ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নিম্ন রুচির গান ভাইরাল হচ্ছে’ 

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৭ মে ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৫, ১৭ মে ২০২১
‘সোশ্যাল মিডিয়ায় নিম্ন রুচির গান ভাইরাল হচ্ছে’ 

দেশের ব্যান্ড সংগীত সোনালি সময় হারিয়ে ফেলেছে। নানা প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যে গান শ্রোতার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল, তা ধরে রাখতে পারেনি পরবর্তী প্রজন্ম। এই ব্যর্থতার কারণসহ বাংলা ব্যান্ড সংগীতের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ‘আভাস’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা তানযীর তুহীন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান কবির।

রাইজিংবিডি: নব্বই দশকের ব্যান্ড সংগীতের জোয়ার এখন নেই। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

তুহীন: এখন টেকনলজিক্যালি সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে। আগে মানুষ ক্রিয়েশনের ওপর ভরসা রাখত; নিজের মৌলিক দম্ভ ছিল, আনন্দ ছিল। ফেসবুক আসার পর থেকেই গান-বিনোদন সব কম্পিটেটিভ জায়গায় চলে এসেছে। যারা গানের ফিডব্যাক ফেসবুকে দিচ্ছে তাদের বেশিরভাগ অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত। সেই মানুষগুলো তাদের পছন্দের গান নিয়ে মতামত দিচ্ছে, লাইম লাইটে নিয়ে আসছে। আর আমাদের গানের মার্কেটিং-এ যারা আছেন, তারা দেখছেন যে, এই শ্রেণীর শ্রোতাদের ৭০ ভাগ লোকই সস্তা, চটুল টাইপের। ফলে তারা তাদের জন্য তেমন ধরনের গানে ইনভেস্ট করছে। কিন্তু এই ধরনের গান কখনোই ৫ বছরের বেশি লাস্টিং করে না। কিন্তু নব্বই দশকের গানগুলো আপনার আমার স্মৃতিতে আছে। আজকে আমরা টিকে আছি সেই গানগুলোর জন্যই। তবে ব্যান্ডের হাইপ আমার মনে হয় না নব্বই দশকের চেয়ে খুব একটা কমে গেছে। হয়তো মার্কেটিং পলিসি চেঞ্জ হয়েছে, একটা গান রিলিজ দিয়ে লগ্নি তুলে আনার প্রক্রিয়া বদলে গেছে। কিন্তু সবগুলো ইউনিভার্সিটিতে দেখবেন কনসার্ট হচ্ছে।

রাইজিংবিডি: আপনি বললেন, এখনকার শ্রোতা চটুল ধরনের গান পছন্দ করছেন। এর কারণ কি ব্যান্ডগুলোর ধারাবাহিকতার অভাব?

তুহীন: ব্যান্ডগুলো পরম্পরায় ভালোটা দেয়ারই চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে মার্কেট, আমাদের শ্রোতাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, তারা কি ধরনের গান শুনছে এবং সর্বোপরি মিডিয়ার অবদান আছে। মিডিয়া যদি আরেকটু সরব হয় ব্যান্ডগুলোকে নিয়ে, ভালো গান নিয়ে, তাহলে অবশ্যই ব্যান্ড বা ভালো গান টিকে থাকবে। আমাদের দেশে এতো ঘটনা ঘটে, এতো অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রয়োজনীয় ঘটনা ঘটে, সেসব ঘটনায় মানুষ যুক্ত হতে গিয়ে বা মজা নিতে গিয়ে বা জানতে গিয়ে তাদের ইনভলবমেন্ট সেখানেই থাকে। ফলে কাজের জায়গায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এটাই মূল সমস্যা।

রাইজিংবিডি: পাশের দেশ ভারত কীভাবে তাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রেখেছে?

তুহীন: ভারত দেড়শ কোটির দেশ, আমাদের ১৭ কোটির দেশ। ওদের দেশে জনসংখ্যার সঙ্গে শ্রোতা বেড়েছে। আমাদের সেরকম শ্রোতা কিন্তু বাড়েনি। ওদের বাজার অনেক বড়। ওদের একটা বাজে গান বা ফ্লপ গান একবার যদি কেউ শোনে তাহলেও টাকাটা উঠে আসে। ওদের দেশপ্রেম, ডেডিকেশন সব কিছুই অনেক বেশি। শুধু ব্যান্ডের লোকদের দেশপ্রেম থাকলেই হবে না, শ্রোতাদের থাকতে হবে, মিডিয়ার মানুষদের থাকতে হবে। একইসঙ্গে যারা এর বাজারজাতকরণে আছে তাদেরও দেশপ্রেম থাকা দরকার। সবাই যেদিকে ব্যবসা, সেদিকেই ছুটছে। হিরো আলমের মতো একজন মানুষ একটা পঁচা গান গাইলেও সেটা ভাইরাল হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ৭০ ভাগ অশিক্ষিত ইউজার এগুলোকেই ভাইরাল করছে।

রাইজিংবিডি: বর্তমানে তরুণ শিল্পীদের কাছ থেকে আমরা তেমন গণমুখী বা প্রতিবাদী গান পাচ্ছি না। 

তুহীন: ভালো গীতিকারের অভাব। আগের মানুষগুলো অনেক নির্ভার ছিল। এখনকার মানুষের মতো এতো তথ্য তাদের মাথায় ছিল না। এখন মানুষের ব্রেইন তথ্যে ঠাঁসা। এই যে একটি চ্যানেলের মালিক গান গাইছেন, তিনি কি চ্যানেলে প্রচার করার মতো গান গাইছেন? যে গান দেশবাসীর শোনার মতো? তার জায়গায় যদি আরও দশটা ছেলে গান গাওয়ার সুযোগ পেতো তাহলে গানের জায়গাটা আরও সমৃদ্ধ হতো।

রাইজিংবিডি: একটা সময় দেশের ব্যান্ড শিল্পীরা আক্ষেপ করতেন- দেশে ডেডিকেটেড মিউজিক চ্যানেল নেই, গান প্রচারের মতো রেডিও নেই। এখন তার সবই আছে। তারপরও আমরা সেরকম সাড়া জাগানো কোনো ব্যান্ড খুব বেশি পাচ্ছি না কেন?

তুহীন: আসলে সব শিল্পেই আপস অ্যান্ড ডাউন থাকবে। শিল্পের ধারায় একটা সময় ভালো শিল্পী আসবে, আবার একটা সময় থমকে যাবে- এটাই নিয়ম। আমাদের একটা ভালো সময় গেছে, তবে এখনও কিন্তু পোটেনশিয়াল ছেলেমেয়েরা আছে। তাছাড়া অ্যালবাম কম রিলিজ হচ্ছে বলেই এমন মনে হয়। এর কারণ হচ্ছে এখন সব ব্যান্ডেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে কিন্তু তারা গান রিলিজ করে। তবে এখন আর ৮/১০টা গান আসবে না। কারণ মার্কেটের ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি চেঞ্জ হয়ে গেছে। ইউটিউব বা অনলাইনে মানুষের গান শোনার প্রবণতা বেড়েছে।

রাইজিংবিডি: এখন ইউটিউবে গান রিলিজ হচ্ছে। এখান থেকে কি লগ্নি তুলে আনা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন? 

তুহীন: নিউ জেনারেশন কিন্তু ইউটিউবকে অ্যাডাপ্ট করেছে। মোবাইলটা তাদের হাতেই থাকে। ফলে ইউটিউব থেকে লগ্নি তুলে আনা অসম্ভব কিছু না।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়