পঞ্চগড়ে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, নেপথ্যে কোচিং সেন্টার
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
পঞ্চগড়ে কোচিং সেন্টার পরিচালনার আড়ালে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে আহসান হাবিব নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পেয়েও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না-নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ পরীক্ষা শুরুর আগে কতিপয় শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রশ্ন সরবরাহ করেছেন অভিযুক্ত ওই যুবক।
অভিযুক্ত যুবক আহসান হাবীবের বাড়ি হাড়িভাসা ইউনিয়নের দামুপাড়া এলাকায়। তিনি বিদ্যালয়সংলগ্ন জয়গুন মার্কেট এলাকায় প্রত্যাশা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা চলাকালীন এক পরীক্ষার্থীকে সন্দেহ হলে কর্তব্যরত শিক্ষক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে উঠে আসে আহসান হাবীবের অনিয়মের চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আহসান হাবীবের সঙ্গে কথা বলেছি। সে অপরাধ স্বীকার করে জানিয়েছে, আমরা যেখান থেকে প্রশ্নপত্র ক্রয় করি, সেখান থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয়ে সে প্রশ্ন সংগ্রহ করেছে।’’
এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে আহসান হাবীবের বিচার চেয়েছেন। এই অনিয়মের সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ রয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি জানান তারা।
অরিন প্রধান নামে স্থানীয় একজন ফেসবুকে লিখেছেন: ‘‘প্রত্যাশা কোচিং সেন্টারের আড়ালে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন বিক্রির এমন রমরমা ব্যবসা থাকলে তো কোচিং ব্যবসাই ভালো।’’
শহিদুল ইসলাম নামে অন্য আরেকজন লিখেছেন: ‘‘ব্যাপারটা আমাদের এলাকার। বিরাট চিন্তার বিষয়। এর সঠিক বিচার হওয়া জরুরি। এভাবে চলতে থাকলে একটা জাতি কখনো উন্নতির মুখ দেখতে পারবে না। এটা শুধু একটা কোচিং বিজনেস নয়; একটা জাতিকে, একটা এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ধ্বংস করার পয়তারা। যারা এর সাথে জড়িত, সকলের বিচার হওয়া প্রয়োজন এবং জরুরি।’’
স্থানীয় জরিফ উদ্দীন জয় বলেন, ‘‘তার কোচিং সেন্টারে যারা কোচিং করে তাদের মেধা তালিকায় সামনে আনতে এই প্রতারণা করেছে আহসান হাবীব। এভাবে তার ব্যবসা বাড়বে হয়তো, কিন্তু শিক্ষার্থীদের মেধার প্রতিযোগিতা থাকবে না। এটা অবশ্যই বড় অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’’
হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজ প্রধান বলেন, ‘‘বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সব প্রশ্ন পরিবর্তন করেছি। ইতোমধ্যে যে দুটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও নতুন প্রশ্নে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আহসান হাবীব বলেন, ‘‘ম্যাডাম (প্রধান শিক্ষক) বিষয়টি নিজেই সমাধান করেছেন। তাই আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। যে কোন তথ্য বা বক্তব্য জানতে হলে ম্যাডামের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।’’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহজাবিন মনসুর বলেন, ‘‘আমাদের বিদ্যালয়ে প্রশ্ন ফাঁসের একটি ঘটনা ঘটেছিল। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার পর আমরা বিষয়টি অনুধাবন করি। যাচাই বাছাই করে যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, তাদের ডেকে মিমাংসা করেছি।’’
ঢাকা/নাঈম//