ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

আমি চাই পৃথিবীতে হোক চিরবসন্ত- চির-আনন্দ: মহাদেব সাহা

মহাদেব সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৩:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আমি চাই পৃথিবীতে হোক চিরবসন্ত- চির-আনন্দ: মহাদেব সাহা

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে মাইল দশেক দূরে ধানঘড়া গ্রামে আমার জন্ম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফুলজোড় নদী। আমি বলতাম ‘আমাদের নদী’। এই নদীটি আমাদের বাড়ির একেবারে গা ঘেঁষে চলে গেছে। সবুজেভরা প্রকৃতির মাঝে শৈশব-কৈশোর ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সৌন্দর্যময় সময়। আমি বলি ‘সুরভিত শৈশব’। কী যে আনন্দে আমার শৈশব কেটেছে বলার মতো নয়! 

বিশে শ্রাবণ আমার জন্ম। ভরা বর্ষা তখন। সেই দিনের সেই উপচে-পড়া জলধারা আমি দেখিনি। সেদিন আমার চোখেও নাকি জল ছিল। শিশুর জন্মের পর একুশ দিন তার চোখে জল থাকে না, কিন্তু আমি চোখে জল নিয়েই জন্মেছি। বৃষ্টির দিনে আমার জন্ম। আমি আচ্ছন্ন হয়ে থাকি বর্ষায়।

তীব্র প্রেমবোধ আমাকে সর্বদা তাড়িত করেছে: নির্মলেন্দু গুণ

এবার বসন্তের কথা বলি, বসন্ত অনেকটা কল্পনা! বসন্ত যতটা কল্পনা বাস্তবে ততটা নেই। আমি কিন্তু চিরবসন্তের কথা ভাবি। এর রূপ, সৌন্দর্য, বৈচিত্র, তার বর্ণ চোখ বুজে দেখার মতো, চোখ খুলেও দেখার মতো। 

শীতের পরেই আসে বসন্ত। শীত না থাকলে বসন্ত অনুভবই করা যেত না। শীতের দেশের মানুষের কাছে বসন্তেও যে ব্যাকুলতা- তা বলে বোঝানো যাবে না। সেসব দেশে গাছপালা সব হয়ে থাকে বরফবৃক্ষ। যখন একটু উষ্ণতা আর কোমলতা প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যায় তখন সমস্ত প্রাণীজগত জেগে ওঠে। সেই কঠিন শীতের মধ্যে বসন্ত আরো অনুভবযোগ্য, আরো মনোরম। 

আমি আমার একটি কবিতায়ও লিখেছি, ‘আমি যখন তোমার কথা বলি/ তখন পৃথিবীটা হয় চিরবসন্ত’।

আমার কাছে বসন্তকে মনে হয় ‘লিরিকগুচ্ছ’। অখণ্ড গীতিকবিতা। অপার রহস্যময়ী রূপ, বর্ণময়, গন্ধময়, কাব্যময়। চৈত্র পূর্ণিমার চোখজুড়ানো সৌন্দর্য কে ভুলতে পারে! যে পারে পারুক, আমি পারি না। 

বসন্তের সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। আমি তাই ব্যাখ্যা করতেও চাই না, মনেপ্রাণে উপলব্ধি করতে চাই।

জীবনের বলো, কবিতার বলো, বোধের বলো; আমি সব প্রেরণাই পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে, মাতৃভূমির কাছ থেকে। আমার মায়ের খুব ভালো গানের গলা ছিল। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর, স্বভাব কবিও বলতে পারো; একবার শুনলেই মনে রাখতে পারত। ‘রামায়ন’র বহু অংশ মুখস্ত ছিল। আমি তাঁর কণ্ঠে রামায়ন, মহাভারতের পয়ার ত্রিপদী ছন্দের পাঠ শুনেছি। এভাবেই বোধহয় আমার কবিতার কান তৈরি হয়। 

খুব ছোটবেলা থেকেই আমি কবিতা লিখতে শুরু করি। আট-দশ বছর বয়স থেকে লিখি। দৈনিক পত্রিকায় ছোটদের পাতায় ছাপা হতো। এই সময়ে আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলাম। তিনি আমাদেও স্কুলে একটি নির্বাচনী সভায় এসেছিলেন। সে আমার এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা! আমার আত্মস্মৃতিতে, আমার জীবনীতে আছে। 

ছোটবেলায় যা দেখতাম তার প্রতি বিস্ময়, মুগ্ধতা, ভালোবাসা থেকে কবিতা লিখতে শুরু করি। স্বপ্নের মধ্য দিয়ে এই বৃষ্টিভেজা পথে হাঁটতে হাঁটতে কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছি জানি না। কি হয়েছে, কি না হয়েছে বলতে পারবো না। এটুকুই আজ তোমাদের সঙ্গে আমার কথা বলা। আজ আর না। সবাই ভালো থেকো। 

অনুলিখন: স্বরলিপি
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়