ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

ট্রেনে ওঠা-নামার যুদ্ধ

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
ট্রেনে ওঠা-নামার যুদ্ধ

ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেন কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে। এই রুটে স্বস্তির আশা ছিলো যাত্রীদের। বাসের পরিবর্তে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ট্রেনের ওপর ভরসা বেড়েছে মানুষদের। কিন্তু, ট্রেনের দৈর্ঘ্যর সঙ্গে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য ছোট হওয়াই ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। রীতিমতো যুদ্ধ করে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা-নাম করতে হয় প্রতিদিন। নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে পড়তে বিড়ম্বনায়। এছাড়া, প্লাটফর্মে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পকেটমার চক্রও।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন্দ এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৩২ মিনিটে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এসময় দেখা যায়, শত শত যাত্রী ট্রেনে ওঠার জন্য ছুটাছুটি করছেন। ঠিকমতো ট্রেনে উঠতেই পারছিলেন না অনেক। এর মূল কারণ কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে ট্রেনের ‘জ’, ‘ঝ’ এবং ‘ঞ’ এই তিনটি বগির টিকিট বেশি দেওয়া। ট্রেনের পেছন দিকের এই তিনটি বগি অধিকাংশ সময় স্টেশনের প্লাটফর্মের বাইরে থাকে। ফলে ট্রেন থেকে নামা এবং ওঠার সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। এছাড়া, রেল লাইনের পাশ দিয়ে অসংখ্য দোকান, পথচারীদের জন্য রেলিং দেওয়া থাকায় ট্রেনে উঠতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। ট্রেনের ওঠার সময় প্রায়ই পকেটমারের কবলেও পড়েন তারা।

কুষ্টিয়াস্থ রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দপ্তর ও পোড়াদহ এবং রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে পোড়াদহ রেলওয়ে থানাধীন অঞ্চলে সংঘটিত ২১টি চুরি, ৬টি মাদক ও ৩টি চোরাচালানের ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। এসব মামলাগুলি তদন্তাধীন আছে। একই ভাবে রাজবাড়ি থানা এলাকায় ৩টি চুরি এবং ২টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই রেল পুলিশ বাদী হয়ে করেছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের খুলনা জোনের মধ্যে রেল যাত্রীদের টাকা পয়সা ও মালামাল চুরির ঘটনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা হয়েছে পোড়াদহ রেলওয়ে থানায়। যদিও বাস্তবে এই অঞ্চলে রেল যাত্রীদের মালামাল চুরির সর্বমোট ঘটনার ১০ শতাংশ মামলার আওতায় আসেনি বলে অভিযোগ ট্রেন যাত্রীদের।  

কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে প্রায় প্রতিদিনই টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে ১০/১২ জন সদস্যের একটি পকেটমার চক্র। এরা কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। তারা কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে যাত্রী বেশে ট্রেনে ওঠা ও নামার সময় ট্রেনের কামরায় গেটে প্রচণ্ড ভিড় সৃষ্টি করে পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় আসা সুন্দরবন ট্রেনের যাত্রী শরিফুল আলম বলেন, ‘প্লাটফর্ম থেকে এতো দূরে ট্রেন থামার কারণে সবারই কষ্ট হয়েছে। পরিবার নিয়ে নিরাপদে চলাফেরার জন্য আমাদের ট্রেনের ওপর আস্থা বেশি। কিন্তু কুষ্টিয়া স্টেশনে যেভাবে নামতে হলো তাতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।’

শারমিন আক্তার নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনের বগি দূরে থামার কারণে এতো কষ্ট হয়ছে নামতে তা বলে বোঝাতে পারবো না। একদিকে, যেমন ভিড় ঠেলে মানুষ ট্রেনে উঠছে অন্যদিকে নামছে। বাচ্চা নিয়ে, ব্যাগ নিয়ে নামাটা এক প্রকার যুদ্ধের মতো।’

খুলনাগামী যাত্রী সিহাবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যুবকরা না হয় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পারবো। কিন্তু,নারী ও বয়স্কদের তো এভাবে ট্রেনে ওঠা সম্ভব না। এভাবে চললে, যে কোনো সময় এখানে বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।’

কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু অভিযোগ করেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন থেকে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেসে ওঠার সময় পকেটমার চক্র রেলের দড়জায় ভিড় সৃষ্টি করে। তারা আমাকে ঠেসে ধরে মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরে ওই পকেটমার চলন্ত ট্রেন থেকেই বাবর আলী গেইট এলাকার সিগনালের কাছে লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে যায়।’

একইভাবে ট্রেনে উঠার সময় রেলযাত্রী আব্দুল হালিম, খালিদ হোসেন নামের ব্যক্তিদের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যায় পকেট মার চক্র। গত দুই মাসে কেবলমাত্র কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে রেলযাত্রীদের ২০টি পকেটমারের ঘটনা ঘটেছে এমন অভিযোগ আছে বলে জানান কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনের ইনচার্জ ইতিয়ারা খাতুন।

ইতিয়ারা খাতুন বলেন, প্লাটফর্মের তুলনায় ট্রেনের দৈর্ঘ্য বড় হওয়ার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা বিষয়টি লক্ষ্য করছি। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, এটি সাময়িক অসুবিধা। আমরা ইতোমধ্যে নতুনভাবে প্লাটফর্ম সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে নতুন প্লাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে। যাত্রীদের ট্রেনে ওঠা-নামার ভোগান্তী তখন কমে যাবে।’ 

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়