ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আমার বিরুদ্ধে যা রটেছে সব সত্য নয়: নোলক বাবু

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ২৭ মার্চ ২০২১   আপডেট: ০৬:৪৩, ২৮ মার্চ ২০২১
আমার বিরুদ্ধে যা রটেছে সব সত্য নয়: নোলক বাবু

এলেন, গাইলেন, জয় করলেন- নোলক বাবু সম্পর্কে এভাবে বললে অত্যুক্তি হবে না। ২০০৫ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে চলে আসেন নোলক বাবু। আবার এটাও ঠিক যে, খুব অল্প সময়েই মুদ্রার ও-পিঠ দেখেছেন তিনি। বিভিন্ন কারণে হয়েছেন সমালোচিত। এরপর হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে যান প্রতিভাবান এই সংগীতশিল্পী। সম্প্রতি নোলক বাবুর মুখোমুখি হন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল। দু’জনের কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

রাহাত সাইফুল: আমরা জানি, আপনি কোনো সংগীত গুরুর কাছে তালিম নিয়ে গান শেখেননি। সংগীতের সঙ্গে আপনার সখ্য বা প্রেমের শুরুটা ঠিক কীভাবে হলো? 

নোলক: আমি গাইতে গাইতে গায়ক। ছেলেবেলা থেকেই খোলা কণ্ঠে গান গাইতাম। ৮ বছর বয়সেই আমি এলাকার অনুষ্ঠানে গান গাইতে মঞ্চে উঠেছি। আমার এলাকায় একটা বটগাছ আছে। লোকে ‘বটতলা’ বলে। বন্ধুবান্ধব মিলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওখানে বসে গান করতাম। জামালপুর স্টেশনে রেল লাইনের পাশে বসেও গান গেয়েছি অনেক দিন। গান শুনে লোকজন জমে যেত। তাদের অনেকেই খুশি হয়ে আমাকে খাওয়াত। আমি অনুপ্রাণিত হতাম। এছাড়া স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার আমি গান গাইতাম। 
আমার এক বড় ভাই আছে- টিপু। তার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল- কলোতান। তিনি আমাকে তার অনুষ্ঠানে মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ করে দিতেন। একদিন গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নামতেই তিনি আমাকে ৫০০ টাকা দিলেন। এটা ২০০০ সালের ঘটনা। আমি ফাইনালি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- আমি গায়ক হবো। আমি মূলত তখন ক্যাসেট শুনে শুনে গান শিখতাম। বারি সিদ্দিকী স্যারের গান বেশি শুনতাম।

রাহাত সাইফুল: ক্লোজআপ ওয়ানের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

নোলক: সে আরেক গল্প। আমি যখন ক্লোজআপ ওয়ানের খবর পেলাম, তখন নিবন্ধনের তারিখ পেরিয়ে গেছে। আমার এক কাজিন ক্লোজআপ ওয়ানে নিবন্ধন করেছিল। ও আমাকে বলল- আমি গাইব না। তুই আমার নাম নিয়ে নে। ওর নাম ছিল বাবু। রেজিস্ট্রেশনের সময় ও নাম দিয়েছিল ‘নোলক বাবু’। পরে ওর রেজিস্ট্রেশন পেপার শো করে আমি ক্লোজআপ ওয়ানে যুক্ত হই নোলক বাবু নামে। এ ঘটনা তখন কেউ জানত না। টপ সেভেনে আসার পর আমি কর্তৃপক্ষের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলি। আমার আসল নাম ফরহাদ।

রাহাত সাইফুল: মজার ঘটনা! এরপর ফরহাদ হয়ে গেল নোলক বাবু। আপনি তখন স্টার। কিন্তু হঠাৎ করে হারিয়ে গেলেন কেন?

নোলক: মাঝখানে আমি লন্ডন ছিলাম। বিএনপির পেট্রল বোমার যে আন্দোলন, এ সময় দেশে কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। তখন আমি লন্ডন চলে যাই। ফলে একটা গ্যাপ তৈরি হয়। কিন্তু আমি গান থেকে দূরে ছিলাম না। সেখানে প্রচুর অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি।

রাহাত সাইফুল: আপনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে মাদক অন্যতম।

নোলক: ভুলত্রুটি মানুষেরই থাকে। আমারও কিছু ছিল। তবে আমার বিরুদ্ধে যা রটেছে সব সত্য নয়। একবার পত্রিকায় ছাপা হলো: নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছিলাম বলে আমি রোড এক্সিডেন্ট করেছি। অথচ সেই গাড়িতে আমি ছিলামই না। আমার চাচাতো ভাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল। ও রেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।

রাহাত সাইফুল: কিন্তু আপনার বিরুদ্ধেই সব সময় রটে কেন?

নোলক: একটা সময় বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খুব মিশেছি। ক্লোজআপ ওয়ানে যখন ছিলাম তখন আমার বয়স মাত্র ১৮। গ্রামে বড় হয়েছি। গান গেয়ে হয়তো ১০০ টাকা পেতাম। ঢাকা এসে হঠাৎ করেই একসঙ্গে ১০ লাখ টাকা পেলাম, গাড়ি পেলাম। এই বিষয়গুলো আমাকে প্রভাবিত করেছে। কৃষকের ছেলেকে যদি রাজ সিংহাসনে বসিয়ে দেওয়া হয়, তখন ঘটনা বুঝতেও তার সময় লাগে। আমারও তাই হয়েছে। আমার ভালো গাইডও ছিল না। কিন্তু আমি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি।

রাহাত সাইফুল: সংগীতশিল্পী তৈরিতে রিয়েলিটি শো কতটা ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন?

নোলক: অনেক ভূমিকা রাখে। এনটিভি বা ইউনিলিভার যদি এটা না করতো আমি নোলক বাবু হতে পারতাম না। তবে রিয়েলিটি শো এখন বিজনেস হয়ে গেছে। আগে এতটা ছিল না। তখন ফেয়ার ছিল। এখন টাকা দিয়ে এসএমএস করেও অনেকে শিল্পী হচ্ছে। 
 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়