ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে দেদারছে গাছ কর্তন, রোপণ কম

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১০, ৮ জুন ২০২৩   আপডেট: ২১:১৪, ৮ জুন ২০২৩
পঞ্চগড়ে দেদারছে গাছ কর্তন, রোপণ কম

সড়কের পাশে এখন আর বৃক্ষ দেখা যায় না

তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন গাছতলাই যেন সাধারণ মানুষের প্রিয় জায়গা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচতেও মুখ্য গুরুত্ব এই গাছের। তবে পরিবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। গত দুই বছরে এ জেলায় যে পরিমাণ গাছ কর্তন হয়েছে, সেই তুলনায় রোপণের পরিমাণ কমেছে অনেক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই পরিবেশের ওপর এমন বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দ্রুতই এই সঙ্কটের উত্তোরণ না হলে এ অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকিতে পড়বে।

বন বিভাগের তথ্য মতে, গত দুই বছরে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী- এই তিন উপজেলায় ৭১ হাজার ৬০০টি গাছ কর্তন করা হয়। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কর্তন করা হয় ২৫ হাজার গাছ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্তন করা হয় ৪৬ হাজার ৬০০ গাছ। এসবের বিপরীতে গাছ রোপন করা হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ হাজার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০ হাজার। 

সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের বোয়ালমারী-ঘটবর সড়কটি এখনো পাকা হয়নি। সড়কের দুইপাশে ছিলো বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ। তপ্ত রোদে ফসলি মাঠে কাজ করা শ্রমিকরা বিশ্রামের জন্য আশ্রয় নিতো সেখানে। কিন্তু এসব গাছ কর্তনের কয়েকমাস পার হলেও এখনো নতুন করে কোন গাছ রোপন করা হয়নি।

উপজেলার তালমা-মডেলহাট সড়কের দুই ধারে ২০-৩০ বছরের পুরনো বড় বড় গাছগুলো কর্তন করা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। তবে এখনো সেসবের স্থলে রোপন হয়নি কোন গাছ। একই অবস্থা সদর উপজেলার হ্যালিপ্যাড-আমকাঠাল সড়কের। বড় গাছ কর্তনের দীর্ঘদিনেও গাছ রোপন হয়নি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী-বোদা সড়কে, আটোয়ারী উপজেলার গোয়ালপাড়া-বন্দরপাড়া সড়কে, সদরের তিনমাইল-কেচেরাপাড়া সড়কে। 

এসবের বাইরেও এমন দৃশ্য জেলার বিভিন্ন সড়কেই চোখে পড়ে। ফলে গ্রীষ্মের খরতাপে পথচারিদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি হুমকিতে পড়েছে প্রকৃতি-পরিবেশ।

বন বিভাগের দাবি, কর্তন হওয়া গাছগুলোর অধিকাংশই সামাজিক বনায়নের আওতাভুক্ত ছিলো। এসব গাছ বিভিন্ন সড়কের দুই ধারে বেড়ে ওঠে। তবে কর্তন হওয়া এসব গাছের স্থলে নতুন বৃক্ষ রোপনে রয়েছে নানা জটিলতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কের পাশের জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা গাছ রোপনে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এছাড়া বন বিভাগের নিজস্ব জমিগুলোও বেদখল হওয়ায় গাছ রোপন কমেছে।

তিনি বলেন, বন বিভাগের প্রতি ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। গাছ রোপনের ক্ষেত্রে যথাযথ বরাদ্দ মেলেনা, চারা গাছ রোপনের পর পাহাড়াদার পাওয়া যায়না। দুই/আড়াই হাজার টাকা বেতনে বর্তমান সময়ে কে কাজ করবে? ফলে পাহাড়াদার সঙ্কটে বাগান রক্ষা করা যায়না। এছাড়া জেলার বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত বেশিরভাগ জমিই এখন বেদখল। এসব জমিতে আমরা ঢুকতে পারিনা। এসব দখলমুক্ত থাকলে বৃক্ষরোপনের পরিমান বাড়তো। 

পরিবেশ কর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন বলেন, বর্তমান উত্তরাঞ্চলে উষ্ণায়ন দুর্যোগ চলছে। এটা মানুষ কর্তৃক বৃক্ষ নিধণ ও দূষণ থেকে এসেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলো মানুষকেই বৃক্ষ রোপন ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। 

পরিবেশ কর্মী নয়ন তানবীরুল বারী বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে শহরের বাসাবাড়িতে ফলদ বৃক্ষের চারা রোপন করে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সহনীয় অনুকূল তাপমাত্রার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সড়কগুলোর দুপাশে ভেষজ গুণ সম্পন্ন বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। এছাড়া সৌন্দর্য বর্ধনশীল জারুল, সোনালু, কৃঞ্চচূড়া ইত্যাদি বৃক্ষ রোপণ করে প্রকৃতিকে দৃষ্টিনন্দন করতে হবে। ছাদবাগান করতে গৃহিণীদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। জায়গা ও এলাকা বুঝে তাল গাছ, বটবৃক্ষের জন্যও খাস জমিগুলো নির্বাচন করা প্রয়োজন। 

পঞ্চগড় বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া) মধু সুধন বর্মন বলেন, বৃক্ষরোপন বাড়াতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরেও তিন উপজেলায় ২২ হাজার ৫০০ চারা গাছ রোপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

পঞ্চগড় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আমরা বিভিন্ন গাছ রোপনের বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি, প্রচারণা চালাচ্ছি। বৃক্ষরোপনে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিও রয়েছে।’

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়