ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভারী বৃষ্টিতে শ্রীপুরে তলিয়েছে খেত-খামার, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট

রফিক সরকার, (কালীগঞ্জ) গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৬ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৭:৩২, ৬ অক্টোবর ২০২৩
ভারী বৃষ্টিতে শ্রীপুরে তলিয়েছে খেত-খামার, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট

জমে থাকা পানিতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক রাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার কয়েক হাজার একর আমন ধানের খেত ও শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজির মাঠ। ভেসে গেছে শতাধিক মাছের খামার। এমনকি, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং মাটি সরে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়, ধামলই, গলদাপাড়া, নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের শত শত একর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানক্ষেতে থৈথৈ করছে পানি। মাছ শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন।

এদিকে, উপজেলার ধামলই গ্রামের বেশ কয়েকটি মাছের খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের নদীঘেঁষা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার কাওরাইদ-বরমী সড়কের কালীনারায়ণ উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজি স্টেশনে পানি জমে থাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার গাজীপুর নগরহাওলা গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে নানি-নাতি গুরুতর আহত হয়েছেন।

উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, আমার তিন বিঘা আমনখেতে গলা সমান পানি। মানুষ মাছ শিকার করছে আনন্দে। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। যে পরিমাণ পানি, তা ১৫ দিনেও যেতে পারবে না। ধান পানির নিচেই পচে নষ্ট হবে বলেও জানান তিনি। 

কাওরাইদ-বরমী সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল

একই উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক রাশেদ মিয়া বলেন, আমাদের পরিবারের অন্তত ২০ বিঘা জমিতে প্রচুর পানি জমে রয়েছে। ঢলের পানি গিয়ে ধানের চারা উঠে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পানির নিচে থাকলে সম্পূর্ণ ধান পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

একই ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের মাছচাষি আরিফ মিয়া বলেন, আমার মাছের খামার তলিয়ে গেছে। অন্তত ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। 

কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরছিট গ্রামের মাছচাষি লিটন মিয়া বলেন, আমার পুকুরের পাড় ভেঙ্গে ৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। 

বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মাছচাষি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাছের খামারের বাঁধ ভেঙ্গে সব মাছ নদীতে চলে গেছে।

উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, শাকসবজির খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।

জলাবদ্ধ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলচল করছেন পথচারীরা

শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, আমি সকাল থেকে বিভিন্ন রাস্তায় খোঁজখবর নিচ্ছি। কয়েকটি সড়ক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়া এবং সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বর্না বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার অনেক জমির ফসল এখন পানির নিচে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। দীর্ঘদিন ফসলি জমি পানির নিচে থাকলে ফসল পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরফলে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।
 
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ওহিদুল আবরার বলেন, অনেক মাছের খামার তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। এই মুহূর্তে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহীতুল ইসলাম বলেন, মাটির ঘরবাড়ি ভেঙে যারা আহত হয়েছেন তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের প্রধানদের সার্বিক খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়