ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা

শামীম কাদির, জয়পুরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ১৮ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:০৮, ১৮ নভেম্বর ২০২২
নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা

মাছ বেচা-কেনায় ব্যস্ত মেলায় আগতরা।

অগ্রহায়ণের ভোরে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক আর বেচাবিক্রিতে জমে উঠেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলা। নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই মেলায় পুকুর, খাল-বিল ও নদ নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল মূল আকর্ষণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার দোকানগুলোয় থরে থরে সাজানো আছে রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বোয়ালসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ প্রজাতির মাছ। এক কেজি থেকে ২০ কেজি ওজনের মাছ বিক্রির জন্য হাঁকডাকে ব্যস্ত বিক্রেতারা। দরদাম করে অনেককেই কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায় পছন্দের মাছটি। আবার অনেকেই এসেছেন উৎসাহ নিয়ে মাছ দেখতে।

প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসী। পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা অগ্রহায়ণে বসে এই মাছের মেলা। তবে অগ্রহায়ণ মাসে কিছুটা ঠান্ডা হলেও মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। মেলায় নদী, দিঘি ও পুকুরে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশিয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতারা ও পাইকাররা ভিড় জমান।

মূলত, অগ্রহায়ণ মাসে মাঠ থেকে নতুন ফসল ঘরে উঠলেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন কৃষকরা। নবান্ন উৎসবে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। মেলায় অংশ নেয় উপজেলার মাত্রাই, হাতিয়র, মাদারপুর, হাটশর, হারুঞ্জ, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষ। এই উৎসবে প্রতি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ মেলায় আসে।

মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথার ওপর তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাই পৌর সভার আকন্দ পাড়া মহল্লার মাছ বিক্রেতা সাইফুল  ইসলাম। তিনি ১৫ কেজি ওজনের সিলভার মাছটির দাম হাঁকেন ১২ হাজার টাকা। ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিগ্রেড ও সিলভার কার্প মাছ বেশি বিক্রি হয়েছে এই মেলায়। এছাড়া রুই ও কাতলা বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে।

কথা হয় ক্রেতা সাবরিনা ইয়াসমিন এশা, আনিছুর রহমান, মুনিষ চৌধুরি, মোস্তাক রহমানসহ কয়েক জনের সঙ্গে। প্রত্যেকে জানান, এবারের মেলায় প্রচুর মাছ উঠেছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। 

মাছ ব্যবসায়ী লেবু সরদার, আব্দুল কুদ্দুস  মহন্ত মালী জানান, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচাকেনা সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু বেচাকেনা হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে কিছুটা হলেও লাভ থাকবে।

মাছ চাষি নাহিদ চৌধুরি। মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন তিনি।

মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা জানান, আমাদের জীবন থেকে অধিকাংশ বাঙালি উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নবান্নর মতো উৎসবে অংশ নিতে পারলে ব্যস্ততম জীবনে কিছুটা হলেও প্রশান্তি আসে।

কালাই পৌর সভার মেয়র রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মেলা উপলক্ষে দেশি প্রজাতির মাছ চাষ হওয়ায় জাতগুলো আবার ফিরে এসেছে। আমরা অতিথি পরায়ণ জাতি। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক মিলনমেলার সুযোগ ঘটে, এটা ভালো দিক।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়