সাগরে নিখোঁজ ২১ জেলের সন্ধান মেলেনি ১৫ দিনেও
মনজুর রহমান, ভোলা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২১ জেলের সন্ধান মেলেনি ১৫ দিনেও। এতে করে ওইসব জেলে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলারে মাছ ধরার করছিলেন লালমোহন উপজেলার ৪ এবং চরফ্যাশনের ১৭ জেলে।
লালমোহনের নিখোঁজ চার জেলের বাড়ি উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে পাঙ্গাশিয়া গ্রামে। এই জেলে পরিবার গুলোর কেউ স্বামীর জন্য, কেউ আবার সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। কিন্তু জেলেরা ফিরে না আসায় অজানা আতংক ঘিরে ধরেছে তাদের। কান্না ভেজা চোখে স্বজনদের এমন অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।
নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা জানান, গত ২০ অক্টোবর চরফ্যাশনের নুরাবাদ গ্রামের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান ২১ জেলে। ২৪ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। তারা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা কেউই জানেন না।
এদিকে নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ মৎস্য ঘাটের ট্রলার মালিক সৈয়দ মাঝি ট্রলার ডুবি ঘটনা শুনার পরে স্ট্রোক করেন। তিনি এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ধারদেনা করে ট্রলারের মালিক হয়েছিলেন তিনি।
লালমোহনের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ জেলে বাবুলের মা শাহিনুর বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ছেলে ফিরে এলো না। তার কোনো খোঁজ পাইনি। শুনেছি ট্রলার ডুবে গেছে। সে কোথায় আছে, এখন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কে দেখবে।’
একই গ্রামের নিখোঁজ ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম স্বামীর চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতো ইব্রাহিম। কাজ না থাকায় প্রথমবারের মতো সাগরে মাছ শিকারে যায় সে। কিন্তু ঝড়ের দিন তাদের ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলার ডুবির পর থেকে তাকে ফোনে পাচ্ছি না। মাছ ধরতে যাওয়ার আগে বলেছিলো, কিছু টাকা দেনা আছি, ফিরে এসে সেই দেনা শোধ করবো তোমরা চিন্তা করো না। স্বামী সেই যে গেল আর ফিরে এলো না এখন এই ২ ছেলে ও এক মেয়েকে কে দেখবে। কে সংসার চালাবে?’
একই অবস্থা নিঁখোজ জেলে আবু কালামের পরিবারেও। কালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। কালাম বলেছিল মেয়ে বড় হয়েছে, তাকে বিয়ে দিতে হবে। এখন কে সন্তানদের কথা ভাববে, আমাদের আর কেউ নাই।’
সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন নিখোঁজ জেলে সালাউদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারা বেগমও। তিনি বলেন, ‘ধার-দেনা করে নতুন ঘর তুলেছি, এখন কে দেখবে আমাদের। পরিবারে সালাউদ্দিন ছিলেন উপার্জনের ব্যক্তি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, নিখোঁজ জেলেদের দ্রুত উদ্ধার করে যেন পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।’
চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, ‘ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ জেলেদেন তথ্য পেয়ে আমরা তাদের সন্ধানে কাজ করছি। মৎস্য বিভাগসহ বিভিন্ন স্পটে যোগাযোগ রাখছি। জেলেদের উদ্ধারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের সন্ধান পাওয়া গেলে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।’
মাসুদ