ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু : শোকে স্তব্ধ মাটিকোড়া গ্রাম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  
বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু : শোকে স্তব্ধ মাটিকোড়া গ্রাম

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। চোখের সামনে এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। 

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে মাটিকোড়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। 

বজ্রপাতে মাটিকোড়া গ্রামের নিহতরা হলেন- শাহ আলম (৪০), আব্দুল কুদ্দুস (৬০), রত্না খাতুন রিতু (১২) ও মারিয়া (৭)। 

 ওই ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন- নূর জাহান (৯) ও তার বোন নূর নাহার নদী (১২), রুপা (১২) ও আমিনা (১৩)। এদের মধ্যে নূর নাহার নদী গুরুতর অবস্থায় খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। 

নিহত রিতুর বাবা আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমার মেয়ে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গোসল করতে যায়। ওই মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হলে সে ওই শ্যালো ঘরের টিনের ছাপড়ার নিচে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় বজ্রপাত হয়। আমরা খবর পাওয়ার পরে সেখানে গিয়ে দেখি রিতু কাদা পানিতে পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

নিহত শাহ আলমের বাবা নুরুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘আমার ছেলে শিবপুর গ্রামের মানুষের কাছে ধানের চারা বিক্রি করে। শাহ আলম জমিতে অন্যদের সঙ্গে চারা তুলতে যায়। আমরা পরে জানতে পারি শাহ আলম বজ্রপাতে মারা গেছে। শাহ আলমের সঙ্গে একই গ্রামের আরও তিনজন মারা গেছে।’ 

নিহত মারিয়ার বাবা বলেন, ‘আমি বাজারে ছিলাম। বাড়ি থেকে খবর আসলো মেয়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছে। পরে বাড়িতে এসে দেখি মেয়ে আর নেই। ওই রাতেই তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’ 

নিহত শাহ আলমের মেয়ে ও নিহত রিতুর বান্ধবী সম্পা খাতুন বলেন, ‘বজ্রপাতে বাবাকে হারিয়েছি। তেমনই একই ঘটনায় হারিয়েছি আমার বান্ধবীকেও। এই অবস্থা বোঝানোর মতো নয়।’ 

এদিকে শোকে স্তব্ধ শাহ আলমের মা, ঋতুর মা, মারীয়ার মাসহ প্রায় সবাই। কথাও বলতে পারছেন না তারা। 

মো. মানিক হোসেন বলেন, বজ্রপাতের পরপরই এক শিশু দৌঁড়ে এসে হতাহতের কথা জানায়। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একেকজন একেক জায়গায় পড়ে আছে। এরপরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে তারা এসে সবাইকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়। 

স্থানীয় মাটিকোড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের খাদেম আজগর আলী বলেন, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতেই নিহতদের জানাজা সম্পন্ন করে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দাফন কার্য্য সম্পন্ন করা হয়েছে। 

পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা এলাকাবাসী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এলাকার সবার মধ্যে একটা শোক কাজ করছে। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাটাও যেন কারো নেই। 

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন জানান, বজ্রপাতের ঘটনায় ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুইজন সম্পর্কে আপন ভাই ও চারজনের পিতা-পুত্র সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

অদিত্য/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়