কার্বন ক্রেডিট বাজারে ভূমিকা রাখতে প্রয়োজন কার্যকর নীতি-বিনিয়োগ
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
![কার্বন ক্রেডিট বাজারে ভূমিকা রাখতে প্রয়োজন কার্যকর নীতি-বিনিয়োগ কার্বন ক্রেডিট বাজারে ভূমিকা রাখতে প্রয়োজন কার্যকর নীতি-বিনিয়োগ](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024April/risingbd2-2405161443.jpg)
২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন ফাইন্যান্সিং উদ্ভাবনী ফান্ডে পরিণত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্বন খাতে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এই খাতে বিনিয়োগ কম। এ জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা জরুরি। তফসিলী ব্যাংক ও বড় প্রতিষ্ঠানকে এই খাতে অর্থায়নে এগিয়ে আসতে হবে। কার্বনের বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করতে নীতিগত সহায়তাও প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটোরিয়ামে ‘এপ্লিকেশন অব কার্বন ফিন্যান্সিং : চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড পলিসি অপশন ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কার্যকর নীতি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট বাজারে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশের সামগ্রিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আজকের সেমিনারে ধারণার আদান-প্রদান আমাদের আরও বুঝতে সাহায্য করবে কীভাবে আমরা কার্বন অর্থায়ন সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারি এবং কীভাবে আমরা কার্বন ক্রেডিট তৈরির জন্য নতুন উৎস অন্তর্ভুক্ত করে সুবিধা নিতে পারি।
ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বর্তমান সরকার যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উপযোগিতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, যার অন্যতম উদাহরণ পদ্মাসেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএস’র রিসার্স ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর। মূল প্রবন্ধে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বতর্মানে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণে বেশি কার্বন উৎপাদিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কার্বন খাতে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এই খাতে বিনিয়োগ কম। যার কারণে কার্বন বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নগন্য। কার্বনের বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করতে নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ শতাংশ, পরিবহন খাত ১৫ শতাংশ, কৃষি খাত ১২ শতাংশ, জ্বালানির ব্যবহার খাতে ১২ শতাংশ, আবাসন খাতে ৭ শতাংশ এবং বর্জ্য খাতে ৫ শতাংশ কার্বন উৎপাদিত হয়েছে।
মাহফুল কবীর বলেন, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন ফাইন্যান্সিং উদ্ভাবনী ফান্ডে পরিণত হবে। উন্নয়ন দেশগুলির জন্য টেকসই শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
আলোচনায় ইউএনডিপির প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট আরিফ এম ফয়সাল বলেন, কার্বন ফাইন্যান্সং এগিয়ে নিতে একটি সুস্পস্ট নীতিমালা প্রণয়ণ জরুরি। নীতিমালায় কার্বন বাজারকে আকৃষ্ট করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই খাতে অনেক দূর এগিয়েছে।
বিজিএমইএ’র পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে ২১৭টি গ্রীন কোম্পানি রয়েছে এবং গ্রীন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে আরও ৫০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গ্রীন প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও ইকোনমিক জোন থেকে যেভাবে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, প্রকৃতপক্ষে সেটি পাওয়া যায় না। সেই কারণে গ্রীন কারখানা নিয়ে আগ্রহ কিছুটা কমছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নজরুল ইসলাম বলেন, কার্বন ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আগামীতে এই ধরনের ইস্যু সম্মিলিতভাবে আলোচনা করতে হবে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট ইয়ান জো এলিসন ই। কার্বন ফাইন্যান্স বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. আইনুন নিশাত এবং প্রফেসর ড. হেলাল আহমেদ।
কার্বন ক্রেডিট মূলত এক ধরনের অনুমোদন, যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ১ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা অন্য কোনো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অধিকার লাভ করে। কার্বন ক্রেডিটের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো কার্বনের ওপর মূল্য ধার্য করে এর নিঃসরণ কমাতে উৎসাহ দেওয়া, যা পরিণতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করবে।
কার্বন ক্রেডিট হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন বাড়ানোর পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমানোর একটি পথ তৈরি করে দেয়। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমায় বা করে না, এমন সব প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিট অর্জন করা যায়।
হাসনাত/তারা