ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ৬ প্রাণীর জন্ম

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৩  
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ৬ প্রাণীর জন্ম

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে চার প্রজাতির নতুন অতিথি এসেছে। কিছু দিন আগে প্রাণীগুলোর জন্ম হলেও শাবকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পার্ক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান।

তারা বলেন, সাফারি পার্কে জলহস্তী পরিবারে একটি শাবক, নীলগাই ও জেব্রা পরিবারে জোড়া শাবক এবং কমন ইল্যান্ড পরিবারে নতুন অতিথির জন্ম হয়েছে।

জলহস্তী পরিবারে নতুন সদস্য
গত ১৪ অক্টোবর পার্কের মা জলহস্তী একটি শাবকের জন্ম দেয়। জলহস্তীর নিরাপত্তাসহ সার্বিক দিকবিবেচনায় কর্তৃপক্ষ বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিষয়টি গণমাধ্যমে জানায়। নতুন সদস্য নিয়ে পার্কে এখন জলহস্তীর সংখ্যা চার-এ দাঁড়ালো। এর আগে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর পার্কে একটি শাবকের জন্ম হয়। সেটি এখনও টিকে আছে। তবে পার্কে জন্ম নেওয়া দুটি শাবকের লিঙ্গ এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

জন্মের পর থেকে নতুন শাবকটি পানিতেই রয়েছে, মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। জলহস্তী পানিতে একবার ডুব দিয়ে পাঁচ মিনিট সময় পর্যন্ত থাকতে পারে। এরা নিশাচর, দিনের অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকে, মাঝেমধ্যে খাবার খেতে ডাঙায় উঠে আসে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন জন্ম নেওয়া শাবকটিকে মাঝেমধ্যে তার জন্য নির্দিষ্ট জলাধারে দেখা যাচ্ছে। নতুন শাবকটির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে তার মা নিজে। শাবকটি ও তার মায়ের পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করে তাদের খাবারের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নতুন শাবকটি যদি মাদি হয়, তাহলে শঙ্কামুক্ত থেকে সেটি বড় হয়ে উঠছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, জলহস্তী আফ্রিকার তৃণভোজী নিশাচর প্রাণী। প্রাণিজগতে হাতির পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে জলহস্তী এক বিশেষ নাম। এরা আকারে অন্য প্রাণীর তুলনায় দেখতে খাটো মনে হলেও এরা খুবই মোটা। আন্তর্জাতিকভাবে ২০০৬ সালে এ প্রাণীকে বিশ্বে সংকটাপন্ন হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক জলহস্তীর ওজন দেড় হাজার কেজি পর্যন্ত হয়। ভারী শরীর নিয়েও এরা ৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। জলহস্তীর গর্ভকাল ২৪০-২৮০ দিন পর্যন্ত হয়। দুই বছর পর পর একটি করে শাবকের জন্ম দিতে পারে মা জলহস্তী। পাঁচ-সাত বছরে জলহস্তী প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। আবদ্ধ অবস্থায় এরা ২৫-৩৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশে আরও বেশি।

নীলগাই পরিবারে জোড়া শাবকের জন্ম
২০১৯ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দ হওয়া বেশ কয়েকটি নীলগাই উদ্ধার করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। সেখান থেকে এখন জন্ম হচ্ছে নতুন অতিথির। গত ৭ অক্টোবর এ পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশে নীলগাই দুটি শাবকের জন্ম দেয়। এরআগে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো দুটি শাবকের জন্ম হয়েছিল। নতুন শাবক নিয়ে পার্কের নীলগাই পরিবারের সদস্য সংখ্যা আটটিতে দাঁড়ালো।

কমন ইল্যান্ড পরিবারে নতুন অতিথি
সাফারি পার্কে আফ্রিকান প্রাণী কমন ইল্যান্ড পরিবারেও নতুন শাবকের জন্ম হয়েছে। গত ৯ আগস্ট প্রাণীটির জন্ম হয়। এ প্রাণীর আচরণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত মা প্রাণীটি শাবককে ঝোপের আড়ালে রাখে নিরাপত্তার জন্য। শাবকটি হাঁটাচলা শেখার পর মায়ের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে।

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানান, কমন ইল্যান্ড এন্টিলুপ প্রজাতির আফ্রিকান প্রাণী। আফ্রিকা মহাদেশে মূলত এদের বিচরণ। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মাদি কমন ইল্যান্ডের ওজন ৩০০-৬০০ কেজি। পুরুষের ওজন হয় ৪০০-৯০০ কেজি। এরা মূলত তৃণভোজী।

শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একটি পুরুষ ও একটি মাদি কমন ইল্যান্ড আনা হয়। পরে ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাবকের জন্ম দেয় এ প্রজাতি। বর্তমানে পার্কে নতুন শাবক নিয়ে কমন ইল্যান্ড পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ালো চারে। যার মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি মাদি।

জেব্রা পরিবারে জোড়া শাবক
জেব্রা পরিবারেও এসেছে নতুন দুই অতিথি। এ নিয়ে পার্কে জেব্রার সংখ্যা ২৯টিতে দাঁড়ালো। এরমধ্যে ১৬টি পুরুষ ও ১৩টি মাদি। পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি ও ১৩ সেপ্টেম্বর আরেক শাবকের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে শাবকগুলো সুস্থ আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ও নিয়মিত সঠিক পরিচর্যার কারণে পার্কে প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে।

রফিক/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়