ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হলুদ-দুধে এত উপকারিতা!

দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ৩০ মে ২০২২   আপডেট: ২১:৪০, ৩০ মে ২০২২
হলুদ-দুধে এত উপকারিতা!

দুধ অনেক স্বাস্থ্যকরী একটি উপাদান এটি আমরা কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু খুব সহজেই এটিকে আরও বেশি স্বাস্থ্যকর করে তোলা যেতে পরে তা জানেন না অনেকেই।

হেলথ লাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুধের সঙ্গে জনপ্রিয় মসলা হলুদ মেশানো হলে তা আরো বেশি স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। হলুদমিশ্রিত গরম দুধ স্বাস্থ্যের নানা উপকার, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান ও রোগ-প্রতিরোধে কার্যকরী।

হলুদ-দুধ পান করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়?

* সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা উপশমে হলুদ মেশানো দুধ উপকারী। সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হলুদ-দুধ পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

* হলুদ-দুধ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এবং রক্তনালী পরিষ্কার করে। তাই হলুদ-দুধ রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে।

* শরীরের বাইরের বা অভ্যন্তরীণ অংশে কোনো আঘাত থাকলে, হলুদ দুধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাময়ে সহায়তা করে। কারণ এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে দেয় না।

* মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং ভালো ঘুমের জন্য হলুদ-দুধ সহায়ক। রাতে যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে হলুদের দুধ পান তাদের জন্য খুব উপকারী।

* হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে হলুদ-দুধ। দুধে হলুদ মেশানোর কারণে তাতে থাকা কারকিউমিন রক্তনালীর আস্তরণের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে যা এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হিসেবেও পরিচিত। আর সঠিক এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

* হলুদ-দুধ রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করাকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।

* হলুদ-দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে দুর্দান্ত সহায়ক।

* হলুদের দুধে অ্যান্টি-স্প্যাসমোডিক বৈশিষ্ট্যও বর্তমান, যা মাসিক চক্রের সময় হওয়া ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এটি মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক। নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এন্ডোমেট্রিওসিস, লিউকোরিয়া অথবা ফাইব্রয়েডের সমস্যা দূর করতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে, হলুদ-দুধ দুর্দান্ত কার্যকর।

* গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদ মেশানো দুধ পান করলে ক্যানসারের ঝুঁকিও হ্রাস হয়।

* হলুদ-দুধ ওজন কমাতে পারে। এটি দেহের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান শরীরকে রাখে সুস্থ ও কর্মক্ষম। নিয়মিত হলুদ-দুধ পান করলে সুস্থ থাকে লিভার।

* হলুদ-দুধ মস্তিষ্কের উন্নতি করে মেজাজ ভালো রাখতেও অনেক উপকারী। এতে থাকা কারকিউমিন নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়াতে পারে বলে তা বিষন্নতার লক্ষণ হ্রাস করে বলে মিলেছে গবেষণায়।

* বাতের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে হলুদ-দুধ। এছাড়া মাংসপেশির নমনীয়তাও বাড়ায় এটি।   

* হলুদ মেশানো দুধে আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে, যা বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন, ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলুদ-দুধ কার্যকরী।

হলুদ-দুধ তৈরির উপায়

অনেকেই হলুদ-দুধ বানানোর সময় একটি পাত্রে দুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে গরম করে পান করেন। কিন্তু এভাবে হলুদ-দুধ তৈরি করা হলে তাতে পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায় না। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে এমনটাই জানিয়েছেন মুনমুন গানেরিওয়াল নামের একজন পুষ্টিবিদ। একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি হলুদ-দুধ তৈরির সঠিক উপায় সম্পর্কে জানিয়েছেন-

একটি পাত্র চুলায় বসান, তাতে কিছুটা ঘি দিন। এবার এতে হলুদের গুঁড়া দিন। অল্প আঁচে কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এরপর এতে এক চিমটি গোলমরিচ, জায়ফল গুঁড়া এবং দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। গ্যাস বন্ধ করে এক কাপ গরম দুধ যোগ করুন এবং স্বাদ অনুযায়ী চিনি দিয়ে পান করুন।

পুষ্টিবিদ মুনমুন গানেরিওয়ালের মতে, হলুদের গুঁড়া কখনোই হলুদের মতো কার্যকরী নয়, কারণ বাজারে পাওয়া হলুদের গুঁড়া ভেজাল হতে পারে। হলুদ-দুধে ঘি ব্যবহার করলে হলুদের সক্রিয় যৌগগুলো ঘিতে ভালোভাবে শোষিত হয়। সেই দুধ সম্পূর্ণ পুষ্টিকর হয়ে ওঠে। হলুদ-দুধে গোলমরিচ যোগ করা হলে হলুদে পাওয়া কারকিউমিনের প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

হেলথ লাইনের প্রতিবেদনে হলুদ-দুধ তৈরির আরেকটি উপায় দেখা গেছে। এটিও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। হলুদ-দুধ তৈরির জন্য যেসব উপকরণ লাগবে- ১/২ ইঞ্চি আদা কুচি করে কাটা, ১/২ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া অথবা ১ ইঞ্চি হলুদ টুকরো, ১ কাপ দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু।

একটি পাত্রে মধু ব্যতীত বাকি উপকরণগুলো প্রায় ২০ মিনিট চুলায় অল্প আঁচে ফুটান। এরপর একটি কাপের মধ্যে ঢেলে ১৫ মিনিট পর তাতে মধু দিয়ে পান করুন স্বাস্থ্যকর হলুদ-দুধ।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়