ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

শেষজীবনে বাংলাদেশে থাকতে চাই: কবীর সুমন

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শেষজীবনে বাংলাদেশে থাকতে চাই: কবীর সুমন

বাকি জীবনটা বাংলাদেশে বসবাসের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন দু্ই বাংলার নন্দিত সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন তিনি।

দীর্ঘ স্ট্যাটাসের শুরুতে কবীর সুমন লেখেন, ‘‘এই কথা আমি আগেও অনেকবার বলেছি। তাও ফের বলছি, কারণ আমার কথায় কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন নয় যে, সনাতনধর্মীয় নামধারী কোনো বঙ্গজ আমায় সম্মান করেন না। মুষ্টিমেয় কিছু বঙ্গজ করেন। কিন্তু বড্ড বেশি সংখ্যক সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ আমায় ঢাক পিটিয়ে ঘৃণা করেন এবং তা জাহির করে সনাতনী সুখ পান। আর এক শ্রেণির সনাতন-বঙ্গজ আছে, যারা আমায় কবীর নামে ডাকতে চায় না। এরা যা দেখেছি ‘বামপন্থী’।’’

নিজের নামের আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে কবীর সুমন লেখেন, ‘২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমার নাম ভারতের সংবিধান মোতাবেক, ঘোষিতভাবে কবীর সুমন। ফার্স্ট নেম ‘কবীর’, সার্নেম ‘সুমন’। আমার আয়কর ফাইল, রেশন কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, আধার কার্ড সর্বত্র এই নামটাই আছে। এই নামে আমি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে মাননীয় সিপিআইএম সদস্য ডক্টর সুজন চক্রবর্তীকে হারিয়ে দিয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলাম। ভারতের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম বাংলায় তা সকলের জানার কথা। তা সত্ত্বেও সিপিআইএম করা বঙ্গজরা আমায় আমার বর্জিত নামে ডাকেন। শুধরে দিলেও শুধরে নেন না। আর নকশালপন্থী দলের বঙ্গজ নেতাও (নামে সনাতনধর্মীয়) আমায় ভুলেও কবীর সুমন বলেন না, কবীর তো নয়ই। তিনি অবিরাম সুমন সুমন করে যান। এদিকে সকলেই নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার বলতে গদগদ। আর একদল আছে, যারা আমায় গানওলা বলে ডাকে। কী বলি।’

বাকি জীবনটা বাংলাদেশে বসবাস করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে কবীর সুমন লেখেন, ‘যা বুঝেছি, আমায় নির্দ্বিধায় সম্মান করেন যারা, প্রাপ্য সম্মানটুকু দেন যারা, তারা সদলবলে বাঙলাদেশের নাগরিক। পশ্চিম বঙ্গের সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মতো বাংলাদেশের কেউ আমায় সমানে, যেকোনো উপায়ে অপমান করে যান না। আর মাসখানেক পরে আমি ৭৫ পুরো করে ৭৬-এ পড়ব। কলকাতা আমার প্রথম প্রেম। কলকাতা নামটা আমার গানে যতবার এসেছে আর কারুর কবিতায় গানে তা আসেনি। আমায় যারা বাঁচিয়ে রেখেছেন তারা সকলেই কলকাতার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ। তাদের ছেড়ে থাকতে পারব না। কিন্তু কারুর কোনো ক্ষতি না করা সত্ত্বেও সমানে অপমানিত হতে হতে এবারে আমি চাইছি এই দেশটা, মায় এই শহরটাও ছেড়ে চলে যেতে। এখানকার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মধ্যে অন্তত দুজন ফেসবুকে ঘোষণাও করেছেন ‘হাসপাতাল থেকে ফিরে না এলেই ভালো হতো’। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু লেখেনি। আমার শেষ জীবন আমি যদি বাংলাদেশে থেকে আমার মাভাষার সেবা করতে পারতাম, বাংলা খেয়াল শেখাতে পারতাম, আমার আজকের স্বাস্থ্য যতটা অনুমতি দেবে ততটা অন্তত।’

নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী দাবি করে কবীর সুমন লেখেন, ‘আমি অজ্ঞেয়বাদী। মরে যাবার পর কোনো ধর্মীয় শেষকৃত্যের প্রশ্নই উঠবে না। আমার দেহ দান করা আছে। বাংলাদেশে মরলে সেখানকার কোনো হাসপাতালে আমার শরীর কাজে লাগানো যেতে পারে। আজও আমি ফেসবুকে আমার সম্পর্কে সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের খিস্তি পড়েছি। এতে আমার মধ্যে কোনো উত্তেজনা জাগেনি। জাগছে এই ‘বিদেশটা’ ত্যাগ করে ভাষা মতিনের দেশে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া, সেই দেশের কাজে লাগার ইচ্ছে।’

মমতা ব্যানার্জির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কবীর সুমন লেখেন, ‘প্রকাশ্যে সাহায্য ও আশ্রয় চাইছি। এই রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলা খেয়ালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, রাজ্য ক্লাসিক্যাল মিউজিক কনফারেন্সে আমায় বাংলা খেয়াল গাইতে দিয়েছেন। এ রাজ্যের একজন শিল্পীও কিন্তু সংহতি জানাননি আমার সঙ্গে। যতদিন বেঁচে থাকব শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, তার পক্ষে থাকব। কেউ যদি পারেন আমায় সাহায্য করুন। জয় বাংলা।’

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়