ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

খাঁচাবন্দি পাখি, কী ভাবছেন তারা?

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২১ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৮:৩৫, ২১ আগস্ট ২০২২
খাঁচাবন্দি পাখি, কী ভাবছেন তারা?

খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখানোর অভিযোগে নাট্যনির্মাতা অনন্য ইমনের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট’। এর রেষ কাটতে না কাটতেই সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

বিষয়টি নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। কী ভাবছেন চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীরা? ঢালিউডের স্বনামখ্যাত পরিচালক ও চলচ্চিত্র গবেষক ড. মতিন রহমান বলেন, ‘সরকারের এমন নিয়ম যদি থাকে তা হলে অবশ্যই সরকার ব্যবস্থা নেবেন, সেটা আলাদা। এই আইন কবে হলো? আর এই আইন হওয়ার পর এটি কি প্রথম সিনেমা, যেখানে বন্য প্রাণী আটকে রাখা হলো?’

দোকানে খাঁচায় বন্দি রেখে পাখি বিক্রি হচ্ছে। তা উল্লেখ করে মতিন রহমান বলেন, ‘নীলক্ষেতে যে পাখিগুলো আটকে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেয়া হচ্ছে না? বাজারে গেলেও তো দেখা যায়, কবুতর খাঁচায় আটকে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানায় অনেক প্রাণী বন্দি রাখা হয়েছে। এমনওতো শুনেছি সেগুলো অনাহারে মারাও যাচ্ছে! এই প্রশ্নগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠছে। এগুলো অবহেলা করার সুযোগ নেই। আইন থাকলে অবশ্যই প্রয়োগ হবে। একটা সিনেমা হিট হয়েছে, সেটাকে আটকে দিয়ে একটা সংস্কৃতির তরঙ্গমালাকে নষ্ট করে দেয়া।’

সেন্সর বোর্ডের নীতিমালায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মতিন রহমান। এ পরিচালক বলেন, ‘সেন্সর নীতিমালায় কী আছে? তাতে এই বিষয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা সমস্যা মনে করলে পরিচালক-প্রযোজককে ডেকে বিষয়টি সর্তক করলেই পারতেন। সিনেমা হলে গিয়ে বড় বড় ইন্টারভিউ দেয়াটা আমার শোভনীয় মনে হচ্ছে না। এখানে পরিচালকের একটা বক্তব্য থাকতে পারে। সেটা না নিয়েই মিডিয়ায় প্রকাশ করে সিনেমার ক্ষতি করা হলো। বিষয়টিতে কষ্ট পেয়েছি।’

নন্দিত নির্মাতা কাজী হায়াৎ বলেন, ‘একটা সিনেমা নির্মাণের সমস্ত অধিকার একজন নির্মাতার থাকে। এগুলো হাস্যকর। আমার মনে হয়-সিনেমাটিকে আরো জনপ্রিয় করার একটা প্রচেষ্টা নয়তো! সিনেমাটি ভালো হয়েছে। এই কথা শুনেছি। সিনেমাটি দেখিনি; তবে খুব শিগগির দেখবো।’

জনপ্রিয় নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী আটকে রাখা হয়; ওগুলো নিয়ে কোনো মামলা হচ্ছে না। সিনেমায় আমি যখন খুনের দৃশ্য দেখাই তার মানে আমি খুন করে ফেলি! তা হলে তো খুনের মামলা হতে পারে।’

পরামর্শ দিয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সিনেমায় যেমন ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর বড় জোর এমন একটা কথা লেখা দিতে পারে— পশু-পাখি খাঁচায় রাখা ঠিক না। বিশ কোটি টাকার মামলা দেয়াটা ফাইজলামি। পাঁচটা মানুষ গার্ডার পরে মারা গেছে, সেখানে পাঁচ কোটি টাকার মামলা হলো আর একটা শালিক পাখির জন্য ২০ কোটির টাকার মামলা। বণ্যপাখি সংরক্ষণ বিভাগ মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ওরা নাম চায়, একটু ভাইরাল হতে চায়। যেখানে যেভাবে দরকর সেটা না করে ভাইরাল হওয়ার জন্য এসব করছেন।’

সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ সিনেমার প্রযোজক, লাইভ টেকনোলজিসের পরিচালক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী প্রয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন প্রযোজক যখন অর্থলগ্নি করেন; তখন কিন্তু সব আইন সম্পর্কে অবগত থাকেন না। আইনের লঙ্ঘন হলে সেটা সেন্সর বোর্ড আটকে দিবে বা কর্তন করবে। কিন্তু ‘হাওয়া’ সিনেমায় ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন এবং সিনেমা হলে বেশ ভালোভাবেই চলছে। এখন এসে একজন নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো। এতে সিনেমাটি আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। তাতে করে প্রযোজক-নির্মাতা সিনেমা নির্মাণে আগ্রহ হারাবে। সেন্সর বোর্ডে এমন নির্দেশনা থাকলে আগেই হয়তো সর্তক হওয়ার সুযোগ থাকতো। সুমনের বিরুদ্ধে যে মামলা হলো সেটা দুঃখজনক।’’

এদিকে ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এ অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমি এক আন্টির বাসায় বেড়াতে এসেছি। এখানে এই পাখিটা আছে, এটি একটি ময়না পাখি। ও এখনো কথা বলা শেখেনি, খুব ছোট। যেটা বলার জন্য এই লাইভ করছি, তাহলে কি এই আন্টির নামে ২০ কোটি টাকার মামলা হবে? কী করা উচিত? আন্টি যে এই ময়না পাখিটা পালে, তার নামে কি ২০ কোটি টাকার মামলা করা উচিত? আমার বাসায় যদিও নেই, তবে দেশের কোটি কোটি বাসায় এ রকম ময়না পাখি, বিভিন্ন পশুপাখি পালা হয়। যদি সবার নামে মামলা না হয়, তাহলে কেন ‘হাওয়া’র নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো? আজব একটা কারণে মামলাটি করা হলো, আমি জানি না এর মধ্যে কী আছে।”

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে মাহি বলেন, ‘জানি না এই আইনে কী আছে; যদি থাকে তাহলে বলব, এই আইনে পরিবর্তন আনা উচিত। আমার এরকম অনেক সিনেমা আছে, যেখানে আমরা পাখি খাঁচায় বন্দি দেখিয়েছি। তাহলে কি সেই সিনেমার বিরুদ্ধেও মামলা হবে? এটা তো একটা চিন্তার বিষয়।’

ভালো সিনেমার পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাহিয়া মাহি বলেন, “একটা ভালো জিনিসের পেছনে কেন আমরা লাগি, আমি বুঝি না। এই জিনিসগুলো আসলে বদলানো উচিত। যে বা যারা এই মামলা করেছেন, এগুলো করবেন না। এমন মনোভাব পরিবর্তন করে ফেলুন। এরকম একটা মামলা দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, এত সুন্দর একটা সিনেমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, এটা আসলে আমার খুব খারাপ লাগছে। চলুন সবাই মিলে ‘হাওয়া’ দেখতে যাই, ‘পরাণ’ দেখতে যাই। ভালো সিনেমার পাশে থাকি, ভালো সিনেমাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করি। নিচ থেকে এরকমভাবে পা টেনে না ধরি।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়