেশ শেষ বিকেলে হেসেছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে। তার তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংসে ম্যাচের নাটাই এখন বাংলাদেশের হাতে। ৩ উইকেট হারিয়ে দলের রান ২১২। লিড ২০৫ রানের। শান্ত অপরাজিত ১০৪ রানে। তার সঙ্গে ৪৩ রানে আছেন মুশফিকুর রহিম।
দুজনের জমাট জুটিতে আসে ৯৬ রান। দিন শেষের স্কোরবোর্ড স্বস্তির পরশ দিয়ে গেলেও তা আরও সুন্দর দেখাত যদি দুটি রান আউট না হতো। শান্তর স্ট্রেইট ড্রাইভ ঠেকাতে গিয়ে টিম সাউদি বলের ওপর হাত এগিয়ে দেন। তার আঙুলের ছোঁয়া পেয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে। মাহমুদুল হাসান জয় (৮) তখন ক্রিজের বাইরে। তৃতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে ৯০ রানের জুটি গড়া মুমিনুলের (৪০) ইনিংস কাটা পড়ে রান আউটে। বল মিড অনে ফিল্ডারের হাতে পাঠিয়ে রান নিতে এগিয়ে যান মুমিনুল। বোলিং প্রান্তে থাকা শান্ত তাকিয়ে ছিলেন ফিল্ডারের দিকে। রান নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। ততক্ষণে মাঝ ক্রিজে মুমিনুল। ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিকোলসের থ্রোতে ব্লান্ডেল স্টাম্প ভাঙেন মুহূর্তে। এই দুই রান আউট বাদে জাকিরের উইকেট পায় নিউ জিল্যান্ড। ১৭ রানে তাকে এলবিডব্লিউ করেন এজাজ পাটেল। প্রথম ইনিংসে তার বলেই বোল্ড হয়েছিলেন জাকির।
শান্ত একপ্রান্তে নিজের ব্যাটিং ঝলক চালু রাখেন। শেষ টেস্টে দুই ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল দুই সেঞ্চুরি। এবারও শুরুটা করেছিলেন দারুণ। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ব্যাখ্যাতীত শটে থেমে যায় তার ইনিংস। নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন কিউইদের। এবার কোনো ভুল নয়। কোনো সুযোগও নয়। উইকেটের চারিপাশে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলে মুগ্ধতা ছড়ান। বলের মেরিট অনুযায়ী খেলে রান বাড়ান। প্রতি আক্রমণে গিয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হন। তাতে যে চাপ তৈরি করেছিল ৩ উইকেট হারিয়ে তা হারিয়ে যায় সহজেই।
সুইপ, রির্ভাস সুইপ, ড্রাইভে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। লম্বা সময় ক্রিজে থাকলেও রানিং বিটিউন দ্য উইকেটে ছিলেন দারুণ। শেষ বিকেলে যখন সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যান তখনো মনোবল, মনোযোগে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। বরং বাজে বলের অপেক্ষা করে রান তুলেছেন নার্ভাস নাইন্টিজে। চোখের পলকে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে।
মুশফিক ক্রিজে এসে তার ওপর চাপ কমিয়ে দেন। অনায়েস রান তোলেন তিনিও। ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা এই ব্যাটসম্যান অপেক্ষায় আছেন বড় কিছু করার। উইকেটের আচরণ কিছুটা পাল্টানো শুরু করেছে। গতকাল স্পিনারদের বল একটু বেশি ঘুরছিল। আজ তেমন সাড়া পায়নি। অনেকটাই ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক হয়ে গেছে। এমন রহস্যময় উইকেটে শেষ দুদিনে ফল বের হবে তেমনটাই আশা করছে স্বাগতিক শিবির। তবে লিড কত রান নিরাপদ তা বলতে পারছে না কেউ। আপাতত লক্ষ্য, যতটা সম্ভব ব্যাটিং করা। সেই কাজটা করতে পারলেই ম্যাচে ফল নিজেদের পক্ষে টানার সম্ভাবনা বেশি।
ইয়াসিন/আমিনুল