ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি বাড়লেও রয়েছে ঝুঁকিসীমার নিচে 

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি বাড়লেও রয়েছে ঝুঁকিসীমার নিচে 

সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি বেড়েই চলেছে। তবে এখনও তা ঝুঁকিসীমার নিচে রয়েছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণস্থিতি বেড়েছে দুই লাখ ৭৭৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি (দেশি ও বিদেশি) ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা (জিডিপির ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ)। এক বছরের ব্যবধানে গত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে ঋণস্থিতি (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ঋণস্থিতি বেড়েছে ২ লাখ ৭৭৬ কোটি টাকা এবং জিডিপির অনুপাতে বেড়েছে ১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব সার্বিক ঋণের স্থিতির ওপর গিয়ে পড়েছে এবং এ কারণে সার্বিক ঋণস্থিতি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৬১% ও জিডিপির ২১.৩২%) এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা (এটি মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৩৯% ও জিডিপির ১২.৪৭%)। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পুঞ্জিভূত স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৭ লাখ ২২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা এবং ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে গৃহীত ঋণের তুলনায় ব্যাংক-বহিভূত খাত থেকে সরকার বেশি ঋণ নিয়েছে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে গৃহীত সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা (২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে ছিল ৩ লাখ ২৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা) অন্য দিকে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা (২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে ছিল ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা)। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে গৃহীত পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা (২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষে ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা)।

সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্র খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম এ খাতে সরকারের ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। একইভাবে অভ্যন্তরীণ ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটেরও সংস্কার প্রয়োজন।

অন্য দিকে সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দ্বিপক্ষীয় উৎসের তুলনায় বহুপক্ষীয় উৎস থেতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত বহুপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা (পুঞ্জিভূত মোট বৈদেশিক ঋণের ৬২%) এবং দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৪০২ কোটি টাকা (পুঞ্জিভূত মোট বৈদেশিক ঋণের ৩৮%)।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ‘মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ আরও আধুনিকায়ন করা হবে এবং আঙ্কটাডের কারিগরি সহায়তায় অর্থ বিভাগে ‘ডেট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিস সিস্টেম’ নামে একটি কাস্টমাইজ ডেটাবেজ স্থাপন করা হবে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়