ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মিশা-জায়েদের কাঁধে লাশ, শিল্পীদের কুর্নিশ

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:০১, ১৯ এপ্রিল ২০২১
মিশা-জায়েদের কাঁধে লাশ, শিল্পীদের কুর্নিশ

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দি রয়েছেন মানুষ। করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করতে গিয়েও অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। ঠিক এই সময়ে সাত-পাঁচ না ভেবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ালেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।

গত ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান কিংবদন্তি অভিনেত্রী সাহারা বেগম কবরী। এ খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যান জায়েদ খান। সারারাত নির্ঘুম থেকে সকালে লাশের গোসল, জানাজা এবং সর্বশেষ নিজেরা লাশের খাটিয়া কাঁধে নিয়ে তার দাফন সম্পন্ন করেন। সেদিন এফডিসি বা চলচ্চিত্রের তেমন কারো দেখা মিলেনি।

অভিনেত্রী কবরীর অসুস্থতা, মৃত্যু আর দাফনের বিষয় নিয়ে ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার দিকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন জায়েদ খান। পাশাপাশি নায়ক ফারুক ও ওয়াসিমের অসুস্থতা নিয়ে বলছিলেন তিনি। ঠিক তখন তার অন্য ফোনে কল আসে। প্রতিবেদককে লাইনে রেখেই ফোনটি রিসিভ করেন তিনি। শোনা যায়, ইন্না লিল্লাহ… পড়ছেন জায়েদ খান। আর কাউকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তিনি।  

অপর ফোনটি রেখে জায়েদ খান জানান, নায়ক ওয়াসিম আর নেই। এরপরই হাসপাতালে ছুটে যান মিশা সওদাগর-জায়েদ খান। সেদিনও নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। পরেরদিন মরদেহের গোসল, জানাজা ও নিজেদের কাঁধে মরদেহ বয়ে নিয়ে বনানী কবরস্থানে দাফন করেন তারা। পরপর এই দুইদিনের কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। চলচ্চিত্রের অনেক গুণী শিল্পী ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। করোনাকালে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর জন‌্য প্রশংসায় ভাসছেন তারা।

এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান নন্দিত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। তাকে দাফন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন জায়েদ খান। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় দাফন সম্পন্ন করেন মিশা-জায়েদ। তাদের কাজে উচ্ছ্বসিত সোহেল রানা। তিনি লিখেছেন, ‘মিশা-জায়েদ তোমরা আমাদের গর্ব। তোমাদের এই সেবার প্রতিদান আল্লাহ কেয়ামতের দিন দেবেন। আমার দোয়া সবসময় তোমাদের জন‌্য থাকবে।’

মেগাস্টার উজ্জল মিশা-জায়েদকে ‘করোনা বীর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘‘শিল্পী সমিতির বর্তমান প্রধান নেতাসহ অন্যান্যরা প্রমাণ করেছেন শিল্পীরাই তাদের ভাই, বোন, পরিবার, আত্মার আত্মীয়। করোনার কারণে যেখানে আপনজনেরা পর হয়ে যায় সেখানে জায়েদ মিশা প্রমাণ করলো চলচ্চিত্রের মানুষেরাই ওদের জীবন-মরণ। নিঃসন্দেহে ওরা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের ‘করোনা বীর’। দোয়া করি আল্লাহ যেন ওদের হেফাজত করেন।’’

অঞ্জনা রহমান ফেসবুকে লিখেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি, স্নেহের ছোট ভাই মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক, প্রিয় ছোট ভাই জায়েদ খান। সত্যিকার অর্থেই তোমাদের দুইজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর মতো ভাষা জানা নেই। সেই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে নিজের জীবনের মায়া উপেক্ষা করে, মানুষের জন্য সকল শিল্পীদের যেকোনো বিপদে যেভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছো, সকলকে যেভাবে সহযোগিতা করেছো, সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

মিশা-জায়েদ খানের জন‌্য দোয়া প্রার্থনা করে অঞ্জনা লিখেন, ‘মহান আল্লাহ তা’লা তোমাদেরকে নেক হায়াত দান করুক এবং সবসময় তোমারদের সুস্থ রাখুক। যেন এভাবেই তোমরা সারাটা জীবন মানুষের পাশে থেকে মানবতার স্বার্থে, মানব কল্যাণের জন্য কাজ করে যেতে পারো। মহান আল্লাহ তা’লা তোমাদেরকে আরো বেশি সম্মানজনক স্থানে অধিষ্ঠিত করুক, মন থেকে এই দোয়া রইলো তোমাদের জন্য। তোমাদের নিয়ে গর্ব করি।’

সম্প্রতি বেশ কজন বরেণ‌্য ব‌্যক্তিকে হারিয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। তাদের স্মরণ করে নায়িকা রোজিনা লিখেন, ‘একে একে চলচ্চিত্র জগতের অতি শ্রদ্ধাভাজন ও আমার প্রিয় মানুষগুলো চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে। এক সময় একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। কত স্মৃতি! আজ তা মনকে ভারাক্রান্ত করছে। এই কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না। সব মৃত্যুই মৃত্যু নয়, আজ ওনারা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু উনাদের শিল্পকর্মে, আজীবন বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। ওপারে ভালো থাকবেন।’

জায়েদ খান ও মিশা সওদাগরের প্রশংসা করে রোজিনা লিখেন, ‘যেকোনো বিপর্যয়, দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় এবং বিশেষ করে করোনার এই ক্রান্তিকালে জায়েদ খান ও মিশা সওদাগর নিজেদের জীবন বিপন্ন করে শিল্পীদের সার্বিক সহযোগিতায় পাশে দাঁড়িয়েছে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। শুধু ধন্যবাদ দিয়ে জায়েদ খান ও মিশা সওদাগরকে মূল্যায়ন করা যাবে না। আমার মতে, এ রকম মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন নেতাদের প্রয়োজন শিল্পীগোষ্ঠীর জন্য। তোমাদের জন্য অনেক দোয়া রইলো। মহান আল্লাহ পাক সর্বদা তোমাদের সহায় হোক।’

রোজিনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক নিজামূল কবীর। তিনি লিখেন, ‘করোনার সময়ে সন্তান তার মৃত বাবা-মায়ের লাশ দাফন করতে যায় না। অসুস্থ মাকে বাইরে ফেলে আসার ঘটনাও ঘটেছে। এ রকম একটি ভীতিকর সময়ে সহকর্মীর লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে নিজ কাঁধে বহন করে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়