ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

মৃত মানুষের মাথা নিয়ে যত কাণ্ড

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ৯ অক্টোবর ২০২৩  
মৃত মানুষের মাথা নিয়ে যত কাণ্ড

বহু পুরোনো কিংবা ইতিহাসের বিখ্যাত নানা জিনিস সংগ্রহ করেন অনেকে। কিন্তু মৃত মানুষের মাথা সংগ্রহ করার বাতিক খুব কম মানুষেরই আছে। অথচ এই কাজটি করেছেন ব্রিটিশ সৈনিক হোরাশিও গর্ডন রোবলে। যদিও এর পেছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস। 

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত  নিউজিল্যান্ড। এখানকার প্রাচীন জাতির নাম মাউরি। এই জাতির মানুষ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী। মাছধরা এবং কৃষিকাজ ছিল এদের জীবনধারণের অন্যতম মাধ্যম। তবে এ জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এরা মুখজুড়ে ট্যাটু করতো। পুরুষ কিংবা মহিলারা সমাজে জাত ও সম্মান বুঝে ট্যাটু করতো। ট্যাটু করার এই রীতিকে বলা হয় মোকে।

মাউরি জাতির কেউ মারা গেলে এদের মাথা সংরক্ষণ করা হতো। প্রথমে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে এরপর চোখ, মস্তিষ্কসহ পচনশীল অংশ আঠা দিয়ে প্রবেশ করানো হতো  মাথার খুলিতে। এরপর রোদে শুকানো হতো। এ কাজে হাঙর মাছের তেল ব্যবহার করা হতো। এই সংরক্ষণ পদ্ধতিকে বলা হয় মোকোমোকাই। কয়েকশো বছর এভাবে সংরক্ষণ করা হতো মাথা। তবে সবার মাথা সংরক্ষণ করা হতো এমন নয়। এটি ছিল সম্মানের ব্যাপার। এবং সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের মাথা সংরক্ষণ করা হতো। এ ছাড়াও মাউরি সম্প্রদায়ের কোনো মানুষ অন্য জাতির কাউকে হত্যা করতে পারলে মিলতো এই সম্মান। 

দ্রুত এই খবর ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। বিশ্বব্যাপী শাসন করা ইউরোপীয়রা এরপর মেতে উঠলো নতুন নেশায়। মাউরিদের ছলে-বলে বাধ্য করে মাথা কেনা শুরু করলো তারা। এতে একসময় সংরক্ষিত মাথার পরিমাণ কমতে শুরু করলো। এরপর নিউজিল্যান্ডে শুরু হলো ডিভাইড অ্যান্ড রুল। উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ সেখানে নতুন কোনো ঘটনা ছিল না। এতে প্রাণ যেতো অনেকেরই। ব্রিটিশরা এই সুযোগ নিতে শুরু করলো। তারা দুই পক্ষের হাতেই তুলে দিতো বন্দুক। কারণ যত বেশি মানুষ মারা যাবে, তারা তত মাথা পাবে।  

এমন এক সময় ১৮৬৪ সালে নিউজিল্যান্ডে আসেন ব্রিটিশ সৈনিক হোরাশিও গর্ডন রোবলে। তিনি ভারত ও মায়ানমারেও কাজ করেছেন। শুধু ভালো বন্দুক চালনা নন, এই সৈনিক ভালো ছবিও আঁকতেন। পেন্সিলের সাহায্যে চমকপ্রদ সব চিত্র ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। মায়ের কাছে ছবি আঁকা শেখার পর মায়ানমারে এক বৌদ্ধ পরিব্রাজকের কাছে শিখেছেন ট্যাটুর কাজ। 

নিউজিল্যান্ড গিয়ে মাউরি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য তাকে আকৃষ্ট করে। তিনি মাউরিদের অনেক ছবি আঁকেন। মাউরিদের ট্যাটুর প্রতিও তিনি আকৃষ্ট হন। এ নিয়ে তিনি লিখে ফেলেন দুটি বই। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ‘মাউরি ট্যাটুইং’। 

ইউরোপের মানুষের কাছে মাউরিদের জীবনযাত্রা, ট্যাটুর কথা, মাথা সংরক্ষণের কারণ ইত্যাদি জানাতে চেয়েছিলেন হোরাশিও। কিন্তু শুধু চিত্রের মাধ্যমে কিংবা বইয়ের মাধ্যমে তা পরিপূর্ণভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। অবশেষে একটি উপায় বেছে নেন হোরাশিও। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে সংগ্রহ করেন ৩৫ জনের ট্যাটুওয়ালা মাথা। ১৯০৮ সালে তিনি সেসব বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার আগ্রহী হয়নি। পরে তিনি সেগুলো দিয়ে দেন নিউ ইয়র্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে। এখনো সেখানেই সংরক্ষিত আছে সেই মাথাগুলো।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়