ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুমিল্লা থেকে নিরুদ্দেশ ৭ ছাত্রের একজন মারা গেছে

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২১:১৩, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩
কুমিল্লা থেকে নিরুদ্দেশ ৭ ছাত্রের একজন মারা গেছে

কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত বছরের ২৩ আগস্ট নিখোঁজ হয় সাত তরুণ শিক্ষার্থী। তারা সবাই কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ছাত্রদের মধ্যে আল আমিন নামে এক ছাত্র গত ২৫ নভেম্বর মারা গেছে। 

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টায় রাইজিংবিডিকে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া আল আমিন কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দা। 

নিহত আল আমিনের বাবা সোমবার (১৬ জানুয়ারি) মামলা করার জন্য বান্দরবান অবস্থান করেছেন। নিরুদ্দেশ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে চার জন, এক জন মারা গেছে, আর অপর দুই জন এখনো নিরুদ্দেশ।

গত ১২ জানুয়ারি বান্দরবানের মেঘলা জেলা পরিষদের কনফারেন্স হলে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার’ সদস্য। 

ওই দিন গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জন হলেন, নোয়াখালীর আবদুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ (৩০), কুমিল্লার আবদুল রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), সিলেটের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০), কুমিল্লার শফিকুল ইসলামের ছেলে বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ ওরফে বাইরু (২১) এবং কুমিল্লার মজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান বিন রহমান শিথিল (১৭)। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন তখন বলেন, ‘সম্প্রতি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার শীর্ষ নেতাদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাআতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।’

তিনি আরও জানান, উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া বিভিন্ন জেলার ৫০ তরুণের তথ্য পায় র‌্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। বান্দরবানের সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে বাড়িছাড়া কিছু তরুণ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তিন মাস ধরে টানা অভিযান চালিয়ে বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ১২ এবং কেএনএফের ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

নিরুদ্দেশ হওয়া ছাত্র আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন কীভাবে মারা গেলেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বলেন, র‌্যাবের কঠোর অভিযানের মুখে জঙ্গিদের আস্তানায় নতুন করে তারা খাদ্য সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে খাদ্যের অভাবে আল আমিন মারা যেতে পারে। 

গত বছরের ২৫ নভেম্বর আল আমিন মারা গেলেও এতদিন পর কেন এই তথ্য প্রকাশ করা হলো না জানতে চাইলে র‌্যাব জানান, বর্তমানে গ্রেফতার ৫ তরুণকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা আল আমিনের মৃত্যুর খবর জানায়।

একটি সূত্র জানায়, আল আমিন মারা যাওয়ার পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে তার বাবাকে ফোন করে জানানো হয়, ‘আমরা আল আমিনকে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।’ সম্ভবত আল আমিনের পরিবার যাতে মৃত্যুর খবর শোনার পর ভেঙে না পাড়ে, সেই জন্যই ব্যার এই কৌশল করে থাকতে পারে।

আল আমিনের বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি সোমবার বান্দরবান থেকে মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখন বান্দরবান আছি। যারা আমার ছেলেকে জঙ্গি বানালো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। রোববার (১৫ জানুয়ারি) আমি কুমিল্লা থেকে বান্দরবান এসেছি।’ 

আরেকটি সূত্র জানায়, গ্রেফতার ছাত্ররা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, র‌্যাবের অভিযানের পর বাহির থেকে আর খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের মজুদকৃত খাবার শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে আল আমিন মারা যায়। আল আমিনকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে সেটিও গ্রেফতার র‌্যাবকে দেখিয়েছে। কিন্তু সোমবার (১৬ জানুয়ারি) র‌্যাব যখন আল আমিনকে শনাক্ত করার জন্য তার বাবাকে কবরের কাছে নিয়ে যায়, তখন কবর খুড়ে দেখা গেছে, সেখানে আল আমিনের মরদেহ নেই। তবে আল আমিনের পোষাক দেখে তার বাবা শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।

র‌্যাবের হেফাজতে থাকা শিথিলের বাবা অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান র‌্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স এখনো ১৮ হয়নি। সে এখনো শিশু। হয়তো না বুঝে বিপদগামীদের প্ররোচনায় ভুল পথে গিয়েছে। র‌্যাব আমার ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই সদাশয় সরকার যেন আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়ে তাকে ভালো হওয়ার সুযোগ করে দেয়।’ 
 

রুবেল/বকুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়