ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

লিচুর দাম ভালো পেয়ে খুশি ঈশ্বরদীর বাগান মালিকরা

শাহীনুর রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৩১ মে ২০২৩  
লিচুর দাম ভালো পেয়ে খুশি ঈশ্বরদীর বাগান মালিকরা

ঈশ্বরদীর বাজারে জমে উঠেছে লিচু বেচাকেনা

লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে গত বছরের তুলনায় এবার লিচু এসেছে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ গাছে।  এতে ফলন নেমে গেছে অর্ধেকেরও নিচে। তবে ফলন কম হলেও, দাম ভালো পেয়ে খুশি লিচু চাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি, এবার এই এলাকায় ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে লিচুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো লিচু। কোনো কোনো গাছে লিচু পেকে লাল হয়ে গেছে। কোনো গাছে আবার অর্ধেক লাল, অর্ধেক কম লাল লিচু ঝুলে রয়েছে। এসব গাছ থেকে এখন বাগান মালিকরা শ্রমিকদের মাধ্যমে লিচু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।  

আরো পড়ুন:

ঈশ্বরদীতে শুধু বাগানেই নয়, হাটের অবস্থাও একই। চোখ যেদিকে যাবে সেই দিকেই লিচুর ঝুড়ি।  বাগান মালিকদের অনেককেই ভ্যান ভর্তি করে লিচু নিয়ে বাজারে আসতে দেখা গেছে।  লিচুর বাগান ও লিচুর হাটে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম।

দেশের সব জায়গাতেই পাবনার লিচুর কদর রয়েছে।  প্রথম দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচুর চাষ হলেও এটি এখন জেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। লিচুর চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এই ফলটির আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ঈশ্বরদীর একটি লিচুর বাগান

দিনাজপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় লিচুর উৎপাদন হলেও ভৌগলিক কারণে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলার লিচুর বাজারজাত শুরু হয় একটু আগেই। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয়েছে লিচুর কেনাবেচা। প্রথম দিকে মোজাফফর জাতের লিচু দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়।  এখন বোম্বাই জাতের লিচু বেচাকেনা চলছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ মেট্রিক টনের বেশি লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৩ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। মূল্য হিসেবে পুরো জেলায় লিচুর বেচাকেনা হতে পারে ৭০০ কোটির টাকার বেশি।

এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম। এছাড়াও গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মুকুল ঝরে গেছে। আবার যখন লিচু বৃদ্ধির সময় ছিল তখন বৃষ্টির অভাব ছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। ফলে লিচু আকারে ছোট হয়েছে। গত বছর যে গাছে ৫ থেকে ১০ হাজার লিচু হয়েছিল এবার সেই গাছে লিচু এসেছে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার। 

তবে ফলন বিপর্যয় হলেও দামে খুশি চাষিরা। লিচুর বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে লিচুর হাটগুলো। প্রথম দিকে মোজাফফর (স্থানীয় নাম আটি) জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে হাজারে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকায়। দুই সপ্তাহ পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে সেই মোজাফফর জাতের প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২২০০-২৫০০ টাকায়।  এ সপ্তাহের শুরুতে লিচু আরেক জাত বোম্বাই কেনাবেচা শুরু হয়। এই প্রজাতির লিচু প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।

বাগান থেকে লিচু সংগ্রহের পর বাজারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে 

পাবনার ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার হাটের লিচু চাষি আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন কম, কিন্তু দাম বেশি। আমরা খুশি। আমি প্রতিদিন ৪-৫ হাজার লিচু নিয়ে আসি এই হাটে। এই দাম  অব্যাহত থাকলে কৃষকরা কিছু লাভবান হবেন। তবে হাটের তুলনায় বাগানেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু। কারণ, বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি লিচু কিনতে পারেন বাগান মালিকদের থেকে।কারণ সেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষ থাকে না।’

সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের লিচু চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যখন লিচুতে মুকুল এসেছিল, তখনই পাবনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেসময় অনেক গাছ থেকে মুকুল ঝরে গেছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা না দেওয়ায় লিচু অনেক নষ্ট হয়েছে। লিচু ফেটে গেছে, পচে গেছে ইত্যাদি সমস্যা দেখে গেছে। তারপরও দাম যেহেতু বেশি তাই আমরা চাষিরা খুশি।’

দামদর ঠিক করায় ব্যস্ত লিচুর ক্রেতা-বিক্রেতারা

তবে কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দাবি করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই যে গাছে ৯০-৯৫ শতাংশ লিচু ধরে পরের বছরে সেই গাছে ৬০-৬৫ ভাগ মুকুল আসে। এ জন্য এবার ফলন কম। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিওয়া হয়েছে।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়