ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

আগামী অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২৫ মে ২০২৪   আপডেট: ১০:৪১, ২৫ মে ২০২৪
আগামী অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা

প্রতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়। এর ফলে গত পাঁচ বছরে সরকারে সুদ ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়েছিল ৫৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। যেখানে আগামী অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা অনেকখানি বাড়িয়ে এক লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে উচ্চসুদের হার, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই পরিস্থিতি মধ্যমেয়াদে আরও চ্যালেঞ্জিং হবে।

অর্থ বিভাগের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে শুধুমাত্র সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা। সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা নমনীয় ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু টাকার অবচিতি (ডিভ্যালুয়েশন) এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ থেকে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে সরকারি সিকিউরিটিজের কারণে। সরকারি বিলবন্ডের সুদ ব্যয় ১১ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশের ঘরে ওঠানামা করছে। যা আট মাস আগেও ছিল ৬-৭ শতাংশ। ফলে সরকারের সুদ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

এদিকে বাজেট ডকুমেন্ট থেকে দেখা গেছে, প্রতিবছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৯০ হাজার ১৩ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় হয় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় হয় ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সুদ ব্যয় ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয় ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ও বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

হাসনাত/ইমন/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়