দিল্লীর মিষ্টির স্বাদ ঢাকায়
![দিল্লীর মিষ্টির স্বাদ ঢাকায় দিল্লীর মিষ্টির স্বাদ ঢাকায়](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023August/risingbd-2309010721.jpg)
খাবারের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের খ্যাতি রয়েছে। এখানে এলাকাভেদে খাবারের বৈচিত্র্য উল্লেখ করার মতো। দিল্লীর শাহী খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে মোঘল আমলে। এখন এ সময়ে ঢাকায় বসে আপনি যদি সেই খাবারের স্বাদ নিতে চান তাহলে পাসপোর্ট ভিসা করে দিল্লী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলীতেই পাবেন দিল্লীর মিষ্টির স্বাদ।
রাজধানী ঢাকার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডান পাশে ধরে হাঁটলেই পাটুয়াটুলীতে নিউ শাহী দিল্লী সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। মূল রাস্তা থেকে পাশের সিঁড়ি ধরে নামতে হবে নিচের দিকে। নামতেই চোখে পড়বে থরে থরে সাজানো হরেক রকম মিষ্টি- মাওয়ার লাড্ডু, মনসুর মিঠাই, নারিকেল বরফি, কালোজাম, চমচম, রসমালাই, দই ইত্যাদি।
তবে রেস্টুরেন্টের ভেতরে তাকালে দেখবেন ভোজনরসিকদের ব্যস্ততা। চারটি টেবিলে সাজানো ছয়টি করে চেয়ার। গরম গরম পরোটা লুচি ও সবজি দিয়ে কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছেন সবাই। শাহী দিল্লী সুইটমিটের ভাজির খ্যাতি রয়েছে। তাই সকালের নাস্তায় আশেপাশের মানুষ ও অন্যান্যদের অন্যতম পছন্দ এখানকার পরোটা, লুচি ও ভাজি। পাশাপাশি এখানকার শাহী গাজরের হালুয়ার স্বাদও বিখ্যাত।
জানা যায়, ১৯৪১ সালের দিকে এই রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু। দেশভাগের আগে থেকেই অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পাটুয়াটুলী রোড। ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। ফলে এই রোডেই মিষ্টির দোকান দেন দুই সহোদর হাবিব আহমেদ ও বাবু মিয়া। মিষ্টান্নের স্বাদ মুখরোচক হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শাহী দিল্লী সুইটমিটের নাম। দোকানের মিষ্টির কারিগর ছিলেন বাবু মিয়া। ৮০ বছরের অধিক সময় ধরে সুনাম ও খ্যাতির সঙ্গে ব্যবসা করছেন তারা।
বর্তমানে হোটেলের দেখভাল করছেন হাবিব আহমেদের ছেলে নাজিব আহমেদ ও তার ছোট ভাই ইমরান। রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হয় ইমরানের। রেস্টুরেন্টের নাম কেন শাহী দিল্লী রাখা হলো এর ইতিহাস জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বাপ-চাচারা এ ব্যবসা ১৯৪১-৪২ সালে শুরু করে। এখন আমরা দেখছি। আমাদের খাবারের সাথে দিল্লীর অনেক খাবারের মিল পাওয়া যায়। আমাদের বাবা চাচারা আগে থেকেই ভারতে যাতায়াত করতেন। সেখানে আমাদের অনেক আত্মীয় আছে। হয়তো সেখান থেকেই এই নামের ধারণা তারা পেয়েছিলেন।
খাবারের স্বাদ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন- এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমরা ভালো এবং ফ্রেশ জিনিস ব্যবহার করি। আমাদের মিষ্টির জন্য দুধ আনা হয় মুন্সিগঞ্জ থেকে। এ ছাড়াও অন্যান্য সব উপকরণ ভালো মানের। এ জন্য আমরা সতর্ক থাকি।
রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে এসেছেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ী হাসেন আলী। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে এখানে নিয়মিত নাস্তা করি। খাবার বেশ ভালো। স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে।
নাস্তা করতে এসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাব। তিনি বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই নাস্তা করতে আসি। এদের হালুয়া খুবই ভালো। মিষ্টিও উন্নত। মান হিসেবে দাম বেশি নয়।
নিউ শাহী দিল্লী সুইটমিটে যে খাবারগুলো ভোজনরসিকদের মন কেড়েছে সেগুলো হলো: সবজি ভাজি (২০), পাতলা ভাজি (১৫), মিষ্টি সিঙাড়া (১০), নিমকপাড়া (২৫), কাচা ছানা (৬০০), গুড় সন্দেশ (৬০০), মালাইচাপ (৫০০), গাজরের বরফি (৪০০), নারিকেল বরফি (৪০০), চকলেট বরফি (৪০০), মনসুর মিঠাই (৩০০), মাওয়া লাড্ডু (৪০০), মতিচুর লাড্ডু (৩০০), মাসকাট হালুয়া (৪০০), গাজরের হালুয়া (৩৫০) ইত্যাদি।
রেস্টুরেন্টে প্রায় ৩০ জনের মতো কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নাস্তা পাওয়া যায় এখানে।
তারা//
আরো পড়ুন