ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই টেস্টে বাংলাদেশের হতাশার গল্প

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ৩০ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৯:৪২, ৩০ মার্চ ২০২২
দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই টেস্টে বাংলাদেশের হতাশার গল্প

দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডেতে ২-১ এ সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ নিয়ে এবার টেস্ট মিশনে লাল সবুজের দল। বৃহস্পতিবার ডারবানে দুই দল প্রথম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে।

সাদা পোশাকে দুই দলের পরিসংখ্যানে একক আধিপত্য দক্ষিণ আফ্রিকার। দুই দল ১২ ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে ১০টি জয় প্রোটিয়াদের। বাকি দুটি হয়েছে ড্র। মানে বাংলাদেশ লাল বলের ক্রিকেটে কখনো হারাতে পারেনি আফ্রিকানদের। দুই দলের টেস্ট ইতিহাসে একটু ফিরে দেখা যাক-

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট লড়াইয়ের ইতিহাস প্রায় এক দশকের। দুই দল প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল ২০০২ সালের অক্টোবরে। পচেফস্ট্রুম ও ইস্ট লন্ডনে দুটি ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।

প্রথম টেস্টে খালেদ মাসুদের বাংলাদেশ রানপাহাড়ে চাপা পড়েছিল। গ্রায়েম স্মিথ ২০০ ও গ্যারি কারস্টেন ১৫০ রান করেছিলেন। ৪ উইকেটে ৫২৯ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর প্রোটিয়ারা বাংলাদেশকে ১৭০ রানে গুটিয়ে দিয়ে ফলো অনে ফেলে। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের ২৫২ রানে অলআউট করে ইনিংস ও ১০৭ রানে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ইনিংসে মাখায়া এনটিনি ও ডেভিড টারব্রুগে ৫টি করে উইকেট নেন।

দ্বিতীয় টেস্টে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২১৫ রানে অলআউট হয়। হান্নান সরকার (৬৫) ছাড়া আর কেউ লড়াই করতে পারেননি। জবাবে হার্শেল গিবস (১১৪), কারস্টেন (১৬০) ও জ্যাক ক্যালিসের (১৩৯) অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৪৮২ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্যালিস দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ১০৭ রানে গুটিয়ে দেন এবং বাংলাদেশ হারে ইনিংস ও ১৬০ রানে।

পরের বছর প্রথমবার বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৩ সালের এপ্রিল-মেতে অনুষ্ঠিত ওই দুই টেস্টেও ইনিংস ব্যবধানে জেতে তারা।

চট্টগ্রামে পল অ্যাডামসের ৫ উইকেটে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট ১৭৩ রানে। জবাবে জ্যাক রুডলফের অপরাজিত ২২২ ও বোয়েটা ডিপেনারের হার না মানা ১৭৭ রানে ২ উইকেটে ৪৭০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। তারপর জাভেদ ওমর (৭১) ও হাবিবুল বাশার (৭৫) ফিফটি করলেও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংস ও ৬০ রানে জেতে প্রোটিয়ারা।

ঢাকায় ফিরেও বাংলাদেশের একই অবস্থা। অবশ্য এবার ৩৩০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুটিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণি জাদু সেদিন এনে দিয়েছিল আনন্দের ক্ষণ। কিন্তু দুই ইনিংস খেলেও লিড নিতে পারেনি তারা। ১০২ ও ২১০ রানে অলআউট বাংলাদেশ হারে ইনিংস ও ১৮ রানে।

দুই দল পরের টেস্টে মুখোমুখি হয় ৫ বছর পর। আবারো বাংলাদেশে পা রাখে প্রোটিয়ারা। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ওই সিরিজেও স্বাগতিকরা হোয়াইটওয়াশ হয়। ঢাকায় প্রথম টেস্টে শাহাদাত হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথমবার লিড পায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর তারা প্রোটিয়াদের অলআউট করে ১৭০ রানে। শাহাদাত নেন ৬ উইকেট। ২২ রানে লিড পেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধা করতে পারেনি। ক্যালিস ৫ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের ১৮২ রানে অলআউট করেন। লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০৫ রানের, ৫ উইকেট হারিয়ে যা জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪১৫ রানের অভাবনীয় জুটি গড়েন নিল ম্যাকেঞ্জি ও স্মিথ। দুজনেই ডাবল সেঞ্চুরি করেন, ২২৬ রান ম্যাকেঞ্জির এবং ইনিংস সেরা ২৩২ রান স্মিথের। ৭ উইকেটে ৫৮৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশকে ২৫৯ ও ১১৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইনিংস ও ২০৫ রানে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা।

একই বছর নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায় বাংলাদেশ। ব্লুমফন্টেইনে স্মিথের ১৫৭ ও হাশিম আমলার ১১২ রানে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা করে ৪৪১ রান। মোহাম্মদ আশরাফুলের বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৫৩ রানে। ফলো অনে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ১৫৯ রানে অলআউট। ইনিংস ও ১২৯ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় ম্যাচে জুনায়েদ সিদ্দিকী (৬৭) ও মুশফিকুর রহিমের (৬৫) হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ২৫০ রান করে অলআউট হয়। ওই ম্যাচে অ্যাশওয়েল প্রিন্স (১৬২) ও মার্ক বাউচার (১১৭) দারুণ ইনিংস খেললেও সাকিব আল হাসান ৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন উজ্জ্বল। ৪২৯ রানে প্রথম ইনিংস শেষ হয় স্বাগতিকদের। অবশ্য আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ ১৩১ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইনিংস ও ৪৮ রানে পরাজিত হয়।

সাত বছর পর বাংলাদেশে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৫ সালের জুলাই আগস্টে দুটি ম্যাচই ছিল ফলশূন্য। প্রথমবার দুই দলের লড়াই ড্র হলেও এতে কৃতিত্ব নেই বাংলাদেশের। কারণ প্রথম ম্যাচে শেষ দুই দিন বৃষ্টিতে খেলাই হয়নি। তবে মোস্তাফিজুর রহমান দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দেন। ২৪৮ রানে প্রথম ইনিংসে তাদের অলআউট করতে ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। তারপর তামিম ইকবাল (৫৭), মাহমুদউল্লাহ (৬৭) ও লিটন দাসের (৫০) ফিফটিতে ৭৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ৩২৬ রান করেছিল তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে প্রোটিয়ারা ৬১ রান করার পর আর খেলা হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে তো প্রথম দিনের পর আর মাঠে গড়ায়নি বল। বাংলাদেশ ওই পর্যন্ত স্কোর করেছিল ৮ উইকেটে ২৪৬ রান। ওই ইনিংসে ৬৫ রান করে সেরা খেলোয়াড় হন মুশফিক।

সবশেষ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবরে। পচেটফস্ট্রুমে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ডিন এলগারের ১৯৯ ও হাশিম আমলার ১৩৭ রানের সবুাদে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রান করে। জবাবে বাংলাদেশ মুমিনুল হক (৭৭), মাহমুদউল্লাহর (৬৬) ব্যাটে ভালো জবাব দিয়েছিল। ৩২০ রানে অলআউট তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ফাফ ডু প্লেসি (৮১) ও টেম্বা বাভুমার (৭১) ব্যাটে ৬ উইকেটে ২৪৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। ৪২৪ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ মাত্র ৯০ রানে অলআউট হয়, ৩৩৩ রানে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা।

ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরির পসরা সাজায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ডিন এলগার (১১৩), এইডেন মার্করাম (১৪৩), আমলা (১৩২) ও ডু প্লেসির (১৩৫) ব্যাটে রান পাহাড় গড়ে। ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। তারপর কাগিসো রাবাদার তোপ, দুই ইনিংসে এই পেসার ৫টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ১৪৭ ও ১৭২ রানে অলআউট করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা জেতে ইনিংস ও ২৫৪ রানে।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ