‘স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা যুগান্তকারী’
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বছরে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা পেয়ে থাকেন। তাই স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সোমবার (৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সারাদেশে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকে ৩২ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন করে মানুষ সেবা নেয়। সেই হিসেবে সারাদেশে দিনে ৫-৬ লাখ, প্রতি মাসে দেড় কোটি এবং বছরে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিচ্ছেন। যা দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।
দেশের তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ কমিউনিটি ক্লিনিক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ৭৫টি দেশ প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। যা দেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এ কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনাকালে ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিরাট ভূমিকা ছিল। শুধু তাই নয়, দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অতীতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
শুরুতে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ফলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব- মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ছোট ছোট সমস্যায় যখন কমিউনিটি ক্লিনিক চিকিৎসাসেবা দেয় তাতে রোগীকে উপজেলা, জেলা বা বড় হাসপাতালে আর যেতে হয় না। এতে শুরুতেই রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ের সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের সার্বিক সফলতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নতি হয়েছে। বড় ধরনের রোগ সম্পর্কে মানুষ সচেতন ও সতর্ক হতে পারছে। এতে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। এটি বাস্তবায়নে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা ও ইপিআইয়ের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও ভূমিকা রেখেছে কমিউনিটি ক্লিনিক। এটি শুধু একটি একক উদ্যোগ নয়, একাধিক মহৎ উদ্যোগের সম্মিলিত রূপ। বর্তমান সরকারের প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাত ধরে। কমিউনিটি ক্লিনিকও সেসব খাতের অন্যতম।
৪৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন দেশের মানুষদের ফ্রি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন আমরা ফ্রি পেয়েছি। আর ২৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন সরকার বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা করেছে। এই ৪৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন পুরোটাই ফ্রি দিয়েছি। যার ফলে করোনার মতো মহামারি থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বেড়েছে, তাই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাজেট বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বেড়েছে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ায় বাজেট আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো। আমি আশা করি আরেকটু বেশি বাজেট বাড়লে স্বাস্থ্য সেবাকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করা যাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর আবদুল্লাহসহ সারা দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৬ মে জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। যেখানে সরকার নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সারা দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করায় জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল সরবরাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
মেয়া/এনএইচ