অনুশীলনের ২২ গজে তামিমের ভিন্ন লড়াই, চনমনে সাকিব
ব্রিস্টল থেকে ইয়াসিন হাসান : দুজন এখন দুই মেরুতে। একজন ফর্মের তুঙ্গে, আরেকজন ফর্মহীনতায়। একজন কাটাচ্ছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়। আরেকজন হয়তো সবথেকে বাজে!
২০০৭ সালে দুজনের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল একসঙ্গে স্মরণীয় ভারত বধের ম্যাচ দিয়ে। এরপর বাংলাদেশ যতোটা বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলেছে, প্রতিটিতেই ছিলেন তারা। সাকিব, তামিমের বিশ্বকাপ যাত্রা এরকমই। নিজেদের চতুর্থ বিশ্বকাপের মঞ্চে সাকিব, তামিমের অবস্থান দুই মেরুতে।
সাকিব যতটা চনমনে রয়েছেন, তামিম ঠিক তার উল্টো। পারফরম্যান্স গড়ে দিয়েছে দুজনের পারিপার্শ্বিকতা। সাকিব রয়েছেন চনমনে। তামিম ঠিক বিপরীতে। ব্যাটে রান বলেই রাজ্যের বোঝা যেন তার মাথায়! প্রত্যাশার চাপ এতোটাই বেশি যে অনুশীলনের ২২ গজকে ম্যাচ উইকেট বানিয়ে ফেলেছেন দেশসেরা ওপেনার।
দুই বিশ্বকাপের মাঝে যেসব ওপেনার ২৫০০ রানের ওপরে করেছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোাচ্চ ব্যাটিং গড় তামিমের। রোহিতের ৬১.১২ গড়ের পর তামিমের গড় ৫৭.৪৯। এ সময়ে ৫২ ম্যাচে ২৫১১ রান করে তামিমের অবস্থান সেরা ছয়ে। খুব করে চেয়েছিলেন বিশ্বকাপের শুরু থেকেই থাকবেন দারুণ ধারাবাহিক, দলকে বিশ্বমঞ্চে দেবেন নিজের সেরাটা।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড, উপমহাদেশের বাইরের তিন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ তামিম। শুরুটা ভালো হচ্ছিল প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না। তিন ম্যাচের তিনটিতেই আউট হয়েছেন শর্ট বলে। বাড়তি গতির সঙ্গে শরীরের ওপর তাক করা বাউন্স তাতেই প্রতিপক্ষের তামিম বধ।
প্রতিপক্ষের নজরে থাকা ওই জায়গাতেই তামিম অনুশীলন চালালেন দুদিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নিবিড় অনুশীলন তামিমের। কার্ডিফে বৃষ্টিতে অনুশীলন করতে পারেননি। গতকাল ব্রিস্টলে পা রেখেই চলে যান ইনডোরে। আজ দলের সঙ্গে টিম বাসে না এসে ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে তামিমের অনুশীলন শুরু হয় সবার আগে। তিন অর্ধে ভাগ ছিল তার অনুশীলন। নতুন বলে প্রথমটা চলে শর্ট বলে। চতুর্থ ও পঞ্চম স্ট্যাম্প বরাবর চলে একের পর এক শর্ট বল। কোনটা তামিম লিভ করছিলেন, কোনোটা ব্যাকফুটে গিয়ে পাঞ্চ। আবার কোনোটা খেলছিলেন খুবই আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
বাউন্সারগুলোতে তামিম ছিলেন সাবলীল। ডাক করছিলেন হরহামেশা। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছে অনুশীলনে ম্যাকেঞ্জি সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন তামিমের ফুট ওয়ার্কে। শর্ট বল পেছনের পায়ে বেশি ভর দিয়ে খেলতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন প্রোটিয়া কোচ। দ্বিতীয় অর্ধে মিডল ওভারে ব্যাটিংয়ের আমেজে অনুশীলন করেছেন এ বাঁহাতি। শেষটা স্লগ। প্রতি সেশন শেষে ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ তামিমের। হয়তো ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা কিংবা নতুন কোনো শটস নিয়ে পরিকল্পনা।
সকাল সাড়ে নয়টার পর অনুশীলনে ঢোকা তামিম ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে অনুশীলনের মঞ্চ ছাড়েন ১১টায়। এ সময়ে একের পর এক থ্রো ডাউন সিদ্ধহস্তে খেলে যাচ্ছিলেন এ ওপেনার। তামিম যেখানে নিজের ফর্ম খুঁজে পেতে মরিয়া সেখানে সাকিব উড়ছেন। ২ হাফ সেঞ্চুরি ও ১ সেঞ্চুরিতে ২৬০ রান করে সাকিব এখন সবার ওপরে। বোলিংয়ে ৩ উইকেট।
সাকিব আজ অনুশীলন করেননি। সারাদিন ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। দলের সঙ্গে মাঠে এসে গল্প আর আড্ডায় কাটিয়েছেন। অচেনা সাকিবকে নতুন করে আবিস্কার করেছে অনেককেই। এমন চনমনে থাকা সাকিব যে মাঠের ক্রিকেটে কতোটা ভয়ংকর তা ক্রিকেট বিশ্ব প্রমাণ পেয়েছে বহুবার। এবার শ্রীলঙ্কার পালা। ইনফর্ম সাকিবের সঙ্গে রানের ক্ষুধায় মগ্ন থাকা তামিম নিজেকে ফিরে পেলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নতুন উদ্দ্যেম পাবে।
রাইজিংবিডি/ব্রিস্টল/১০ জুন ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন