ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ছোটগল্প

কবি

হুমায়ূন শফিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ৩০ মে ২০২৪  
কবি

মেট্রো থেকে নামার সময় একজন লোকের হাঁটার স্টাইল খুব পরিচিত লাগল আমার। পা একটু টেনে টেনে হাঁটছে। নিচে নেমে লোকটাকে অনুসরণ করলাম। লম্বা, টিনটিনে শরীর। মাথায় বড় চুল। একটা ফুলহাতা সাদা রঙের শার্ট পরে আছে। মনে মনে যাকে ভাবছি সে-ই হবে বোধহয়। লোকটি পাঞ্চ করে বের হয়ে একেবারে নিচে নামার সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে। আমিও দ্রুত পাঞ্চ করে তার পিছু নিলাম। ভিড়ের মধ্যে তার হাঁটতে একটু কষ্টই হচ্ছে। তার উপর লম্বা লাইন দিয়ে টিকিট কিনছে লোকজন। সেই লাইন মাঝখান দিয়ে ভেঙে ভেঙে পার হতে হচ্ছে আমাদের। সিঁড়ির কাছে গিয়েই ডাক দিলাম, বিক্রমদা। শুনেই থেমে গেল যেন এক মুহূর্ত। কিন্তু পিছন দিকে তাকালো না। ভিড়ের কারণে হয়তো ভেবেছে অন্য কাউকে ডাকছে। আবার ডাক দিলাম, বিক্রমদা, দাঁড়াও। এবার সে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে প্রথমে দেখে নিলো হয়তো আসলেই আমি কিনা! কয়েক সেকেন্ড পরেই তার দুই চোখের আনন্দ উপলব্ধি করতে পারলাম। বিক্রমদাকে মেট্রোতে নামতে নামতে পেয়ে যাব তা কোনোদিনও ভাবি নাই। অন্তত এই ২০২৪ সালে তো নয়।

আমাকে পেয়ে বিক্রমদার চোখে পানি চলে আসলো। আমার নিজেরও একই অবস্থা। দুইজনে ছিলাম প্রাণের বন্ধু। যদিও বিক্রমদা আমার থেকে তিন বছরের বড়। কিন্তু তাতে কি যায় আসে। বন্ধুত্ব কি আর বয়স দিয়ে হয়। দুইজনে এসেছিলাম একই গ্রাম থেকে। স্কুল থেকেই আমাদের পরিচয়। তবে তখন ততটা ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ঢাকায় আসার পরে বেশি ঘনিষ্ঠ হলাম। কারণ দুইজনেই ছিলাম বইয়ের পোকা। বিক্রমদা ঢাকাতে এসেছিল আমার থেকে দুই বছর আগে। মেট্রিক পাস করে ভর্তি হয় ঢাকা কলেজে। দুই বছর পরে আমিও আসি, তবে ভর্তি হই একটা প্রাইভেট কলেজে। আমার রেজাল্ট ছিল খুবই খারাপ। কোনোরকমে পাস যাকে বলে। তবে বিক্রমদার রেজাল্ট হিংসা করার মতো। ঢাকায় আসার পরে থাকার জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়নি। বিক্রমদার বাসাতেই উঠেছিলাম। এসেই দেখি রুমের চারপাশে বই ছড়ানো-ছিটানো। কোনো কোনো বই অর্ধেক খোলা, কোনোটা দুই এক পৃষ্ঠা, কোনোটা দেখে মনে হচ্ছে ছুড়ে ফেলা। মজাই লাগল ব্যাপারটা। পরে বিক্রমদাকে জিজ্ঞেস করি, বইগুলা এইভাবে রাখছো কেন?
কোন ভাবে? উল্টা প্রশ্ন করে আমার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকায়। এই দৃষ্টির কারণ তখন বুঝি নাই।
দেখতেই পাইতেছো। তারপরও বলি, ধরো আনা কারিনিনা বইটা অর্ধেক খোলা কেন, কয়দিন ধইরা এইরকম?
সপ্তাহ দুই। অর্ধেক পড়া হইছে তাই।
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ তিনচার পৃষ্ঠা খোলা— ঘটনা কী?
ঘটনা কিছুই না। ইন্টারেস্টিং মনে হইল। পরে পড়ব।
আর ওই যে দেখে মনে হইতেছে ছুড়ে ফেলছো!
ওইগুলা পড়ার কিছু নাই। ওয়েস্ট অব টাইম।

বিক্রমদা যে একটু পাগলাটে সেটা আমি জানতাম। তবে তার থেকে অনেক কিছু শেখার ও বোঝার আছে, তাই মিশতে সবসময় ভালো লাগত। এইরকম একজনের সাথে রুম ভাগাভাগি করে থাকতে হলে যেটা হয়, যেকোনো একজনের প্রভাব আরেকজনের উপর পড়ে। এক্ষেত্রে বিক্রমদার প্রভাবের কাছে আমার প্রভাব শিশু।
ধীরে ধীরে জানতে পারি, বিক্রমদা কবিতা লেখে। অনুমতি ছাড়া কারও ডায়েরি দেখা উচিত না। দেখিও না আমি। তবে আমি একদিন দেখে ফেলি। যদিও দেখা লাগছে অনিচ্ছাসত্তে। কারণ সেদিন কলেজের কি একটা কাজের জন্য ডায়েরি লাগতো। আমার ডায়েরি যেটা ছিল লেখা শেষ, তাই ভাবছিলাম বিক্রমদার খালি কোনো ডায়েরি থাকলে সেটা দিয়ে কাজ চালাব। কিন্তু একটা নীল মলাটের ডায়েরি খুলেই প্রথমে দেখলাম আঁকাআঁকি। পৃষ্ঠা উল্টালাম, দেখি শিরোনাম অংশে লেখা রাষ্ট্র, এর নিচে বিক্রম সরকার। এরপর কবিতাটা পড়েই ফেললাম। দারুণ কবিতা! মানুষের মন নাড়া দেওয়ার মতো।

সেই বয়সেই এমন ভালো কবিতা বিক্রমদা লিখে ফেলছে, দেখে অবাক হলাম। তখন খুব কবিতা বুঝি এমন না, তবে বিক্রমদার কবিতাটা যে ভালো কিছু হয়েছে তা যেন বুঝে গেলাম। কিছুদিন পরে সেই ভাবনাটি সত্যিও হয়ে গেল। কারণ বইমেলাতে বিক্রমদার একটা কবিতার বই বের হলো। আর পত্র-পত্রিকায় তার লেখা আগে থেকেই প্রকাশিত হতো। বই বের হওয়ার পর চারদিক থেকে প্রশংসা আসতে লাগলো। অনেক চিঠি এসে জমা হলো। সবই প্রশংসাসূচক। দুই একটা সমালোচনাও এসেছিল, সেগুলো বিক্রমদা আমাকে দিয়ে পড়ালো। বইয়ের নাম ছিল ‘রাষ্ট্রযন্ত্র’। যে বইয়ের নাম রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রের নজরে তো সেই বই পড়বেই। বিক্রমদার বইটিও রাষ্ট্রের নজরে পড়ল এবং নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো। বিক্রমদা যে এই কারণে মন খারাপ করল তা কিন্তু না, কবিতা লেখার পাশাপাশি কলামও লেখা শুরু করল পত্রিকায়। প্রতিবাদ জানিয়েও লেখা দিলো। তার পক্ষেও কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক ও কবি পত্রিকায় কলাম লিখলো। কিন্তু তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেল না। অন্যদিকে বইটি তখন চোরাইভাবে ছেপে প্রকাশক ঠিকই বিক্রি করতে থাকলো। নীলক্ষেতে কেউ কেউ কপি করে বিক্রি করতে শুরু করল। কিছুদিন পরে দেখা গেল বইটি রাস্তাঘাটে সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছেও খবরটি পৌঁছে যেতে সময় লাগল না। তারা রাস্তাঘাটে যত জায়গায় বইটি পেলো সবগুলো বাজেয়াপ্ত করল এবং ঘোষণা দিয়ে পুড়িয়ে ফেলল।

মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ মানুষ কিন্তু বিক্রমদার পক্ষে ছিল। সবাই এর প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করল। বিক্রমদাকে আমি একদিন বললাম, তোমাকে না আবার ধরে নিয়ে যায়?
নিলে নিবে ভয় পাই নাকি?
তখন আমি কলেজ পাস দিয়ে ইউনিভার্সিটিতে সবে ভর্তি হয়েছি। বিক্রমদা তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। ইংরেজি বিভাগে। ইচ্ছে করেই ইংরেজি বিষয় নিয়েছে, কারণ তার ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ইংরেজি পড়াবে।
কিন্তু চিন্তা করে দেখো। কিছুদিন গা ঢাকা দাও।
সময় আসলে দিব। আমাকে এখনও কোনো নির্দেশ দেওয়া হয় নাই।
মানে? তুমি কি রাজনীতিও করো নাকি? 
বিক্রমদা আর কথা বাড়ালো না। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে টানতে লাগলো। হয়তো ভাবছিল আমাকে মুখ ফসকে বলে ভুল করল কিনা। কিন্তু বিক্রমদাকে আমি যে পরিমাণ পছন্দ করি, তাকে বাঁচানোর জন্য আমি যেকোনো কিছুই করতে পারি। তখন টুকটাক আমিও গল্প লেখার চেষ্টা করছি। লিখি আর বিক্রমদাকে পড়তে দেই। পড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঠিক করার পরামর্শ দেয় সে। সেগুলো সংশোধন করে আবার দেখাই, আবার কিছু না কিছু পরামর্শ আসে তার কাছ থেকে। এভাবেই চলতে থাকে আমার নিজের লেখালেখি।

কিছুদিন পরে বিক্রমদা হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরে আসে। এসেই সবকিছু গোছাতে শুরু করে। বেশ কয়েকটা বই একটা ব্যাগে ভরে নেয়। কিছু জামাকাপড়ও। তাকে কোনোদিনও এরকম চিন্তিত দেখিনি। আমিই জিজ্ঞেস করি, তোমার কী হয়েছে?
আমাকে যেতে হবে। নির্দেশ পেয়েছি।
এটা কি বিক্রমদার জন্য খুশির খবর? মনে মনে ভাবি। তখন আমি টেবিলে বসে খাতার উপর কাটাকাটি করছি। হাতড়েও লেখার জন্য একটা শব্দ পাচ্ছিলাম না। পেন্সিল দিয়ে লিখি, সে কারণে অভ্যাস হয়ে গেছে পেন্সিল কামড়ানো। কামড়াতে কামড়াতে জিজ্ঞেস করি, কোথায় যাবে?
সেটা এখনও জানি নারে। তুই ভালো থাকিস।
তুমি কি এখনই বের হবে?
হ্যাঁ। আমার জন্য আরও দুইজন ওয়েট করতেছে। তুই থাক। আর যদি কখনও না ফিরি তাহলে বাড়িতে বলে দিস, কবিতা লেখার জন্য আমাকে পুলিশে ধরে নিয়েছে, পরে আর খোঁজ পাসনি। প্রয়োজন হইলে এইরকম গুজবও ছড়াইতে পারিস। 
বলেই হাসল।
কি বলতেছ এসব। কত দিনের জন্য যাচ্ছ?
তিন মাস। তবে বললামই তো— কবে ফিরব ঠিক নাই। তোর লেখা ভালো হচ্ছে, থেমে যাস না। কাউকে না কাউকে তো লিখতে হবে।
বলেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেল। আমাকে আর একটা কথা বলার সুযোগও দিলো না। এরপরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। তারই এক বন্ধুর কাছ থেকে শুধু জানতে পেরেছিলাম দেশেই আছে। তবে পাহাড়ের দিকে। সেখানে তার মতো অনেকেই ঘাপটি মেরে আছে। যে কোনো সময় বের হয়েই কাজ শুরু করবে। কী কাজ আর জিজ্ঞেস করিনি। 

প্রায় ৩৫ বছর পরে বিক্রমদাকে আবার এখন দেখলাম। তার প্রতি আমার কৌতূহলের শেষ নেই। বিক্রমদাকে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে বসি। দোকানের যেদিকটায় একটু নিরিবিলি সেদিকে যাই। কারণ হইহুট্টগোলের মধ্যে কথাই বলা হবে না। চায়ের অর্ডার দিয়ে আমিই প্রথমে কথা শুরু করলাম।
তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
জেলে। 
কেমন যেন নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিলো।
ধরা পড়লে কীভাবে?
একটা মিশনে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ছি। মূলত একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল। তারজন্যই।
বলো কি, তোমাদের দলেই?
হ্যাঁ। সে ছিল মূলত এজেন্ট। আমাদের কেউ বুঝতে পারেনি। সময় মতো ধরিয়ে দিছে।
যেদিন তুমি বের হয়ে গেলে সেদিনই ধরা পড়লে? 
না। আমরা সেদিন রাঙামাটি গেছিলাম। সেখানে গিয়েও অনেক কাজ ছিল। কিন্তু সময় ছিল কম। তাই দলগতভাবে কাজ করা লাগছে, যাতে দ্রুত শেষ করা যায়। 
তোমার কবিতার কি হলো? হুট করেই প্রশ্নটি মাথায় আসল।
কবিতা?
বিক্রমদা এমনভাবে বলল যেন কোনোদিন কবিতা সম্পর্কে কিছুই শোনেনি। অথচ সারারাত আমরা কবিতা পড়ে কাটিয়েছি। একটার পর একটা রবীন্দ্রনাথ, জীবননান্দ, বিষ্ণু দে, কাজী নজরুল ইসলাম আরও অনেকেরই কবিতা আমরা পড়েছি। অথচ কবিতা নিয়ে কোনো আগ্রহই আজ বিক্রমদার চোখে দেখলাম না। এমন সময় চা চলে আসল। আমি একটা সিগারেট জ্বালালাম। বিক্রমদার উদ্দেশ্যেও দিলাম। মাথা নাড়িয়ে না করে দিলো সে। 

তুমি কি কবিতা লেখা বাদ দিয়ে দিছো? প্রশ্নটা করলাম। ভণিতা করলাম না মূলত।
কবিতা আবার কোনোদিন লিখছি নাকি?
কি বলো এসব! কবিতাই তো তোমার ধ্যানজ্ঞান ছিল।
ধূর বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। 
তাহলে তোমার বই নিয়ে তখন এত কিছু হলো। এখনও তো তোমার বইটি বাজারে পাওয়া যায়। সবাই-ই পড়ে।
তুই কবিতা বাদে অন্য কিছু নিয়ে কথা বল। কবিতার কথা শুনলে আমার ব্রেন আর কাজ করে না।
বিক্রমদা। কী হয়েছে?
চায়ে চুমুক দিয়ে বিক্রমদা চোখ বন্ধ করল। একটা দীর্ঘশ্বাস তার বুকচিরে বের হয়ে আসলো। তারপরে বলল, ধরা পড়ার পর আমাদের নামে মামলা হলো। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা। আর আমার নামে আরও কয়েকটি বেশি। কারণ আমি কবি। কবিকে শায়েস্তা করলে অন্যরা এমনিই সুবোধবালক হয়ে যাবে— এরকমই তাদের ধারণা। তখন আমার উপর প্রতিদিনই চলল অমানবিক নির্যাতন। সহ্য করার মতো না। কিন্তু যতক্ষণ না অজ্ঞান হই ততক্ষণ আমাকে মারতেই থাকতো। এত মার খেলাম বলার মতো না। অন্যরাও খেয়েছে, কিন্তু আমার মতো না।
পরে?
পরে আর কি? আমাদের জেল হয়ে গেল। অনেকের ফাঁসিও হলো। আমাকে কেন যেন ফাঁসি দিলো না। কে জানে! এসব তো খবরেও আসেনি। শুধু প্রত্যক্ষদর্শীরাই জানে হয়তো।
কিন্তু তুমি...
আরে পাগল! এতদিন কি আর জেলে ছিলাম? ১২ বছর ছিলাম। এরপরে বের হতে পেরেছি, পরিবর্তন হইছে না।
তাহলে গ্রামে তো যাও নাই?
বিদেশ চলে গেছিলাম। সেখানেই ছিলাম এতকাল।

তাহলে আমাদের কথা এতদিনে মনে পড়ল? হাসার চেষ্টা করলাম বলে। কিন্তু বিক্রমদার মুখে হাসি নেই। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলো। খুবই গম্ভীর হয়ে আমাকে বলল, তুই তো লেখালেখি করে খুবই নাম কামিয়েছিস। কিন্তু কিছু পরিবর্তন করতে পেরেছিস?
কী পরিবর্তন?
থাক... তোকে এখন বলে লাভ নাই।
আর প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না। বোঝা গেল বিক্রমদা আমাদের খোঁজখবর ঠিকই রাখে। আর এই যুগে এসব তথ্য যোগার করা আরও সহজ। বিক্রমদার জন্যও কঠিন হওয়ার কথা নয়।
বিক্রমদা যাই হোক না হোক, তুমি এখন আমাদের বাসায় চলো। তোমার গল্প বাসার সবার কাছে এত করেছি সবাই দেখে খুব খুশি হবে।
নারে... আমি বিশেষ কাজে এসেছি। কাজটা গোছাই। পরে একদিন চেষ্টা করব। চলে আসব দেখবি।
আমার ঠিকানা জানো?
সমস্যা হবে না। চলে আসতে পারব। তোর নাম্বার দে... তাই তো হয়। বলেই বিক্রমদা হাসলো।
ঠিকাছে। বলে নাম্বার দিলাম, বিক্রমদার নাম্বারটাও সেইভ করে রাখলাম। তাহলে আজকে আসি দাদা।
আচ্ছা যা। কিন্তু একটা কথা শোন।
বলো। 
তোর অনেক লেখাই আমি পড়েছি। লেখার হাত দারুণ হয়েছে তোর! কিন্তু তোর সব লেখাই এমন মনে হয়, দুনিয়ার কোথাও কোনো সমস্যা নাই। আর সবই একপাক্ষিক মনে হয়।
কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। কারণ বিক্রমদাকে তো চিনি, সে অন্যায় যে করে আর সহে তাদের কাউকে দেখতে পারে না। নিজের প্রতি সাফাই গাওয়ার স্বরে বললাম,
নিরপেক্ষ লেখাও তো লিখেছি।
নিরপেক্ষ বলতে কিছু আছে। সত্য লিখলে তা সত্যের পক্ষেই যাবে। নিরপেক্ষ তো আর থাকবে না। যাই হোক, তোর বোধহয় দেরি হয়ে যাচ্ছে, আজকে তাহলে যা। অন্যদিন দেখা হবে।
ঠিকাছে দাদা। তুমি কিন্তু আসবে অবশ্যই।
অবশ্যই আসব। আমরা ফিরে এসেছি যেহেতু আসতেই তো হবে। বলেই বিক্রমদা চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে গেল। আর আমার মাথায় তখন বাজতে থাকল তার শেষ কথাটা— আমরা ফিরে এসেছি।

তারা//

সর্বশেষ