ঢাকা     রোববার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩১

স্পিন বিষে জয়ের সুবাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ১ ডিসেম্বর ২০২৩  
স্পিন বিষে জয়ের সুবাস

কতো কিছুর প্রথমের অপেক্ষায় বাংলাদেশ? ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডকে প্রথমবার টেস্টে হারানোর হাতছানি। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট জয়ের হাতছানি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর জয়ের হাতছানি।

সব সমীকরণ মিলে যেতে পারে শনিবার, যদি সিলেট টেস্টের পঞ্চম দিনে নিউ জিল্যান্ডের ৩ উইকেট নিতে পারে বাংলাদেশ। কেননা জয়ের থেকে এই ব্যবধানেই দূরে দাঁড়িয়ে শান্তরা। নিউ জিল্যান্ডের জন্য কাজটা কঠিন, প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের দেওয়া ৩৩২ রানের জবাবে নিউ জিল্যান্ড শুক্রবার দিনের শেষ পর্যন্ত করেছে ৭ উইকেটে ১১৩ রান। হাতে ৩ উইকেট রেখে তারা এখনও ২১৯ রান পিছিয়ে।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে কেবল দুইবার তিন’শ-এর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৪ এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১৭ রান তাড়া করে জিতেছিল। উইকেটে স্পিনারদের বল যেভাবে ছোবল দিচ্ছে, স্পিন বিষে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা নাকানিচুবানি খাচ্ছেন তাতে অতীতের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত হবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

আরো পড়ুন:

তবে ক্রিকেট বরাবরই গৌরবময় অনিশ্চিয়তার খেলা। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্সের ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি। সেবারও চতুর্থ দিন পর্যন্ত জয়ের সুবাস স্বাগতিকরা পাচ্ছিল। এরপর শেষ দিকে মায়ার্সের ঝড়ে সব এলোমেলো। কেন উইলিয়ামসন, টম লাথাম,গ্লেন ফিলিপসদের ফেরালেও উইকেটে এখনও ড্যারিল মিচেল অপরাজিত থাকায় কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকতেই হচ্ছে স্বাগতিকদের।

চতুর্থ দিনের তিন সেশনই বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। সকালের সেশন ছিল ব্যাটসম্যানদের। পরের দুইটি বোলারদের। ব্যাটিংয়ে আজ বাংলাদেশ আগের দিনের ২১২ রানের সঙ্গে আরও ১২৬ রান যোগ করে। সব মিলিয়ে পুঁজি দাঁড়ায় ৩৩৮ রান। চতুর্থ ইনিংসে কত রান নিরাপদ আগের দিন ধারনা দিতে পারেননি মুমিনুল হক। স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব রান বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে প্রথম সেশনে ২ ঘণ্টার পর দ্বিতীয় সেশনে আরও ৩২ মিনিট ব্যাটিং করে। তাতে জয়ের রান পেয়ে যায় শান্তর দল।

তবে ব্যাটসম্যানদের আরও সুযোগ ছিল বড় কিছু করার। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান শান্ত দিনের দ্বিতীয় বলে আলগা শটে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। সাউদির লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্লাভস ছুঁইয়ে দেন ১০৫ রান করা শান্ত। তাতে ভেঙে যায় তার ও মুশফিকের গড়া ৯৮ রানের জুটি।

অভিষিক্ত শাহাদাত বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। লেগ স্পিনার শোধীর লেগ ব্রেক তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে সোজা স্টাম্পে আঘাত করে। ১৯ বলে  ৪ বাউন্ডারিতে ১৮ রান করে বিদায় নেন তিনি। মুশফিক আরেকপ্রান্তে দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শট খেলে তুলে নেন ২৭তম টেস্ট ফিফটি। মনে হচ্ছিল শান্তর পর তার ব্যাট থেকেও আসবে বড় কোনো রান। কিন্তু নতুন বল নিয়ে কিউইরা তাকে ফেরায়। স্পিনার এজাজ পাটেলের বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গেলে বলের লাইনে ব্যাট নিতে পারেননি। তার প্যাডে বল আঘাত করে। প্ল্যাম এলডব্লিউ থেকে বাঁচতে পারেননি মুশফিক। ১১৬ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬৭ রানে সাজানো তার ইনিংসটি থেমে যায় সেখানেই।

সেখান থেকে মিরাজের অপরাজিত ৫০ রানে বাংলাদেশের রান তিন’শ পেরিয়ে যায়। ৭৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ফিফটি তুলে অপরাজিত থাকেন মিরাজ। ৪ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের স্পিনার এজাজ পাটেল ছিলেন তাদের সেরা। এছাড়া ২ উইকেট পান ইশ সোধী।

নিউ জিল্যান্ডকে আটকে রাখতে শুরুর দিকে ব্রেক থ্রু দরকার ছিল। পেসার শরিফুল দলের হয়ে কাজটা করে দেন। তার লেন্থ বল হাল্কা সুইং করে উইকেটের পেছনে যায়। কিন্তু কিপারের হাতে বল জমার আগে ব্যাটসম্যান লাথামের ব্যাটে চুমু খায়। চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু কেন উইলিয়ামসন ক্রিজে আসায় উল্টো বাংলাদেশ শিবিরেই চাপ। কেননা প্রথম ইনিংসে তার সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই লিড নিয়েছিল অতিথিরা। জয়ের জন্য পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন উইলিয়ামসন সেই ভয় ছিল। কিন্তু তাইজুল বোলিংয়ে এসে তাকে ফেরানোর দায়িত্বটা নিয়ে নেন। তার আর্ম ডেলিভারিতে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন উইলিয়ামসন। ২৪ বলে ১১ রান করে তার ইনিংসটি থেমে যায় সেখানেই। এরপর আর তেমন কেউ বাংলাদেশকে ভোগাতে পারেননি। নিকোলস সুইপ করতে গিয়ে নাঈমের হাতে ক্যাচ দেন ফাইন লেগে। টম ব্লান্ডেল তাইজুলের বলে ক্যাচ দেন সোহানের হাতে।

ফিলিপস এবং জেমিনসন আউট হন এরডব্লিউ হয়ে। সবচেয়ে সুন্দর উইকেট ছিল ডেভন কনওয়ের। তাইজুলের বলে এগিয়ে এসে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করলে বল শর্ট লেগে ক্যাচ যায়। সেখানে শাহাদাত দারুণ ক্যাচ নিয়ে কিউই ওপেনারকে ফেরান। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট পাওয়া তাইজুল এবারও ৪ উইকেট নিয়ে দারুণ দায়িত্ব সামলে নিয়েছেন। এছাড়া শরিফুল, মিরাজ ও নাঈম পেয়েছেন একটি করে উইকেট।

পঞ্চম দিনে তাদের শেষটা রাঙানোর পালা। উইকেটে ক্র্যাক আছে। বল ঘুরছে। ৪৪ রান করা মিচেলকে ফেরাতে পারলেই জয়ের বাকি কাজ হয়ে যাবে। সেই দায়িত্বটা কে কাঁধে তুলে নেয় সেটাই দেখার। অভাবনীয়, অকল্পনীয় কিছু না হলে প্রত্যাশিত জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। 

ইয়াসিন/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়