ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

জহির রায়হান : অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি

কাজী জাহিদুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ১৯ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১২:৫৮, ১৯ আগস্ট ২০২৩
জহির রায়হান : অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি

জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭২) বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। জন্ম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ্। মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন, বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে সৃষ্টি করে গেছেন কালজয়ী কথাসাহিত্য ও চলচ্চিত্র।

সাংবাদিক, সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক, চিত্রপরিচালক, প্রযোজক, চিত্রগ্রাহক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী, ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা- এ সব পরিচয়েই জহির রায়হানের কর্মক্ষেত্রের পরিধি স্পষ্ট। চলচ্চিত্র তাঁর প্রতিভার পরবর্তী আশ্রয়স্থল হলেও তাঁর প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল  কথাসাহিত্যে। বিগত শতকের পঞ্চাশ-ষাটের দশকে সৃষ্ট কথাসাহিত্য ও চলচ্চিত্রে তিনি যে-বিষয়সমূহ নির্বাচন করেছেন তা থেকে তাঁকে একজন সমাজ ও রাজনীতিসচেতন শিল্পী হিসেবে অভিহিত করা যায়। 
লেখক, সাংবাদিক, বামপন্থী রাজনীতিবিদ শহিদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-১৯৭১) তাঁর অগ্রজ। পিতার আধুনিক ও মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সন্তানেরা সাহিত্য-সংস্কৃতির মুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। জহির রায়হান কৈশোরাবস্থা থেকেই ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন। ফলে শিল্পী হিসেবে সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাকে তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। এ সবের অভিঘাত সর্বদা তাঁকে স্পর্শ করেছে। জহির রায়হান তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং চেতনা দ্বারা বিষয়গুলোকে সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছেন। 

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী তিনি। ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশ জনের খণ্ড খণ্ড যে মিছিল বের হয়, জহির রায়হান তার প্রথম দশজনের মধ্যে ছিলেন। এর কিছুদিন পর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তিন মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে তিনি রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হন এবং কারাভোগ করেন। ভাষা আন্দোলন তাঁকে বিপুলভাবে আলোড়িত করেছিল। তাঁর শিল্পমানসে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব স্পষ্ট, যা তাঁর গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়।

জহির রায়হানের লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ কবিতা দিয়ে। স্কুলজীবন থেকেই লিখতেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা একটি কবিতা। শিরোনাম ‘ওদের জানিয়ে দাও’। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সে  কবিতায় শাসকচক্রের উদ্দেশ্যে তাঁর দৃঢ় উচ্চারণ : 
‘ওদের জানিয়ে দাও
ওরা আমার ভাইবোনকে
কুকুর বিড়ালের মত মেরেছে।
 ...
ওদের জানিয়ে দাও,
মরা মানুষগুলোতে কেমন জীবন আছে।’

পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেই জহির রায়হানের বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর।

জহির রায়হানের বাবা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। জহিরেরও স্কুলজীবনের বেশির ভাগ কাটে কলকাতায়। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তাঁর বাবা ঢাকা এসে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। জহির রায়হানকে ভর্তি করিয়ে দেন নিজ এলাকার আমিরাবাদ হাই স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাসের পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন তিনি।  

তাঁর গল্প-উপন্যাস

স্কুলজীবনে যে লেখালেখি শুরু করেছিলেন ঢাকা এসে তার গতি বৃদ্ধি পায়। এ সময় সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জহির রায়হানের ঘনিষ্ঠ সহচর শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী (১৯৩২-২০১৪) তাঁর এক স্মৃতিকথায় লিখেছেন: ‘জহির তখন লিখছেন। প্রচুর। ছোটগল্প অনেক জমেছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের গল্প। কৃষক, শ্রমিক, মজুরের গল্প। মেহনতি মানুষের গল্প। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প।’                                                                                                                                                                                                                                                                                                                   ছাত্রজীবনে তিনি কয়েকটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘প্রবাহ’ পত্রিকার সম্পাদক (১৯৫৬) এবং এক্সপ্রেস পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সিনেমা, সমকাল, চিত্রালী, সচিত্র সন্ধানী, যুগের দাবী প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন এবং এ সব পত্রিকাসহ আরও কয়েকটি পত্রিকায় তাঁর অন্যান্য লেখার সঙ্গে ছোটগল্পও প্রকাশিত হয়। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয় ১৩৬২ বঙ্গাব্দে [১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে] ঢাকার ইনল্যান্ড প্রেসের ব্যানারে। লিখে গেছেন কয়েকটি কালজয়ী উপন্যাস।

তাঁর ‘হাজার বছর ধরে’ (১৯৬৪) উপন্যাসে আবহমান বাংলার জনজীবন, ‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৮) উপন্যাসে সংগ্রামমুখর নাগরিক জীবন ও একুশের চেতনা, ‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাসে নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘তৃষ্ণা’, ‘আর কত তিন’ এবং ‘কয়েকটি মৃত্যু’। 

তাঁর চলচ্চিত্র

]১৯৫৬-এর শেষের দিকে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি ‘কখনো আসেনি’। এরপর একে একে পরিচালনা করেন ‘সোনার কাজল (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), বাহানা (১৯৬৫), বেহুলা (১৯৬৬), আনোয়ারা (১৯৬৭), জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০) ইত্যাদি। ইংরেজি ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’-এর কাজ শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তৈরি করেন বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র Stop Genocide. জহির রায়হান Bangladesh Liberation Council of Intelligensia -এর সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে জানলেন অগ্রজ শহীদুল্লা কায়সার নিখোঁজ ১৪ ডিসেম্বর থেকে। সন্ধান করতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুরে গিয়ে নিজেই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। অসমাপ্ত থেকে যায় তাঁর পরিকল্পিত অনেক কাজ। 

তাঁকে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন সত্যজিৎ রায়

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জহির রায়হান তাঁর ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির একটি প্রিন্ট কলকাতায় নিয়ে বিভিন্ন হলে চালানোর ব্যবস্থা করেন। কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে তিন মাসের ওপর চলে ছবিটি। যে কয়েক লাখ টাকা আয় হয় তা বাংলাদেশ মিশনে দিয়ে দেন তিনি। সত্যজিৎ রায় ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ছেলেটি এখনো ঢাকায় পড়ে আছে কেন? ওর জায়গা তো অনেক ওপরে।’ 

১৯৭২ সালের ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতের দমদম বিমানবন্দর থেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে বিমানে আরোহণ করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। মুম্বাই হয়ে কানাডার টরেন্টোতে যাওয়ার লক্ষ্যে একই বিমানের যাত্রী ছিলেন অস্কারজয়ী বাঙালি চলচ্চিত্রকার ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়। যাত্রাপথে বিমানে বসেই তাঁদের মধ্যে কথপোকথনে উঠে আসে নানা প্রসঙ্গে। এ প্রসঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এক নিবন্ধে লিখেছেন: ‘কথায় কথা উঠল। সত্যজিৎ রায় বললেন, ‘আপনাদের বাংলাদেশ ঘুরে এসেছি। বড় ভালো লাগলো। আরো ভালো লেগেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। দেশে ফিরে তাঁকে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন।’ 
তত দিনে চিত্রনায়িকা ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় শেষ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয় চিত্রনায়িকা ববিতা এবং সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নানা প্রসঙ্গে। সত্যজিৎ রায় বলেন : ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আপনারা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করুন।’ 

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিচালক জহির রায়হানের সঙ্গে তো আপনার পরিচয় হয়েছিল, তাঁর ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’ আপনি দেখেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, সে আজ মৃত [ আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই জহির রায়হানকে মৃত উল্লেখ করেছেন]। বাংলাদেশের সৃষ্টিধর্মী পরিচালক বলতে সর্বাগ্রে তাঁর নাম করতে হয়। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তাঁর শেষ ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছিল পরীক্ষামূলক। বড় আশা করেছিলেন তিনি এই ছবি নিয়ে। কিন্তু ইয়াহিয়ার বর্বরতায় তাঁর শেষ আশা পূর্ণ হয়নি। ছবিটিও তিনি শেষ করে যেতে পারেননি।’

সত্যজিৎ রায় বললেন, ‘পরিচালক হিসেবে জহির রায়হান সত্যই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। আমিও তাঁকে নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ছবি নিয়ে বাংলাদেশের কেউ কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। ছবিটা আমি শেষ করে দিতে পারি কিনা?’

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আগ্রহী হয়ে জিগ্যেস করেন, ‘আপনি রাজী হয়েছেন?’ সত্যজিৎ রায় মাথা নাড়লেন। কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। এলেও আমি রাজী হতে পারতাম না। বুঝতেই পারছেন, যেসব পরিচালক শিল্পদৃষ্টি নিয়ে ছবি করেন, তাঁদের দৃষ্টি ও ইমাজিনেশনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। আমি জহিরের ছবি শেষ করতে গেলে ওটা আমারই ছবি হয়ে উঠবে, জহিরের ছবি আর থাকবে না।  

অমর একুশের মানসসন্তান

জহির রায়হানের সৃষ্টিশীলতার অনেকটা অংশজুড়ে আছে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ‘জহির রায়হান : অনুসন্ধান ও ভালোবাসা’ গ্রন্থের ভূমিকায় গ্রন্থের সম্পাদক মতিউর রহমান লিখেছেন, ‘এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে জহির রায়হান  অমর একুশের মানসসন্তান। একুশের গল্প, আরেক ফাল্গুন কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারি উপন্যাস অথবা ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বেঁধেছেন অমর ধ্রুবতায়।’ 

এবং হস্তরেখা বিশারদ

জহির রায়হান ভালো হাত দেখতে পারতেন। স্বপ্নের মানে বলতে পারতেন। কারো কারোটা ফলেও যেত আশ্চর্য কিংবা কাকতালীয়ভাবে। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন গণপরিষদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পরিষদের কার্য পরিচালনাকালে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যে কেউ তাঁকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুঁড়ে মারে। আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দুদিন পরে ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু ঘটে। শাহেদ আলীর কন্যা মাহমুদা খাতুন (পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক) তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ ক্লাসের ছাত্রী এবং তাঁর বিয়ে  আসন্ন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর স্মৃতি কথায় (কাল নিরবধি, ২০০৩) লিখেছেন, ‘তখন আমাদের বন্ধুদের মধ্যে একটি কথা খুব রটেছিল যে, মাহমুদার হাত দেখে কিছুকাল পূর্বে জহির রায়হান নাকি বলেছিল, অচিরে মাহমুদার নিকটাত্মীয়-বিয়োগ ঘটবে।’ 

তাঁর অগ্রন্থিত গল্প

জহির রায়হানের শাহাদাৎবরণের পর তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত একমাত্র ছোটগল্প গ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’-এ গ্রন্থিত গল্পসমূহসহ মোট ১৯টি গল্প নিয়ে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সন্ধানী’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় জহির রায়হানের গল্পসমগ্র। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ড. আশরাফ সিদ্দিকীর সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি ‘জহির রায়হার রচনাবলী’ প্রকাশ করে দুই খণ্ডে। ২য় খণ্ডে জহির রায়হানের গল্পসমগ্র মুদ্রিত হয়। এখানেও গল্প সংখ্যা ১৯টি।  ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘জহির রায়হান রচনাসমগ্র নতুন সংস্করণ’ মুদ্রিত হয় ২২টি গল্প। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হানের সাতটি অগ্রন্থিত গল্প নিয়ে প্রথমা প্রকাশন থেকে ‘যখন যন্ত্রণা’ শিরোনামে একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়। ইতোমধ্যে ‘নায়িকা’, ‘ফাটল’ ও ‘জীয়নকাঠি’ শিরোনামে তাঁর তিনটি অগ্রন্থিত গল্পের সন্ধান পাওয়া গেছে। 

জহির রায়হানের এ-পর্যন্ত প্রাপ্ত ছোটগল্পে তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর মেলে। এসব গল্পের প্রধান বিষয় ধর্মীয় ও সামাজিক শাসন-শোষণ, ভাষা আন্দোলনসহ সাধারণ রাজনৈতিক আন্দোলন। এই বিষয়গুলোকে রূপ দেওয়ার জন্যে তিনি বেছে নিয়েছেন নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ, ছাত্র, কেরানিসহ সাধারণ মানুষকে। জহির রায়হানের পর্যবেক্ষণ শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর গল্পগুলোতে। 

জহির রায়হান তাঁর গল্পে একদিকে যেমন জীবনের সংকীর্ণতাকে তুলে ধরেছেন, তেমনি দেখিয়েছেন সম্ভাবনাকেও। মধ্যবিত্ত জীবনের অসহায়ত্বের চিত্র রূপায়ন করেছেন তিনি অত্যন্ত নির্মোহভাবে। 

মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে জহির রায়হান আলোকিত করে গেছেন আমাদের সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবদ্দশায় অর্জন করেন একাধিক পুরস্কার । বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রীয় একুশে পদক (মরণোত্তর) এবং ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করে। 

১৯ আগস্ট জহির রায়হানে জন্মদিন। জন্মদিনে বাংলার এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্মৃতি ও কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।   

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়