ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পরিচালক সমিতির ৪০ বছর: কিছু কথা কিছু ব্যথা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১  
পরিচালক সমিতির ৪০ বছর: কিছু কথা কিছু ব্যথা

চলচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিজের মধ্যে ধারণ করে পরিচালক নির্মাণ করে থাকেন পরিপূর্ণ একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে একজন নির্মাতাই সব, তাকে বলা হয় ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’। ১৯৮১ সালের ২৯ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র নির্মাতারা গঠন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সংগঠনটি ৪০ বছর পার করছে। বিশেষ এই দিনটি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

এ দেশে আবদুল জব্বার খান, ফতেহ লোহানী, এহতেশাম, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, সুভাষ দত্ত, শিবলি সাদিকের মতো নির্মাতার জন্ম হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থাকবে ততদিন তাদের নাম শ্রদ্ধাভরে ম্মরণ করবেন দেশের মানুষ। নামের সঙ্গে নির্মাতা কথাটি লিখতে গিয়ে তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। রাতারাতি নির্মাতার তকমা পেয়ে যাননি তারা। গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এমনো হয়েছে বিনা বেতনে দিনের পর দিন কাজ করতে হয়েছে তাদের।

তা ছাড়া চলচ্চিত্রকে ঘিরে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার পর তারা পরিচালকের আসনে বসেছেন। দর্শক নন্দিত নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন প্রতিষ্ঠা। এসব নির্মাতাদের নাম শুনেই দর্শক হলে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। অথচ এদের অনেকে এখন তাদের ভাবনা, দর্শন অনুযায়ী সিনেমার কাজ না পাওয়ার কারণে নির্মাণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কর্মহীন দিনাযাপন করায় অনেকে অর্থ কষ্টেও ভুগছেন। আক্ষেপের বিষয় হলো, গত কয়েক বছরে চলচ্চিত্র নির্মাণে আসা তরুণদের মধ্যে এমন কারো আবির্ভাব হয়নি যাকে গুণী ওই নির্মাতাদের উত্তরসুরী হিসেবে বিবেচনা করা যায়!

শিপ বা জাহাজ পরিচালনা করার জন্য ক্যাপ্টেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেনের জন্য হয়তো কেউ জাহাজ নির্মাণ করবেন না। ঢাকাই চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি না পেলেও চলচ্চিত্র নির্মাতার তালিকা প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে। নতুন এসব নির্মাতার মধ্যে হাতেগোনা কিছু নির্মাতা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাকি সব নির্মাতারা শুরুতেই হোচট খেয়েছেন। তবে নির্মাতার তকমা থেকেই গেছে তাদের নামের সঙ্গে। ঢাকাই চলচ্চিত্রে এমন অনেক নির্মাতা রয়েছেন, যারা জীবনে একটি সিনেমা নির্মাণ করেই বছরের পর বছর নির্মাতার সদস্য পদ নিয়ে বসে আছেন। প্রতি নির্বাচনে ভোটও দেন তারা।

বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সদস্যপদ বাতিল হবে এবং এটি খুব জোড়ালোভাবে অনুসরণ করা হয়। কিন্তু সিনেমার মান খারাপ হলে অথবা দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণ না করলে সদস্যপদ বাতিল হবে এমন কোনো নিয়ম বা শর্ত এই সমিতিতে নেই। অন্যদিকে গুণী অনেকে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নিমার্তারা কাজ থেকে যেন বাধ্যতামূলক অবসর নিয়েছেন। তাদের হাতে কোনো সিনেমা নেই। এদেরকে বেকার না বলে অবসর বলাটাই ঝুঁকিমুক্ত। এদের জন্য বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে—ক্যাপ্টেন আছেন কিন্তু শিপ নেই!

২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নতুন করে চলচ্চিত্র নির্মাতার তকমা লাগিয়েছেন ৯৭ জন। এদের মধ্যে হাতে গোনা দু-একজন ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৭ সালে মোট সদস্য ছিল ৩৭২ জন। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৬০০ জন। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহগুলো সিনেমা সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। করোনা মহামারিতে গত দেড় বছরে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংখ্যা আরো কমে এসেছে! আসছে নতুন বছরে চলচ্চিত্রপাড়া আবারো নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণায় মুখরিত হবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে একজন পরিচালককে নামে মাত্র ক্যাপ্টেন হিসেবে রাখা হয়। নির্মাতারা ক্রমাগত প্রযোজক বা সুপার স্টারদের দারস্থ হতে হতে এখন তাদের ইমেজ যেন তলানিতে ঠেকেছে। ব্যক্তিগত কাজে নিজেদের পরিচালক বলে পরিচয় দেওয়ার জন্য তারা ‘পরিচালক’ তকমাটি গ্রহণ করছেন। আর এভাবেই এ দেশের চলচ্চিত্র পরিচালক নামক যে সত্তাটি রয়েছে তা মৃত প্রায় অবয়বে কোনোরকম টিকে আছে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়