ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুমিল্লায় বাড়ছে ক্লিনিক-হাসপাতাল, কমছে সেবার মান

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১১:৩৩, ১ এপ্রিল ২০২৩
কুমিল্লায় বাড়ছে ক্লিনিক-হাসপাতাল, কমছে সেবার মান

কুমিল্লা নগরীসহ জেলার ১৭টি উপজেলায় বৈধ-অবৈধ ক্লিনিক আর হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে কমেছে সেবার মান। মানহীন চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোতে নামী চিকিৎসকদের নামফলক টাঙানো থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে না আছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, না আছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউ কক্ষে পড়ে রয়েছে ময়লা ফেলার ঝুড়ি, ঝাড়ু ও দরজার পাশেই স্যু-সেলফ। কোথাও নামসর্বস্ব অপারেশন থিয়েটার থাকলেও সেখানে নেই অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি। উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি করাচ্ছেন এক শ্রেণির দালাল বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন:

সাম্প্রতি কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অভিযানে কুমিল্লা নগরীরসহ বেশ কিছু এলাকার হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন না যেতে সেগুলো আবারো চালু হচ্ছে অদৃশ্য কোনো ইশারায়। 

কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবসময় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো চিহ্নিত করে অভিযান চালাচ্ছি। নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বুধবারও আমরা দুটি ক্লিনিক বন্ধ করেছি নানা অনিয়মের অভিযোগে।’

কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বৈধ অনুমোদন রয়েছে এমন হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা ১৯০টি, ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে ১২টি, অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ২০৯টি। আর ব্লাড ব্যাংক রয়েছে দুটি। সবমিলিয়ে জেলায় অনুমোদিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪১৩টি। কিন্তু পুরো জেলায় হাজার খানেক বেসরকারি মালিকানাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জেলায় হাসপাতাল ও ক্লিনিক বাড়লেও, বাড়েনি সেবার মান। নগরীর বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটবাড়ি ভাড়া করে তৈরি করা হচ্ছে ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতাল। দালাল নির্ভর বেশির ভাগ ক্লিনিকে নেই মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগী এবং তাদের স্বজনরা হয়রানির পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

নুরজাহান বেগম গত ১৭ মার্চ কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলা থেকে শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করাতে আসেন ঝাউতলা একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ৫৫ বছর বয়সী এ নারীর ফুসফুসে পানি জমাসহ কিছু জটিল সমস্যায় ভুগছেন। স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। দরিদ্র পরিবারের নূরজাহান বেগম সুস্থতার আশায় দীর্ঘ ৭ দিন চিকিৎসা নেন সেখানে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসা বাবদ তার কাছ থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে হাসপাতালটি। সুস্থ না হওয়ায় পরে বাধ্য হয়ে নূরজাহান বেগম ফিরে যান বাড়িতে।

নূরজাহান বেগম বলেন, ‘বাবারে  অনেকদিন ধরে শ্বাসকষ্ট ভুগছি। এসব হাসপাতাল চিকিৎসার নামে মানুষকে জবাই করে টাকা নেয়। টাকা ছাড়া তারা কথা বলে না। কিছু টাকা দিসি সাতদিন ছিলাম। এখন ডাক্তার বলে আপনি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। আমার তো এখনো শ্বাসকষ্ট কমেনি।’

কুমিল্লার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুল রহমান বলেন, যে হারে কুমিল্লায় বেসরকারি হাসপাতাল হচ্ছে,সেভাবে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো সেবার মান বাড়াতে পারছেন না। আমি মনে করি বর্তমান জেলা সিভিল সার্জন হাসপাতালগুলো মনিটর করতে পারেন। সঠিক পরিদর্শন বা নজরদারিতে রাখলে আশা করি কুমিল্লা চিকিৎসা ক্ষেত্রে  বিপ্লব ঘটাবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লার সির্ভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়