ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হাত ঘুরলেই বাড়ে দাম

সুদীপ্ত শামীম, গাইবান্ধা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৩:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
হাত ঘুরলেই বাড়ে দাম

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ হাটে চড়া দামে সবজি বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা

নানা ধরনের শীতকালীন শাক সবজি উঠেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এই উপজেলার বাজারে সরবরাহও বেশ ভালো রয়েছে সবজির। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম কম থাকলেও কৃষকের হাত ঘুরে খোলা বাজারে সেই সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোক্তাদের কাছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো।

আরো পড়ুন:

সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মীরগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে উঠেছে আলু, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, সিম, টমেটো, মিষ্টিকুমড়ো, শসা, করলা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ধনেপাতাসহ নানা রকমের মৌসুমি শাকসবজি। 

পাইকারি বাজারে কৃষকদের প্রতি কেজি আলু জাত ভেদে বিক্রি করছেন ১৭-২২ টাকা, অথচ মাত্র ৫ মিটার দূরেই কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা তা ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুনের মান অনুযায়ী কৃষকেরা বিক্রি করছেন ১৫-১৭ টাকা, ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকা। প্রতি কেজি সিম কৃষকদের বিক্রি করতে দেখা গেছে ২৫-৩০ টাকা, আর ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করছেন ৩৫-৫০ টাকা দরে। কৃষকেরা প্রতি পিচ বাঁধাকপি বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকায়, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। প্রতি কেজি টমেটোর দাম কৃষক পাচ্ছেন ৮-১০ টাকা, ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি করা হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। কৃষক প্রতি কেজি গাজরের দাম পাচ্ছেন ১২-১৫ টাকা, ভোক্তারা তা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনছেন ২৫-৩০ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন ৭০ টাকা, ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তা কিনছেন ৮০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে আদা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হলেও ভোক্তাদের নিকট বিক্রি হচ্ছে তা ১২০ টাকায়। পাইকারি বাজারে ধনেপাতা প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা আর ভোক্তারা কিনছেন তা ৬০-৭০ টাকা। 

এছাড়াও এই বাজারে কৃষকরা করলা প্রতিকেজি পাইকারদের কাছে ৯০-১০০ টাকা বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে ১৬০ টাকায় এই খাদ্য পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি কেজি মুলা কৃষকদের কাছ থেকে ৭-৮ টাকা কেজি কিনে খুচরা বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

কৃষক এবং ভোক্তাদের চোখ কপালে উঠছে মিষ্টিকুমড়ো ও ফুলকপিতে। দুটো সবজিই পিস হিসেবে কিনলেও ভোক্তাদের নিকট তা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। পাইকারি বাজারে কৃষক বড় আকারের (৫ কেজি) প্রতিটি মিষ্টিকুমড়ো বিক্রি করছেন ৬০-৭০ টাকা, আর ভোক্তারা তা কিনছেন ৩০ টাকা কেজি হিসেবে। অন্যদিকে প্রতিটি দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ফুলকপি কৃষকেরা ১০-১৪ টাকায় বিক্রি করলেও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি করছেন ২০ টাকা কেজি হিসেবে। তবে রসুন ও পেঁয়াজের দাম রয়েছে কাছাকাছি। প্রতি কেজি রসুন ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৫-৭০ এবং ২৫-৩০ টাকায়। 

কৃষকরা বলছেন, সবজির উৎপাদন বাড়লেও খরচ পড়ছে বেশি। বাজারেও মিলছে কম দাম। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। লাভ তো দূরের কথা আসল ওঠানোই এখন মুশকিল হয়ে যায়।

মীরগঞ্জ হাটে কথা হয় উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের জিগাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনি দুই মণ গাজর নিয়ে এসেছিলেন। পাইকারের কাছে ১২ টাকা কেজি দরে প্রতি মণ ৪৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। আক্ষেপ করে এই কৃষক বলেন, ‘পাইকার আর দোকানি সউগ সময় ধান্দা করে কেমন করি কৃষকোক ঠকা যায়, দুইটা টাকা কম দেওয়া যায়। ওমরা বোঝে না যে হামরা মাথার ঘাম পায়োত ফেলে রোইদোত পুড়ি পানিত ভিজি ফসল ফলাই।’

শুধু আব্দুস সাত্তারই নন একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারাপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হামার খালি খাটাখাটিই সার। যা লাভ পাইকারের আর দোকানির। হামার কাছ থাকি কম দামে কিনে আর ওমরা হামার মতোন মানুষের কাছে বেশি দামে বেচে। চোখের সামনোত এমন করি ঠকছি। তা-ও কিছু কবার পাই না।’

প্রভাষক ও কলামিস্ট এম এ মাসুদ কয়েকদিন আগে মীরগঞ্জ বাজারে মিষ্টিকুমড়ো কিনেছিলেন। কেজি হিসেবে মিষ্টিকুমড়ো কখনো কিনেননি তিনি। কেজি হিসেবে কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে গত বুধবার সকাল সকাল হাটে এসেছিলেন মিষ্টিকুমড়ো কীভাবে বিক্রি হয় তা দেখতে। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিষ্টিকুমড়ো কখনো কেজি হিসেবে কিনিনি। হাটে কৃষকরা বিক্রি করছেন পিস হিসেবে আর বাজারে দোকানদারেরা বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে, দামও দ্বিগুণ।’ বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের নজরদারি জোরদার করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুস ছালামের সঙ্গে মিষ্টিকুমড়ো ও ফুলকপি পিস হিসেবে কিনে কেজি হিসেবে ভোক্তাদের নিকট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়