ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

টাকা ছিনিয়ে নিতেই কেরানীগঞ্জে ডাবল মার্ডার 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ১ ডিসেম্বর ২০২৩  
টাকা ছিনিয়ে নিতেই কেরানীগঞ্জে ডাবল মার্ডার 

বহুল আলোচিত কেরানীগঞ্জের ডাবল মার্ডারে জড়িত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরিফকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। জোরপূর্বক ক্যাশ বাক্সের নগদ টাকা ছিনিয়ে নিতেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানায় র‌্যাব।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে সংস্থাটির লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এ তথ্য জানান।

কাওরান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত, হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। আরিফ ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কেরানীগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা করতো এবং নিজেরাও মাদক সেবন করতো বলে জানা যায়। আরিফ ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায়শই রাতে স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায়, জোরপূর্বক ক্যাশ বক্সের নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নিতো। ঘটনার দিন  আরিফ প্রতিদিনের ন্যায় রাতে দোকানের বেচাকেনা শেষে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। 

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। শরীফের দোকানে গ্রেপ্তারকৃত আরিফ ও তার সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে সে বাকবিতণ্ডা ও চিৎকার করে। পরবর্তীতে তারা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে  শরিফ বাঁধা দেয়। এ সময় আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। তার চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা তার দুই ছেলে আরিফ ও তার সহযোগীদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। কিন্তু তারা শরীফের দুই ছেলেকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং ৩ জনই মারা গেছে ভেবে নিশ্চিত হয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ওইদিন ভোরে স্থানীয়রা শরীফেট দোকান খোলা দেখে সেখানে আসে। দোকানের ভেতর তিনটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে শরীফের বড় ছেলেকে খবর দেয়। বড় ছেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায়, তার বাবা ও ছোট ভাই খোকন মৃত্যুবরণ করেছে এবং তার অপর ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। 

আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। সে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে তার নাম ও পরিচয় গোপন করে সরিফুল ইসলাম, পিতা. রবিউল আওয়াল, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। তার ধারণা ছিল, সে যদি সরিফুল ইসলাম নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে তাহলে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে পারবে। পরবর্তীতে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শরিফুল পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিল।

র‌্যাব জানায়, ১৯৯৩ সালে ১৩ জুলাই রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে কতিপয় সন্ত্রাসীরা পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৯৯৪ সালের ২৬ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরিফসহ পাঁচ জনকে ডাবল মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠান। নিম্ন আদালত বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরিফসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। রায় ঘোষণার সময় শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম এবং মিস্টার ব্যতীত অপর দুই আসামি আরিফ ও মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন।

মাকসুদ/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়