ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৯:৩৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা

জঁ ক্যা। ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরে ফরাসি পত্রিকায় বাঙালিদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বর্ণনা প্রকাশিত হতো। সেই সব সংবাদ ব্যথিত করেছিলো ২৮ বছর বয়সী ফরাসি যুবক জঁ ক্যাকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু করার উপায় খুঁজতে গিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। জঁ ক্যাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো আন্দ্রে মালরোর বাংলাদেশ নিয়ে লেখা ও বক্তৃতা।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে  জঁ ক্যা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামে বোয়িং-৭২০বি বিমানটি ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো বিমানে ওষুধ আর চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে যুদ্ধাহত ও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি নিতে পাইলট বিমানটি চালু করেছেন। জঁ ক্যা দাঁড়িয়ে গেলেন। এবং পকেট থেকে পিস্তল বের করে পাইলটকে ইঞ্জিন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। আর হুমকি দিলেন তার নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে থাকা বোমা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর উড়িয়ে দেবেন। বিমানের ওয়্যারলেসটি কেড়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন জঁ ক্যা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জঁ নির্দেশ দিলেন, ‘বিমানটিতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী তুলে দিতে হবে’। 

আরো পড়ুন:

দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন। এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা মুহূর্তে পুরো ফ্রান্স ছাড়িয়ে ইউরোপসহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। জঁ ক্যাকে দেখতে বিমানবন্দরে মানুষ জড়ো হতে শুরু করলো। কিন্তু বিমানটিকে মুক্ত করতে ফরাসি সরকার নতুন এক ফাঁদ পাতল। আর তাতেই ধরা দিতে হলো জঁ ক্যাকে।

রেডক্রস আরেক ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অর্দে দ্য মানতে’র সহায়তায় বিমানবন্দরে দুটি ওষুধভর্তি গাড়ি নিয়ে হাজির হলো ঠিকই।ওই গাড়ির চালক ও স্বেচ্ছাসেবকের পোশাক পরে বিমানটিতে প্রবেশ করলেন ফরাসি পুলিশের বিশেষ শাখার চারজন সদস্য। তারা ওষুধের বাক্সে পেনিসিলিন রয়েছে বলে সেগুলো বিমানের ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখতে থাকেন। একপর্যায়ে বাক্স নামাতে সহায়তার নাম করে জঁ ক্যার হাতে একটি বাক্স তুলে দেন। এরপরই তার ওপর আক্রমণ শুরু করেন পুলিশের সদস্যরা।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রাত ৮টায় জঁ পুলিশের হাতে আটক হন। 

আন্দ্রে মালরো শেষে এই ‘খ্যাপাটে অনুরাগী’কে মুক্ত করতে সব চেষ্টা করেন। মালরোর আইনজীবী বন্ধু বিনা পারিশ্রমিকে জঁ ক্যার পক্ষে লড়াইয়ে নামেন। তিনি ছিনতাই হওয়া ওই পাকিস্তানি বিমানের সব যাত্রী ও ক্রুদের সাক্ষ্য নেন। তারা সবাই একবাক্যে বলেন, জঁ ক্যা তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি, এমনকি কারও দিকে সরাসরি পিস্তল তাক করেননি। তিনি উলটো বলেন, ‘‘তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাহত শিশু ও শরণার্থীদের ওষুধ পাঠানোর জন্য বিমানটি ছিনতাই করেছেন— তারা যেন সহযোগিতা করেন’’।

এরপরও জঁ শেষ রক্ষা পাননি। ফরাসি আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন।আইনি লড়াইয়ের পর তার শাস্তির মেয়াদ তিন বছর কমানো হয়। জঁ ক্যা ১৯৭৩ সালে মুক্তি পান।

ফরাসি পত্রিকার তথ্য অনুসারে, ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন জঁ। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়